৮ মার্চ হোক পুরুষ দিবস – শাহানা সিরাজী

Picsart_23-03-06_22-52-58-018.jpg

৮ মার্চ হোক পুরুষ দিবস – শাহানা সিরাজী

অনেক কাল আগে আমার বড়ো ছেলে মন্তব্য করেছিলো, সাহিত্য আর সংসার দুটো এক সাথে হয় না। সেদিন ভাবিনি কথাটি অনেক বড় ছিলো। সংসারকে ইগনোর করে সাহিত্যে ঝাঁপিয়ে পড়িনি আবার সাহিত্যও ছাড়িনি।
যা প্রাণ থেকে আসে
যা করে তৃপ্তি আসে
তা ফেলে দিই কী করে?

সংসারের প্রয়োজনে যেমন দিনকে রাত করেছি
রাতকে দিন করেছি,
স্বজনদের প্রয়োজনে যেমন পাশে থেকেছি
তেমন করে সাহিত্যের জন্য তাদেরকে কী পেয়েছি?
সাহিত্য একান্তই আমার
কবিতা আমার
গল্প আমার উপন্যাস আমার
শিশুতোষ সাহিত্য নিতান্তই আমার
এর থেকে অর্থ তো আসে না
আসে কিঞ্চিত পরিচিতি
বন্ধুমহল বলে,ইনি শাহানা সিরাজী।
কারো সাথে দুদণ্ড আলাপ হয়
কারো সাথে হয় না
কারো সাথে হয়তো কোথাও কদাচিৎ কবিতার আড্ডা হয় কিংবা আদা চায়ের।
এ পরিচিতি সংসারের কোন কাজে লাগে! এ দিয়ে তো মাছ মাংস কেনা যায় না, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ হয় না। আমি তো আর হুমায়ুন আহমেদ কিংবা জাফর ইকবাল নয়!
অয়হবা যাদের বই মেলায় হুহু বিক্রি হয় তাদের কেউ নয়, তবুও লিখি, দুচার জন মানুষের মেলায় একটু হাসি-
এও যদি স্বস্তিতে পারতাম
তাহলেও বুঝতাম
যাদের জন্য জীবনকে বাজি রেখে রক্তাক্ত হয়েছি তারা খানিকটা সম্মান করে!

এটা নিছক কবিতা নয়
এটা একজন কবির দীর্ঘশ্বাস
একজন কবির হারানোর যন্ত্রণা
একজন কবির আত্মমর্যাদা হারানোর ইতিহাস।
রবীন্দ্রনাথ সোনার চামুচ মুখে জন্মে ছিলেন
তাই শান্তিনিকেতনে শান্তি খুঁজেছেন
নজরুল আচমকাই স্তব্ধ হলো নাকি অন্য কিছু অজানাই রইল
জীবনানন্দ কেন আত্মাহুতি দিলো?
আর্থিক অস্বচ্ছলতা নাকি পারিবারিক অবজ্ঞা অবহেলা!

ষাটের দশকের জমজমাট কবিদের অনেকেরই বিচ্ছেদ ঘটেছে। তবুও পুরুষতন্ত্রের জোরে তাঁরা টিকে আছে।
বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল কী ভাবে স্থান নিয়েছেন সাহিত্যে? কে তাঁদেরকে সমর্থন যুগিয়েছেন?
এখনো এ জগতে নারীর উপস্থিতি নিতান্তই কম
যে কজন দাবড়ে বেড়াচ্ছেন তাদেরকে পরিবার সাপোর্ট দেয় বলেই হয়তো কাজ করছেন আবার অনেকেই নিজের শক্তিতে করছেন। অনেকেই নিজের ভেতর পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাচ্ছেন।
সাহিত্যিক নারী সমাজের চোখে “তসলিমা নাসরীন”। তসলিমা স্বাধীন ভাবে লিখছেন, তাঁকে চারদিকের বেড়ায় আঁটকে দেশ ছাড়া করেছে তাও তাঁর লেখা সর্বাধিক ভাষায় অনুদিত হচ্ছে। তথাপিও একজন খারাপ নারী হিসেবে তিনি কথা শোনেন!
এ জীবনে কতোবার আমি নিজে গালিশুনেছি “তসলিমা নাসরিন “। তসলিমা যতদিন বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে ততোদিনই পঠিত হবে, বাংলা ভাষা যদি কোন দিন হারিয়ে যায় অন্য আরো ১৭টি ভাষায় বেঁচে থাকবে।
পৃথিবীর বুকে তাঁর আঁচড় যথার্থ। তাই নিন্দুকের অভাব নেই!

নারী জাগরণের যে স্বপ্ন বেগম রোকেয়া দেখেছেন আজকের নারীরা এখনো সে স্বপ্ন দেখার সাহসই পান না। আজকের নারীরাও বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর রগরগা বিজ্ঞাপনের পণ্য হয়ে কেবল ভোগ বিলাসে মত্ত, আরেক শ্রেণি খাও দাও অন্যের কুৎসা নিন্দা ছড়ানোয় ব্যস্ত।
স্বপ্ন কেন তারা দেখেন না? কেন সাহস পান না।
কী ভাবে পাবেন?
নারীকে এখন অর্থ উপার্জন করতে দেখা যায় কিন্তু সে অর্থ কোথায় কী ভাবে ব্যয় হবে সে স্বাধীনতা নারীর নেই। নারীর স্বাধীন মতামত দেয়ার সুযোগ নেই। একটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেবে তাতে নারীর সম্মান যাক কিংবা থাক তাতে কিছুই আসে যায় না।

নারী এখনো কোথাও পিতার কাছে,ভ্রাতার কাছে,তারপর স্বামীর কাছে, সব শেষে পুত্র সন্তানের কাছে বন্দী। দেহ তার, প্রাণ তার কিন্তু এগুলোর মালিক অন্য কেউ। প্রয়োজন মতো কেবল হাত বদল হয়।

যাদের এতোবার মালিকানা বদল হয় তারা কী ভাবে স্বপ্ন দেখবে? তারা যদি স্বপ্ন না দেখে তাহলে স্বপ্নবাজ পুরুষ কোথা থেকে তৈরি হবে।
এ এক চক্র! দারিদ্রের দুষ্টু চক্রের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেড়ালের গলায় ঘন্টা কে বাঁধবে?
উভয়ের যুথবদ্ধ সমঝোতা আর নারীকে উপেক্ষা করা এক নয়। উপেক্ষিত নারী অসম্মান নিয়ে বাঁচতে বাঁচতে শেষে মেশিন হয়ে যায়। যন্ত্রের মতো গৃহকর্ম কিংবা উপার্জন করে যায়, নিজের দেহে পচন ধরলেও হুঁস থাকে না পচন ধরেছে।
আজো নারীর হাসি, আড্ডা, সিদ্ধান্ত, বন্ধুত্ব সবই যখন অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন কিসের ৮মার্চ নারী দিবস?

বরং এ দিবসটি হোক পুরুষ দিবস, তারা ক্ষতিয়ে দেখুক কতো নারীকে অসম্মান করেছে, আর কতো নারীকে সম্মানীত করেছে।

সামাজিক অন্ধত্ব দূর করা সম্ভব হতো যদি তাহলে নারীর দীর্ঘশ্বাস কমতো।

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর সাধারণ
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ
কবি,প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top