বেতনের চেয়েও উপরি বেশী; সোর্স না থাকলেও পুলিশ কর্তাদের পকেটে ‘সোর্স মানি’
বিশেষ প্রতিবেদকঃ সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এগিয়েছে। একই সঙ্গে এগিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশও।
কোন এক সময় আসামি গ্রেফতার ও অপরাধী শনাক্তে সনাতনী পদ্ধতি অবলম্বন করত পুলিশ। ওই সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা সোর্সদের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিলেন।
পুলিশকে নানাভাবে তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সোর্সরা ভূমিকা পালন করত। বিনিময়ে তারা অর্থ নিত। ওই অর্থ ‘সোর্স মানি’ হিসাবে পরিচিত। সময়ের পরিবর্তনে অনেক সোর্স ভয়ংকর হয়ে উঠে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা নানাভাবে প্রভাবিত করতে থাকে। নিজেরাই জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। এ কারণে সোর্সদের প্রতি নির্ভরতা কমাতে পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে সোর্সদের স্থান প্রযুক্তি দখল করে নেয়।
প্রযুক্তির এ যুগে সাম্প্রতিক সময়ে সোর্সদের প্রতি পুলিশের নির্ভরতা অনেকাংশে কমে গেছে। কিন্তু কমেনি সোর্স মানির পরিমাণ। বরং সোর্স মানির অঙ্ক অনেকাংশে বেড়েছে। অথচ সোর্স মানির সঠিক ব্যবহার না হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
কারণ, এ অর্থকে অনেকটা নিজের পকেট মানিতে পরিণত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে সরাসরি সোর্সদের সম্পর্ক। অথচ কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা কোনো সোর্স মানি পান না।
এএসপি থেকে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন। যারা কোনো অপারেশনাল কাজে জড়িত নন বা সোর্স ব্যবস্থাপনার কোনো কাজে যুক্ত নন তারা সোর্স মানি পান। আবার টাকার পরিমাণও কম নয়। সোর্স মানির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এর কোনো অডিট হয় না। তাই কে কত টাকা পাবেন তা অফিশিয়ালি নির্ধারণ করা নেই।
সাধারণত এএসপি প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৪০ থেকে ৪৫ হাজার, এসপি ৫০ থেকে ৯০ হাজার, অতিরিক্ত ডিআইজি ৬০ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সোর্স মানি পেয়ে থাকেন। ডিআইজি ও অতিরিক্ত আইজি পদের কর্মকর্তারা আরও বেশি সোর্স মানি পান। যা তাদের বেতনের চেয়েও বেশি।
এ মূহূর্তে পুলিশে মোট জনবল দুই লাখ ১৩ হাজার ৬৪৪। এর মধ্যে সোর্স মানিপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (এএসপি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এর মধ্যে এএসপির সংখ্যা এক হাজার ২২২ জন, অতিরিক্ত এসপি এক হাজার একজন, এসপি ৫৯৩ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি ২০০ জন, ডিআইজি ৮৫ জন এবং অতিরিক্ত আইজি ২২ জন।
ঢাকার বাইরের থানায় কর্মরত এক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণমাধ্যমে জানান, পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশ হাসপাতাল, বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার, পুলিশ স্টাফ কলেজ, ডিএমপি সদর দপ্তর এবং বিভিন্ন ইউনিট সদর দপ্তর সরাসরি কোনো অপারেশনাল কাজে জড়িত না। এসব জায়গায় কর্মরত এএসপি থেকে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সোর্স মানি পান। অথচ সোর্সদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা অপারেশনাল কাজে জড়িত তাদেরই সোর্স মানি পাওয়া উচিত। সোর্সদের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই তারা কেন সোর্স মানি নিচ্ছেন? অথচ মাঠপর্যায়ে কর্মরত পরিদর্শক, এসআই, এএসআই, কনস্টেবলরা এ টাকা পাচ্ছেন না।
তবে থানার ওসি ৫-১০ হাজার টাকা করে সোর্স মানি পান। এটা নির্ভর করে জেলার এসপিদের ওপর। কোনো কোনো থানার ওসি এক টাকাও সোর্স মানি পান না। মেট্রোপলিটন এলাকার ওসিদের সোর্স মানি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট কমিশনারের ওপর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, অফিশিয়াল ভাষায় সোর্স মানি বলে কিছু নেই। সোর্স মানি মূলত অপারেশনাল মানি। যারা সোর্স মানি পান তারা কোনো না কোনো ভাবে অপারেশনাল কাজে জড়িত।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নিচের পর্যায়ে যারা অপারেশনাল কাজে জড়িত তারা কেন সোর্স মানি পাচ্ছেন না-সে বিষয়ে বলতে পারব না। আমার মনে হয়-এ নিয়ে কারও প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। কারণ, এটা পুলিশ বিভাগের অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়। তাই এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
আরও সংবাদ পড়ুন।