দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স বাস্তবায়ন করুন – ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ

Picsart_24-03-06_17-28-02-886.jpg

কোনো জমির একাধিক উত্তরাধিকারী বা অংশীদার থাকলে এবং তাদের মধ্যে কেউ আলাদাভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে চাইলে, তার নিজ অংশ ‘জমাভাগ’-এর মাধ্যমে নামজারি করতে হবে। অন্য অংশীদার এতে আপত্তি জানালে প্রয়োজনে দেওয়ানি আদালতের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

সাগর চৌধুরীঃ ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। সততা ও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি জেলা প্রশাসকদের অবহিত করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং এসব নির্দেশনা মেনে চলা গণকর্মচারীর দায়িত্ব। এসময় তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আজ বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪’-এ ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদানকালে ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এ কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আজকের কার্য অধিবেশনে ভূমি সচিব মোঃ খলিলুর রহমান, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ-সহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তরসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বিভাগীয় কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন।

ভূমিমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের অবহিত করেন যে, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এক মাসের মধ্যে বিধিমালা জারি হবে বলে আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে বিধিমালা ছাড়াই বিচারিক আদালতের এখতিয়ার অনুযায়ী ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে মামলা গৃহীত হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী বিধিমালা জারির সাথে সাথে এই আইনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার প্রদানের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন।

ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিকল্পনায় খাদ্য নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিজমি সুরক্ষা অপরিহার্য। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ৩ ফসলি জমি ফসলাদি উৎপাদন ব্যতীত কোন কাজেই ব্যবহার করা না হয়। ২ ফসলি জমিও রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এসময় তিনি জানান, ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি আইন অনুযায়ী সরকারীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

ভূমিমন্ত্রী জেলা প্রশাসককে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

ভূমি সচিব জেলা প্রশাসকদের জানান, নতুন তিনটি ভূমি সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিমালা তৈরির কাজ চলমান। সচিব জানান ভূমি মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে শূন্য পদে নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃজনে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার পদে নিয়োগ হয়েছে এবং অন্যান্য পদেও নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নৈশ প্রহরী নিয়োগের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এসময় তিনি জেলা প্রশাসকদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৮০ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেন।

জেলা প্রশাসকদের মতামত

এ অধিবেশনে জেলা প্রশাসকগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন ও প্রশ্ন করেন। নতুন আইনের বিধিমালা, খাসজমি, নামজারি, হাট ও বাজার, ভূমি অফিস নির্মাণ, জলমহাল, পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা, কোর্ট অফ ওয়ার্ডস, ভূমি সংশ্লিষ্ট জনবল ও প্রশিক্ষণ, ডিজিটালাইজেশন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন-সহ ভূমি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় উঠে আসে কার্য অধিবেশনের আলোচনায়।

উল্লেখ্য, ভূমি রেজিস্ট্রেশন ও ভূমি জরিপ ব্যতীত, ভূমি রাজস্ব ও ভূমি ব্যবস্থাপনা সহ ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সকল সেবা প্রদানে কালেক্টর হিসেবে জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক।

প্রেস ব্রিফিং

অধিবেশন শেষে ভূমিমন্ত্রী এক প্রেস ব্রিফিং-এ অংশ নেন এবং জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে তাঁর দেওয়া নির্দেশনাসহ ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনও জমির খতিয়ানে, দাগের আংশিক অর্পিত সম্পত্তির অংশ এবং আংশিক ব্যক্তিমালিকানাধীন হলে, অর্পিত সম্পদের অংশ বাদ দিয়ে বাকি অংশের যতটুকু ব্যক্তিমালিকানাধীন তা নামজারি করে দেওয়া হবে এবং নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করা হবে। এই ব্যাপারে এক পরিপত্র জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাতিলকৃত ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির মধ্যে যেসবের মালিকানা আবেদনকারীর পক্ষে আদালত কর্তৃক নিরঙ্কুশ-ভাবে প্রমাণিত হয়েছে কিংবা আবেদনকারীর বৈধ প্রমাণাদি ও দলিলাদি আছে, সেসব সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধন করে মালিকানা হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া, বাতিলকৃত ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির মধ্যে যেসবের মালিকানার কোন দাবীদার নেই সেসব সম্পদ খাসকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব বিষয়াদি সংশ্লিষ্ট আরেকটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, কোনো জমির একাধিক উত্তরাধিকারী বা অংশীদার থাকলে এবং তাদের মধ্যে কেউ আলাদাভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে চাইলে, তার নিজ অংশ ‘জমাভাগ’-এর মাধ্যমে নামজারি করতে হবে। অন্য অংশীদার এতে আপত্তি জানালে প্রয়োজনে দেওয়ানি আদালতের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। মন্ত্রী বলেন, নামজারি ছাড়া আংশিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ বাস্তবায়ন এবং দেশব্যাপী রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা সম্পন্ন হলে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা ও হয়রানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

আরও সংবাদ পড়ুন।

নববর্ষের প্রথম দিন থেকে শতভাগ ভূমি কর অনলাইনে দিতে হবে

আরও সংবাদ পড়ুন।

https://wnews360.com/archives/51985

আরও সংবাদ পড়ুন।

ডিসিআর ও জমির খতিয়ানে যুক্ত হল কিউআর কোড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top