সরকারি প্রকল্পে দেশীয় ভালো আবাসন ব্যবসায়ীদের কাজ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে -গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম
স্টাফ রিপোর্টঃ আজ মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি বলেছেন, “সরকার সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে চায়। সরকারি প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশীয় ভালো আবাসন ব্যবসায়ীদের ইমারত নির্মাণের কাজ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিলে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি থাকবে। ঢাকার তুরাগ নদীর পাড় ও কেরানীগঞ্জে স্যাটেলাইট সিটি, ঝিলমিল সম্প্রসারণ, পূর্বাচল এবং উত্তরা ৩য় পর্ব প্রকল্পে ফ্ল্যাট নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যাতে বিনিয়োগ করতে পারেন, সেটা আমরা ব্যবস্থা করবো। সকলে মিলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব আয়োজিত শীতকালীন আবাসন মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রিহ্যাবের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ সোহেল রানা। আরো বক্তব্য প্রদান করেন রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া।
গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, “ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে, জাতির পিতার নের্তৃত্বের বাংলাদেশে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হবেন, আর ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা লুটে-পুটে খাবে, এটা শেখ হাসিনা সরকার হতে দেবে না। যিনি সততার সাথে ভালো কাজ করবেন, তার জন্য আমরা সবকিছু করবো। দুর্নীতি ও অনিয়মের ন্যুনতম স্পর্শ যার সাথে থাকবে তার প্রতি কোন সহানুভূতি দেখানো হবেনা।
মন্ত্রী আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশনা সেবাকে সহজীকরণ করতে হবে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় টেবিলে টেবিলে অনাকাঙ্ক্ষিত চাহিদা মেটাবার প্রবণতা দূর করার জন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নকশা অনুমোদনে ১৬টি স্তরে যেতো হতো। সেবা সহজীকরণের জন্য, রিহ্যাব, স্থাপত্য বিভাগ, নগর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সভা করে ১২টি স্তর বাদ দিয়ে মাত্র ৪টি স্তর রেখেছি। এই চার স্তরেও হয়রানির অভিযোগ দূর করার জন্য অটোমেশন চালু করেছি। ভূমির ছাড়পত্রের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো, ভোগান্তির শিকার হতে হতো, উৎকোচ দিতে হতো। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমির ছাড়পত্র, আমমোক্তার নামা ও নামজারীর দেয়ার বিধান করে দিয়েছি। বলে দিয়েছি যার টেবিলে কাজ আটকে থাকবে তাকে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হবে।”
রিহ্যাবের সদস্যদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, “অবকাঠামো উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রিহ্যাবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের রেজিস্ট্রেশন সমস্যা থাকবে না। টেন্ডারে অংশগ্রহণের জটিলতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে এনেছি। পিপিআর সংশোধন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন কাজ করছে। এ সমস্যাগুলো দূর হলে নতুন ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যারা সততার সাথে আইন মেনে ব্যবসা করেন, অসাধু আবাসন ব্যবসায়ীরা তাদের সুনাম নষ্ট করছে। সাইবোর্ড ও বিজ্ঞাপনসর্বস্ব ব্যবসায়ীরা স্বল্প আয়ের মানুষ বা প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয়ের টাকা নিয়ে তাদের সাথে প্রতারণা করছে। এরা রিহ্যাবের সৎ ব্যবসায়ীদের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের ব্যাপারে বিজ্ঞাপন দিয়ে রিহ্যাব সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে পারে। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু দেখভাল করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।”
প্রধান অতিথি আরো যোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রীর ঈপ্সিত লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, মাদক থেকে জাতিকে বের করে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে এখনো যদি আমরা অনিয়ম, দুর্নীতি দূর করতে না পারি, তাহলে আমরা কবে এগিয়ে যাবো। যদিও মাথাপিছু গড় আয়, গড় আয়ু, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সামাজিক সূচক, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সারা পৃথিবী এখন বাংলাদেশকে বলছে উন্নয়নের রোল মডেল।”
তিনি আরো বলেন, অন্যায়ভাবে অপরের জায়গা দখল করার প্রবণতা ভুলে যেতে হবে। জালিয়াতি করে টাকা নেয়ার প্রবণতা ভুলতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি ও কাজে ফাঁকি দেবার প্রবণতা ভুলতে হবে। আসুন সবাই মিলে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় শামিল হই।
অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজিত শীতকালীন আবাসন মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।