ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুর গ্রামের খাঁ পরিবারের সন্তান। গানের মধ্য দিয়ে এই সংগীত পরিচালক নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। কালজয়ী গান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজেকে করেছেন কালোত্তীর্ণ, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানকে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের ভাতিজা, ওস্তাদ আয়েত আলী খানের সন্তান; ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান, বাহাদুর হোসেন খান ও সংগীতজ্ঞ মোবারক হোসেন খানের ছোট ভাই সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান। শুরুতে তবলা বাজানোর তালিম নেন, পরে মেজ ভাই ওস্তাদ বাহাদুর খান তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যান। শেখ সাদী খান তাঁর কাছে তালিম নেন উচ্চাঙ্গসংগীতে। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশনে চাকরি নেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজের পাশাপাশি ঢাকা মিউজিক কলেজে পড়াশোনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ বেতারে কাজ শুরু করেন গুণী এই পরিচালক। সংগীতে অবদানের জন্য এবার তিনি একুশে পদক পাচ্ছেন।
কিছু পাওয়ার জন্য কাজ করিনি। কাজ করছি নিজে বাঁচার জন্য, নিজের জীবনের জন্য, চাওয়া-সাধনা যেটাই বলি না কেন—একটা সময় পেশা হিসেবে বেছে নিই। গান আমার রক্তে মিশে আছে। গানটা নিজের ভালো লাগে, আর ভালো লাগার ব্যাপারটা মানুষের কাছেও পছন্দ হচ্ছে। তখন সিদ্ধান্ত নিই, মানুষের জন্য কিছু করা দরকার। সমাজে এমন কিছু দিতে চাই না, যা সংস্কৃতিকে নষ্ট করবে, ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। সেই আদর্শ নিয়ে এত বছর কাজ করেছি।
এই ভালোবাসার প্রতিদান কর্মের মাধ্যমে দিতে চাই। ঋণ শোধ করতে চাই। সমাজ, সংস্কৃতির জন্য কিছু ভাবনা আছে। তা প্রকাশের সুযোগ কেউ যদি দেয়, দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হোক আর সরকার হোক—তার মাধ্যমে এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে চাই। আমি তো শুধু গানের সুর করিনি, কম্পোজিশনও করেছি। ‘ষড়ঋতুর বাংলাদেশ’ নামে একটা ভাবনা নিয়ে বহুদিন ধরে পরিকল্পনা করেছি। সম্প্রতি কম্পোজিশন শেষ করেছি। যখন কোরিওগ্রাফি হবে, তখন মনে হবে, আমি বাংলাদেশকে দেখছি। কাজটা শিগগিরই করতে চাই।
নতুনদের নিয়ে কাজ করছি। ছবির কাজ এখন কম করছি। কিছুদিন আগে ‘যুদ্ধশিশু’ নামে একটি ছবিতে এ প্রজন্মের ইউসুফকে দিয়ে গান করিয়েছি। শিগগিরই ‘বান্ধব’ ছবিতে কোনালকে দিয়ে গাওয়াব। নতুনদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। দীর্ঘ সংগীতজীবনে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নতুনদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। নতুনদের ভাবনার সঙ্গে তা মেলাতে চাই।
আমি কিন্তু অত্যন্ত আধুনিক মানুষ। আমার সাজপোশাক এবং চলন-বলনেও তা প্রকাশ পায়। আমি আমার বাবাকে বাবা বলতে চাই, ড্যাড না। আমার সংস্কৃতিকে যতটুকু পারি, ইম্প্রোভাইস করে এই সময় নিজের জায়গা করে নিতে চাই। সেভাবেই চলছি।