ভোলা জেলা কারাগারে সহকারী সুমনের অনিয়ম ও দূর্নীতি; ভুয়া বিলে লাখ লাখ অর্থ আত্মসাৎ

Picsart_22-12-18_12-05-39-105.jpg

ভোলা জেলা কারাগারে সহকারী সুমনের অনিয়ম ও দূর্নীতি; ভুয়া বিলে লাখ লাখ অর্থ আত্মসাৎ

অপরাধ প্রতিবেদকঃ কারাগারের অফিসে বসে মাদক সেবন, কারাবন্দিদের পাশাপাশি কারারক্ষীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নিত্যদিনের ঘটনা। নারী কারারক্ষীর শ্লীলতাহানি অথবা ভুয়া বিল বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে তিনি বহাল-তবিয়তেই আছেন।

ভোলা জেলা কারাগারের কারা সহকারী সাইদুজ্জামান সুমনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। শত অপরাধেও তার শাস্তি হয় না। এ কারণে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

কারা সহকারী সুমনের বিরুদ্ধে কারাগারে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ-বাণিজ্য, চিকিৎসা-বাণিজ্য ও খাবার পরিবেশনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

কারা সংশ্লিষ্টদের দাবি-সুমনের মাদক সেবনসহ সব অপরাধমূলক কাজের বিষয়ে কারারক্ষী থেকে জেল সুপার পর্যন্ত সবাই জানেন।

এক নারী কারারক্ষীর কাছ থেকে ঘুস আদায় এবং মাদক সেবন করে তাকে গালাগাল ও হুমকি- ধমকি দেওয়ায় ওই নারী কারা মহাপরিদর্শকের কাছে সুমনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতা বলে সুমনের কোনো শাস্তি হয়নি।

সম্প্রতি কারাগারের বাইরে মাদক সেবন করে মাতলামি করতে গিয়ে জনতার রোষানলে পড়েন সুমন। গণধোলাইয়ের পর তাকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল। এরপরও তার বেপরোয়া জীবন মোটেই পালটায়নি। বরং বিভিন্ন সময় তিনি কারারক্ষীদের মারধর করার হুমকি দেন। তার হুমকি-ধমকিতে ভয়ে তটস্থ থাকেন সবাই। বিগত দিনেও তার নানা অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও কখনো কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ভুয়া বিলে লাখ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগঃ ভোলা জেলা কারাগারে চলতি বছর জেল সুপার না থাকায় ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আল মামুন। এ সুযোগে সুমন ভুয়া বিল বানিয়ে কারাগার থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চলতি বছরের ৩০ জুন ছিল জেলার আমিরুল ইসলামের সর্বশেষ কর্মদিবস।

জেলারের স্বাক্ষর ছাড়া ঠিকাদারি বিল পরিশোধের নিয়ম না থাকলেও কারা সহকারী সুমন বিভিন্ন খাতের বিল বানিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে-পুরস্কারের ৩৫ হাজার টাকা, বই ক্রয় দেখিয়ে ২৫ হাজার টাকা, সার কেনা দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা, কীটনাশক বাবদ ২০ হাজার টাকা, বীজ ও সার কেনা বাবদ ১৫ হাজার টাকা এবং পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট কেনা বাবদ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এসব বিলের তারিখ একইদিনে।


অভিযোগ-কারা সহকারী সুমন ও ঠিকাদার মিলে ছলচাতুরীর মাধ্যমে ভুয়া বিল বানিয়ে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কোনো খরচ না করেই এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আবার একই বিল কারাগারের উন্নয়ন ফান্ড থেকে নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের বৈঠক এবং কোনো বন্দি অসুস্থ হলে কারাগারের ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান (গাড়ি) হাসপাতালে যাওয়া-আসা করে। এটি জেলা প্রশাসনের বৈঠকে মাসে দুবার এবং রোগী আনা-নেওয়ায় দুয়েকবার ব্যবহার হয়। অথচ গাড়িচালক মাহাবুবকে প্রতি মাসে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ওভারটাইম বিল করিয়ে দুজনে টাকা আত্মসাৎ করেন।

