পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করলে বেতনের শতভাগ পেনশন
নির্বাচন প্রতিবেদকঃ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করলে সর্বশেষ উত্তোলিত বেতনের শতভাগ পেনশন সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে আবার ন্যূনতম ছয় মাস দায়িত্ব পালন করলেই আজীবন পেনশন সুবিধাও মিলবে।
এভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর সিইসি ও কমিশনাররা অবসরে পেনশনের পাশাপাশি অ্যাপায়ন ও চিকিৎসা সুবিধাও পাবেন।
বিদ্যমান অধ্যাদেশটি রহিত করার প্রস্তাব দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের (সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধাদি) আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও এর আগে বিগত এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
ইসির আইন সংস্কার কমিটির এক জন সদস্য ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, খসড়া আইন প্রস্তুত করা হয়েছে। সংযোজন-বিয়োজন শেষে এটি কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। কমিশন অনুমোদন দিলে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর অধীন নেওয়া বিগত দিনের কার্যক্রম নতুন আইনের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে সুযোগ-সুবিধাদি টাকার অঙ্কে বলা নেই। শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আপিল বিভাগের বিচারপতি ও নির্বাচন কমিশনারদের হাইকোর্টের বিচারপতির সমান সুযোগ পাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে আইনে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ না থাকায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকা দিতে জটিলতা তৈরি হয়। এজন্য সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন সংস্কার সংক্রান্ত ইসির উপ-কমিটি। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বাধীন আইন সংস্কার কমিটিতেও এটি উপস্থাপন করা হয়। এই খসড়া আইনে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন কমিশনারদের বেতন ধরা হয়েছে।
খসড়া আইনে বেতনের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বেতন মাসে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা ও নির্বাচন কমিশনারদের বেতন ৯৫ হাজার টাকা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনাররা প্রদেয় বেতন থেকে কোনো আয়কর প্রদান করবেন না।
খসড়ায় নির্বাচন কমিশনারদের আজীবন পেনশন সুবিধা রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার অন্তত ৬ মাস দায়িত্ব পালন করার পর পদত্যাগ, মেয়াদ না থাকার কারণে অধিষ্ঠিত না হলে বা মারা গেলে তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এক্ষেত্রে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করলে ৫/৫ হারে সর্বশেষ উত্তেলিত বেতনের শতভাগ, চার বছর দায়িত্ব পালন করলে ৪/৫ হারে ৮০ ভাগ এবং তিন বছর পূর্তিতে ৩/৫ হারে ৬০ ভাগ মাসিক পেনশন পাবেন।
অর্থাত্ প্রধান নির্বাচন কমিশনার পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর বেতনের সমান অর্থাত্ মাসে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা হারে পেনশন পাবেন। এর কম দায়িত্ব পালন করলে হার অনুযায়ী পেনশন পাবেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার কেউ মারা গেলে পেনশন ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরাধিকারদের মধ্যে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাধারণত নির্বাচন কমিশনার পদে বিভিন্ন পেশা থেকে অবসরপ্রাপ্তরা নিয়োগ পেয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে চাকরি অথবা কমিশনার পদের যে কোনো একটি খাত থেকে পেনশন নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া আইনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারের ইচ্ছা অনুযায়ী পেনশনের খাত নির্ধারণ করা হবে। কমিশনার হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদে থাকার কারণে নেওয়া পেনশনের টাকা ফেরত বা সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে না। পেনশনের বাইরে অবসরের পর সিইসি প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা এবং নির্বাচন কমিশনাররা প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা আপ্যায়ন ভাতা পাবেন। এ ছাড়া যানবাহন, চিকিত্সা ও আবাসনের সুর্নিদিষ্ট সুবিধার কথা থাকছে আইনে।
ইসির এক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদ (কার্যকাল ২০০০-২০০৫ সাল) নেতৃত্বাধীন কমিশনের এক জন নির্বাচন কমিশনার পেনশন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। ঐ রিটের রায়ে নির্বাচন কমিশন হেরে যায়। এতে ঐ কমিশনারের পেনশন পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়। পরে আবারও পেনশনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিগত ইসির সেই উদ্যোগও আটকে যায়।