ইতিহাসে এই প্রথম মধ্যরাতে বসলো হাইকোর্ট। দুই শিশুকে পৈত্রিক বাড়িতে ফেরাতে নির্দেশ

PicsArt_08-12-11.07.42.jpg

ইতিহাসে এই প্রথম মধ্যরাতে বসলো হাইকোর্ট।
দুই শিশুকে পৈত্রিক বাড়িতে ফেরাতে নির্দেশ

বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাপ ও চাচার দন্দ্বের কারণে বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের পৈত্রিক বাড়িতে তার দুই সন্তানকে ফিরিয়ে নিতে এবং তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও পৈত্রিক নিবাসে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনায় আদালত এমন আদেশ দেন।

আদেশে ওই দুই শিশুকে তাদের বাসায় নিরাপদে রেখে আসতে ধানমন্ডি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন হােইকোর্ট। এছাড়া আজ রোববার (৪ অক্টোবর) সকালে আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও দাখিল করতে বলা হয়েছে ধানমন্ডি থানার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ওসিকে।

শনিবার দিবাগত রাত ১১টা ২০ মিনিটে একটি বেসরকারি টিলিভিশনে এ সংক্রান্ত টকশো শুরু হয়। যা রাত ১২টা ৩০ মিনিটে শেষ হয়। টকশোটি নজরে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।

এর আগে রাতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত বসে কয়েকটি আদেশ দেওয়ার ঘটনা আছে। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ স্থগিত হওয়ার নজিরও আছে। যদিও পরে তা কার্যকর হয়। কিন্তু মধ্যরাতে হাইকোর্ট বসিয়ে আদেশ দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে বিরল।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনা হচ্ছিল দুই শিশু নিয়ে। ওই দু’টি বাচ্চা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত ব্যারিস্টার কে এস নবীর নাতি। যাদেরকে তাদের চাচা বাসায় ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। কিছুদিন আগে এই দুই শিশু বাবাকে হারিয়েছেন। এই টশোতে আমি যুক্ত ছিলাম। টকশোটি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আবু তাহের মোহম্মদ সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের নজরে আসায় হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিক আদেশ দেন।

মনজিল মোরসেদ আরও জানান, আদালতের নির্দেশে ধানমন্ডি থানার ওসি রাতেই ওই দুই শিশুকে তাদের পৈত্রিক বাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে।

রাজধানী ধানমন্ডির একটি চারতলা বাড়ির মালিক সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবী। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও গত কয়েকদিন ধরে ঢুকতে পারছে না কেএস নবীর ছোট ছেলে সিরাতুন নবীর দুই ছেলে।

গত ১০ আগস্ট সিরাতুন নবীর মৃত্যুর পর তার দুই ছেলেকে গত কয়েকদিন আগে বাসা থেকে বের করে দেন ওই শিশুদের আপন চাচা কাজী রেহান নবী। আগেই শিশু দু’টির বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বাবার মৃত্যুর পর শিশু দু’টি কিছুদিনের জন্য তার মায়ের আশ্রয়ে থেকে যায়। এরপর মায়ের কাছ থেকে নিজের বাবার বাসায় ফেরার চেষ্টা করে ওই দুই শিশু। কিন্তু তাদেরকে আর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কয়েকবারের চেষ্টা করেও শিশু দু’টি ওই বাসায় প্রবেশ করতে পারেনি। বিষয়টি ধানমন্ডি থানাকে জানানো হলে পুলিশের কথাও আমলে নেননি শিশুদের চাচা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেহান নবী।

দুই শিশুর ফুফু (কেএস নবীর বোনের মেয়ে) মেহরীন আহমেদ জানিয়েছেন, বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ওদের বাবা-মা আলাদা থাকতেন। ওরা ওদের বাবার সঙ্গেই দাদার বাড়িতে থাকতো। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর শিশু দু’টি খুব বেশি বিষণ্ন হয়ে পড়ে এবং ওদের মায়ের কাছে কিছুদিন থেকে আবার গতকাল বাড়িতে ফেরে। কিন্তু তারা বাসার গেট খোলেনি। আমরা পরিবার থেকে যোগাযোগ করি। শিশুদের বড় চাচা কাজী রেহান নবীকে ফোন করি। কিন্তু তিনি শরীর অসুস্থতার অযুহাতে পরে বাড়িতে আসতে বলেন। এরপর আমরা ধানমন্ডি থানায় বিষয়টি অবহিত করি।

তিনি আরও জানান, বাড়িটি এখনো কেএস নবীর নামে। সেদিক থেকে দেখলে এই শিশু দুটিও ওই বাড়ির উত্তরাধিকারী। আর শিশুদের বাবার মৃত্যুর পর তার ব্যাংক-ব্যালেন্স দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারই বড় ভাই রেহান নবী।

ঘটনাটি নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে একাত্তর টিভির একাত্তর জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এসময় একাত্তর জার্নালে শিশু দু’টির সঙ্গে তাদের ফুফু, সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি প্রচার চলাকালীন বিষয়টি নজরে আসে বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের। এরপর স্বপ্রণোদিত হয়ে মাঝরাতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের বেঞ্চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top