কারা কর্তৃপক্ষ বিপাকে ১৩৯ বিদেশি বন্দি নিয়ে
বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন ১৩৯ জন বিদেশি বন্দি। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও প্রকৃত অভিভাবক না পাওয়ায় তাদের মুক্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি ঐ বন্দিদের দূতাবাসগুলোও তাদের গ্রহণ করছে না। এ নিয়ে দফায় দফায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যেমে চিঠি দিলেও তাতে সাড়া মিলছে না। পাশাপাশি তাদের ভাষা বুঝতে পারা নিয়েও রয়েছে জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে ঐ বন্দিদের নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বিপাকে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বিদেশি বন্দি রয়েছে ৪৭২ জন। এদের মধ্যে হাজতি ২৭৮ জন ও কয়েদি ৫৫ জন। এছাড়া ১৩৯ বন্দি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। কারা ভাষায় তাদের আরপি (রিলিজ প্রিজন) বন্দি বলা হয়। এই ১৩৯ জনের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আট জন, চট্টগ্রামে ২২, কক্সবাজারে ২৭, টাঙ্গাইলে এক জন ও বাকি বন্দিরা কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি ও কাশিমপুর পার্ট-১-এ বন্দি রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সাজা শেষ হওয়ার পরও বিদেশি নাগরিকরা নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না। ফিরিয়ে নিতে বন্দিদের নাম-ঠিকানাসহ সব তথ্য সংবলিত কাগজ ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসকে দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঐসব দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৬ জন। কিন্তু গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত কারা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের বন্দির সংখ্যা ছিল ৮৪ হাজার ১১৫ জনে। এর মধ্যে নারী বন্দি রয়েছে ৩ হাজার ৩৩৯ জন। কিন্তু সম্প্রতি ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের আগে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে বলে কারাসূত্র দাবি করেছে।
এমনিতেই দেশের কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা কম। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে বন্দির সংখ্যা আরো বেড়েছে। তাদেরই স্থান সংকুলানে সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩৯ জন বন্দি কারা কর্তৃপক্ষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এসব বন্দি, মিয়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, তাঞ্জানিয়া ও পূর্ব অফ্রিকার নাগরিক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একটি সূত্র বলছে, কারাবন্দি বিদেশি নাগরিকদের বেশির ভাগেরই বৈধ কাগজ নেই। তারা নিজের দেশের নাম বললেও সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস তাদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ। বন্দিদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করা হলেও সময়মতো উত্তর পায় না মন্ত্রণালয়। এতে সরকারের বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে। পাশাপাশি এসব বন্দি বেশির ভাগ সময়েই উগ্র আচরণ করে থাকে। বিশেষ করে আফ্রিকার নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বেশি। এ কারণে তাদের সামলাতেও বাড়তি কারারক্ষী মোতায়েন করতে হয়। ভালো খাবার না পেলেও তারা কারারক্ষীদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করে থাকেন বলে কারা সূত্র দাবি করেছে। এ কারণে তাদের খাবারের দিকেও আলাদা নজর দেওয়া লাগে।
কারা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আটক বেশির ভাগ বন্দিই মিয়ানমারের নাগরিক। এদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে যোগাযোগ করলে ঐসব বন্দিরা তাদের দেশের নাগরিক না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।