তজুমদ্দিনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে দুই শিক্ষক
ভোলা প্রতিনিধিঃ গ্রামের সহজ সরল শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।
চাকরি দেওয়ার নামে মাদ্রাসা শিক্ষক আপন দুই ভাইয়ের প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার।
উত্তর চাঁচড়া মোহাম্মদিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সালেহ উদ্দিন ও ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা নুরুদ্দিন আপন দুই ভাই জাল জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরির দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত দুই ভাই ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ডের মাওলানা আব্দুল খালেকের ছেলে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত ওই মাদ্রাসার কর্মরত অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষিত বেকারদের চাকরি দেওয়ার নামে কৌশলে দীর্ঘদিন যাবত ছালেহ উদ্দিন ও নুরুউদ্দিন দুই ভাই প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বহু পরিবারকে পথে বসিয়েছে তারা। তাদের আপন খালার ছেলে আমির হোসেনকে উত্তর চাঁচড়া মোহাম্মাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নৈশ প্রহরীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়ে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
চাঁচড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সিদ্দিককে ওই একই পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৮ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে মাদ্রাসায় প্রায় এক বছর নৈশ প্রহরীর চাকরি করিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়নি প্রতারক দুই ভাই। উত্তর চাঁচড়া ২নং ওয়ার্ডের শানু মিয়ার ছেলে ইলিয়াসকে ২০১৩ সালে ওই একই মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী কোঠায় চাকরি দেওয়ার নাম করে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। চাঁচড়া ৩নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ শাহজাহান এর মেয়ে নাজমাকে ২০০৯ সালে মনপুরা উপজেলা বাংলাবাজার জাকির হোসেন রেজিস্টারি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে কয়েক ধাপে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
মাও: সালাউদ্দিন ও মাও: নুরুদ্দিন নামের আপন দুই ভাই জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটের আদলে ভুয়া একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে নাজমাকে শিক্ষক নিয়োগের তালিকা দেখিয়ে চাকরি নিশ্চিত হয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু যাচাই বাছাই করে নাজমা জানতে পারে ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে তাকে শিক্ষক শিক্ষিকা তথ্য এর বিবরণী তালিকা দেওয়া হয়েছে। নাজমা তার ১০ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলে তার স্বামীকে মারধর করে মাওলানা ছলেহ উদ্দিন ও তার ভাই মাওলানা নুরুউদ্দিন। জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগের নামে দুই সহোদর বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায় মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে তাদের মূল পেশা হচ্ছে প্রতারণার মাধ্যমে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। অবৈধ টাকায় উত্তর চাঁচড়া মোহাম্মাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পাশে গড়েছেন বিশাল অট্টালিকা। চাকরি দেওয়ার নামে আত্মসাৎ করা অর্থ কাউকেই ফেরত দিতে হয়নি তাদের। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বীরদর্পে বহাল তবিয়ত রয়েছে তারা। ভুক্তভোগীরা টাকা চাইতে গেলে তাদের বাহিনী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে অনেকে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রতারক মাওলানা ছালেহ উদ্দিন ও মাওলানা নুরুউদ্দিনের বাসায় গিয়ে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।
ভুক্তভোগীরা প্রতারক মাওলানা ছালেহ উদ্দিন ও মাওলানা নুরুউদ্দিনকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।