সুমনের সব অনিয়মের বিষয়ে অবগত এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর ভোলা জেলা কারাগারের উন্নয়ন ফান্ডের খরচের ভাউচারের একই দিনের ১৭ থেকে ২৭ সিরিয়াল পর্যন্ত বিল যাচাই করলে দুর্নীতির চিত্রগুলো ধরা পড়বে। কারণ বিল ভাউচার অধিকাংশই কারা সহকারী সুমনের মনগড়া বিল। বন্দিদের খাবার বিতরণেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সদ্য কারামুক্ত কয়েকজন জানান, বন্দিদের দুপুরে ডাল-সবজি-ভাত দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সুমন শুধু ডাল-ভাত দেন। মাছ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও দেওয়া হয় না। সুমনের ইচ্ছেমতো চলছে ভোলা জেলা কারাগার।

জামিনে সদ্য মুক্তি পাওয়া একজন গনমাধ্যমে জানান, রান্নার কাজে নিয়োজিত কয়েদি নাসির উদ্দিন (চৌকার মেড) ও কারা সহকারী সুমন সাপ্তাহিক বরাদ্দ গরুর মাংস আলাদাভাবে রান্না করে নিয়মিত সচ্ছল বন্দিদের কাছে পার্সেল করে নগদ টাকায় বিক্রি করেন। সূত্র জানায়, ঈদুল ফিতরে বন্দিদের জন্য উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করে কারাগার।

এ সময় ৪০ কেজি চিনিগুড়া পোলার চাল চুরি করে লুকিয়ে রাখে সুমন সিন্ডিকেট। বন্দিদের খাবারও কম দেওয়া হয়। ওই সময় তৎকালীন জেল সুপার নাসির উদ্দিন ও জেলার আমিনুর ইসলাম খাদ্যগুদাম তল্লাশি করে ৪০ কেজি চিনিগুড়া উদ্ধার করলে সুমন ফেঁসে যান।

প্রথম অপরাধের জন্য ১৫ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় অপরাধের জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার নামে সুমনের কাছ থেকে ঘুস নিয়ে তাকে শাস্তি থেকে রেহাই দেওয়া হয়। অপরদিকে সমপরিমাণ ঘুস দিতে না পারায় কয়েদি নাসির উদ্দিনকে প্রথম অপরাধের জন্য তিন মাসের রেয়াত ও দ্বিতীয় অপরাধের জন্য তিন মাসের রেয়াত কেটে নেন। যা তার হিস্ট্রিতে লিপিবদ্ধ আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারারক্ষী জানান, সিট বাণিজ্য থেকে শুরু করে খাবারে অনিয়মসহ সব ধরনের অনিয়মের সঙ্গে সুমন জড়িত। এমনকি কারাগারের অফিসে বসে তিনি মাদক সেবন করার পাশাপশি কারাগারের ভেতরে মাদক সরবরাহ করেন। বিশেষ করে গাঁজা ও ইয়াবা। এ কারারক্ষীর আরও দাবি-সুমন হাজারো অপরাধ করলেও তার শাস্তি হয় না। কারণ তার অনেক আত্মীয়-স্বজন কারা অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এমনকি বর্তমান জেলারকেও তার কথামতো চলতে হয়।

জানা গেছে, আদালতে নেওয়ার পথে দুই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সুমনের নিকটাত্মীয় কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি থেকে সদ্য বদলি হয়ে রাজশাহী রেঞ্জে সংযুক্ত হয়েছেন। তার ক্ষমতা অপব্যবহার করে দাপটের সঙ্গে কারা সহকারী সাইদুজ্জামান সুমন চাকরি করছেন। এ কারণে কাউকে তিনি পাত্তা দেন না। উলটো তার কথামতো জেলার এবং জেল সুপারকে চলতে হয়।

এ ব্যাপারে কারা সহকারী সাইদুজ্জামান সুমন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমার বিষয়ে যা লিখতে পারেন লেখেন। আর আপনি ভোলা বা বরিশাল আসেন। আপনাকে আমি সাংবাদিকতা শিখিয়ে দেব।’ মাদক সেবন করে মাতলামি ও গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘এসব বিষয়ে রিপোর্ট করলে খুব ভয়াবহ পরিণতি হবে।’ এছাড়া মিথ্যা মামলা করার হুমকি দিয়ে সুমন ফোন কেটে দেন।

আরও সংবাদ পড়ুন।

কারারক্ষী পদে নিয়োগ অনিয়মে কী ব্যবস্থা, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

আরও সংবাদ পড়ুন।

বরখাস্ত কারা ডিআইজি বজলুর রশীদের ৫ বছরের কারাদণ্ড

আরও সংবাদ পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top