এপেক্স ফুটওয়্যার প্রণোদনার ২২৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ

Picsart_23-07-22_18-10-44-326.jpg

এপেক্স ফুটওয়্যার প্রণোদনার ২২৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ

অপরাধ প্রতিবেদকঃ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়াজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি রপ্তানি প্রণোদনার ২২৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কোম্পানিটি নিজেদের শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রণোদনা নিলেও দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করেছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ২০২৩ সালে প্রকাশিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ উঠে এসেছে।
 

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি প্রণোদনার টাকা নেওয়ার সময় দাবি করেছে, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড ও ইউনিট-২ নামে দুটি জুতার কারখানা আছে। এই দুই কারখানার একটি থেকে দেশে এবং আরেকটি থেকে বিদেশে পণ্য বাজারজাত করে থাকে। তবে কারখানা দুটির জয়েন্ট স্টক রেজিস্ট্রেশন বুকস অব অ্যাকাউন্টিং এবং বার্ষিক প্রতিবেদন একই।

এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড দেশীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করে, তাই প্রতিষ্ঠানটিকে শতভাগ রপ্তানিকারক হিসেবে গণ্য করা যায় না। সে জন্য ২০১৬-১৭ থেকে পাঁচ অর্থবছরে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডকে দেওয়া প্রণোদনার টাকা ফেরত দিতে সুপারিশ করা হয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড রপ্তানি প্রণোদনার টাকা নিয়েছে ইস্টার্ণ ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক থেকে। রপ্তানির ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় থেকে ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮৯ টাকা উত্তোলন করা হয়। অন্যদিকে ২০১৬-২০ থেকে চার অর্থবছরে ১৮৬ কোটি ১৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪ টাকা নেওয়া হয় সিটি ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখা থেকে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চার অর্থবছরে তুলে নেওয়া টাকার মধ্যে ৪২ কোটি ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৪ টাকা উত্তোলন করা হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। পরের অর্থবছরে এপেক্স ফুটওয়্যার তুলে নেয় ৪৭ কোটি ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৯ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৬ কোটি ৭১ লাখ ৮১ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড যেসব প্রমাণ উল্লেখ করেছে, সেগুলোতে শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। তা ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন আউটলেটের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে। জয়েন্ট স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানির নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড তার কারখানায় প্রস্তুত চামড়াজাত দ্রব্য দেশে ও বিদেশে বিপণনের জন্য অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠান। এই বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হওয়ার অবকাশ নেই।

এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান না হওয়া সত্ত্বেও কেন প্রণোদনার টাকা ছাড় করা হলো, জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডকে প্রণোদনার টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের ব্যাংকের কোনো দোষ নেই। এপেক্স ফুটওয়্যার লি. নামে সমগ্র দেশে যেসব আউটলেট রয়েছে, সেগুলোর সব পণ্যই এপেক্স ফুটওয়্যার লি. (ইউনিট-২) কারখানায় উৎপাদিত এবং এর উৎপাদন কার্যক্রম এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের রপ্তানিমুখী কারখানা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

আমরা এপেক্স ফুটওয়্যার লি. এর ইউনিট-২কে প্রণোদনার টাকা দিইনি। সিটি ব্যাংক প্রণোদনার টাকা ছাড় করেছে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জয়েন্ট স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানির অনুমোদন নিয়ে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডকে এক হিসাবের মধ্যে রপ্তানি ও দেশীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করার জন্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এখানে আমরা কী করতে পারি?’

আরও সংবাদ পড়ুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top