সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামানের ঘুষ দাবী – দুদকের অভিযান

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সাগর চৌধুরীঃ সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে ভূমি রেজিস্ট্রি দলিলে স্বাক্ষর বাবদ ঘুষ দাবির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়, পাবনা থেকে আজ সোমবার (১৬জানুয়ারী২০২৩) একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযান পরিচালনাকালে টিম কর্তৃক সরেজমিনে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য আগত কয়েকজন সেবাগ্রহীতার সাথে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলা হয় এবং তাদের দলিল রেজিস্ট্রি সেবা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এছাড়াও সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল রেজিস্ট্রার বই, বেলকুচি সাব রেজিস্ট্রি অফিস এলাকাধীন মৌজা সমূহের জমির শ্রেণীভিত্তিক শতাংশ প্রতি জমির বাজার মূল্যের তালিকা এবং বাজার মূল্য তালিকা পদ্ধতি, ২০১৫ পর্যবেক্ষণ করা হয়।

উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস অনিয়ম- দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, এক শ্রেণির দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা।

অভিযোগে বলা হয়, কিছু সংখ্যক দলিল লেখক দ্বারা গঠিত সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাব-রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামান জড়িয়ে পড়েছেন নানা অনিয়মে।


ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন জানান, খোদেজা খাতুন ২৯/০১/১৯৯১ সালে আজগর আকবরের কাছে জমি বিক্রি করেন। ৪০ নম্বর খতিয়ান গাড়ামাসী মৌজায় মামলা থাকা সত্ত্বেও সেই জমি পুনরায় ১২/৪/২০২১ তারিখে বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামান এসে অন্য আরেক ব্যক্তির কাছে বিক্রির রেজিস্ট্রি করেন। জমির খাজনার চেক ছাড়াই হাসানুজ্জামান রেজিস্ট্রি করে দেন।

আরেক ভুক্তভোগী মো. আবুল হাসেম এ প্রতিবেদককে জানান, তিন মাস আগে মুকুন্দগাতী মৌজার সাড়ে তিন শতাংশ জমি ক্রয় করি। জমিদাতা মেজর নুর ইসলাম ঢাকায় অবস্থান করায় শুধু কমিশন করার জন্য আমার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নেন সাব-রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামান। এ রকম কমিশনের নামে অবৈধভাবে বেশি টাকা ফি নিয়ে অনেক জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।

আরো অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামান সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তিনি এ অফিসে যোগদানের পর থেকে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতি দলিল থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করে না। তার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের ভুল-ত্রুটির কথা বলে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, সেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top