রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সিআইডির পরিদর্শকের নেতৃত্বে ডাকাতি

Picsart_22-12-11_08-35-29-199.jpg

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সিআইডির পরিদর্শকের নেতৃত্বে ডাকাতি

অপরাধ প্রতিবেদকঃ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের সাড়ে ছয় লাখ টাকার মালামাল লুট করেন একটি চক্রের কয়েকজন। পরে ওই ব্যবসায়ীর বাসায় চালানো হয় ‘অভিযান’। এ সময় লুট করা হয় আরও আড়াই লাখ টাকা। এখানেই শেষ নয়; পরে শহিদুলের ভাগনে জাবেদকে অপহরণের পর হত্যার হুমকি দিয়েও অর্থ আদায় করেন চক্রটির সদস্যরা।

পুলিশ বলেছে, এই চক্রের প্রধান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক সালাউদ্দিন করিম। তিনি সিআইডির ঢাকা মহানগর উত্তর অঞ্চলে কর্মরত। তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছিল।

এসব কাজে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করতেন চক্রের সদস্যরা। গাড়িটিতে থাকা নম্বরপ্লেট ছিল ভুয়া। তবে পুলিশ জানিয়েছে, মাইক্রোবাসটি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নামে নিবন্ধিত।

মালামাল ও অর্থ লুটের অভিযোগ এনে গত ১ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ ও ১৮ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসব ব্যক্তি হলেন সিআইডির পরিদর্শক সালাউদ্দিন করিম, তাঁর সহযোগী মো. বাবু, মেহেদী হাসান, বুলবুল চৌধুরী, মনির, শহিদুল ইসলাম ও সামিউল। তাঁদের মধ্যে সামিউল ও বাবু ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সিআইডির একটি সূত্র জানায়, পরিদর্শক সালাউদ্দিন করিমের বিষয়টি নিয়ে সিআইডির ঢাকা উত্তর অঞ্চল তদন্ত করেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন সিআইডি প্রধানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের অনুলিপি পুলিশ সদর দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমে বলেন, মালামাল লুট ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন নিজেকে সিআইডির পরিদর্শক বলে দাবি করেছেন। বিষয়টি সিআইডিকে জানানো হয়েছে। তারা (সিআইডি) লিখিতভাবে জানালে নিশ্চিত করে বলা যাবে তিনি প্রকৃতই সিআইডিতে কর্মরত কি না।

তবে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান গণমাধ্যমে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া সালাউদ্দিন করিম সিআইডির পরিদর্শক। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

সিআইডির একটি সূত্র জানায়, সালাউদ্দিন করিমের বিষয়টি নিয়ে সিআইডির ঢাকা উত্তর অঞ্চল তদন্ত করেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন সিআইডি প্রধানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের অনুলিপি পুলিশ সদর দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। তবে সালাউদ্দিন করিমের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রায় ২৪ বছর ধরে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকায় সিগারেট বিক্রির ব্যবসা করেন শহিদুল ইসলাম। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি লালমাটিয়ার বিভিন্ন দোকানে পাইকারি দরে সিগারেট সরবরাহ করেন তিনি। খুচরা বিক্রির দোকানটি আড়ং মার্কেটের উত্তর-পশ্চিম কোণের ফুটপাতে। পাশে ফায়ার সার্ভিসের নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলায় তিনি মজুত করা সিগারেট রাখতেন। তাঁর ভাগনে জাবেদ ব্যবসার কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন।

শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ২৯ অক্টোবর দুপুরে ভাগনে জাবেদকে সিগারেট নিয়ে আসার জন্য তিনি নির্মাণাধীন ওই ভবনের নিচতলায় পাঠান। এ সময় ডিবির লোক পরিচয়ে একজন সিগারেট বিক্রির নথি দেখতে চান। তখন তাঁর (শহিদুল) সঙ্গে জাবেদ মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু আরও তিনজন এসে জাবেদের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। সেই সঙ্গে স্টিলের বাক্সে থাকা সাড়ে ছয় লাখ টাকার মালামাল পাঁচটি বস্তায় ভরে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। সঙ্গে জাবেদকেও গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়।

এরপর জাবেদকে নিয়ে ওই ব্যক্তিরা শহিদুলের বাসায় যান। সেখান থেকে আড়াই লাখ টাকা লুট করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, জাবেদকে মাইক্রোবাসে তোলার সময় তাঁকে বলা হয়, বাসায় আরও নকল সিগারেট আছে। তাঁর (শহিদুলের) স্ত্রী ও মা তখন হাসপাতালে ছিলেন। জাবেদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তাঁরা বাসায় ঢোকেন। তল্লাশির সময় বাসায় থাকা আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যান তাঁরা।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। শহিদুল বলেন, এরপর জাবেদকে গাড়িতে তুলে নিয়ে অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণ হিসেবে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন চক্রের সদস্যরা। টাকা না দিলে জাবেদকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। তাঁদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ৫ হাজার টাকা পাঠালে জাবেদকে মিরপুর এলাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনের কাউকেই চেনেন না বলে দাবি করেন শহিদুল। তাঁকে কেন লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে, এ বিষয়েও তাঁর কোনো ধারণা নেই বলে জানান তিনি। শহিদুল বলেন, ‘যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে মনে হয়েছে, চক্রের সদস্যরা আমাকে অনেক দিন ধরে অনুসরণ করেছে।’

বিষয়টি নিয়ে শহিদুল সংবাদমাধ্যমে খুব বেশি কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকার মালামাল ও নগদ টাকা লুট হওয়ায় তাঁর পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। সংবাদমাধ্যমে কথা বললে মালামাল ও টাকা কখনোই ফেরত পাবেন না বলে তাঁর আশঙ্কা।

জব্দ মাইক্রোবাস সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির
গত ১৬ নভেম্বর সিআইডির পরিদর্শককে গ্রেপ্তার করার সময় একটি টয়োটা মডেলের মাইক্রোবাস, সিআইডি লেখা জ্যাকেট ও ওয়াকিটকি জব্দ করে পুলিশ। ওই গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো চ ৫১৫৯৭৬। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়ির মালিক সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

তবে গাড়ির মালিকানার বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমে বলেন, এই গাড়ির মালিকানার বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ গাড়ির মালিকানা দাবি করেনি। তবে মালিকানা নিশ্চিত হতে বিআরটিএতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিবহন বিভাগের প্রধান আবু সায়েম গণমাধ্যমে বলেন, ‘এই মাইক্রোবাসটি কয়েক বছর আগে বিক্রি করা হয়েছে। যাঁরা কিনেছেন, তাঁরা হয়তো এখনো মালিকানা পরিবর্তন করেননি।’ তবে গাড়িটি কার কাছে বিক্রি করা হয়েছে, সেটা জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে আদালতে পাঠানো এক নথিতে পুলিশ উল্লেখ করেছে, জব্দ করা মাইক্রোবাসটি ব্যবহার করে মামলায় উল্লেখ করা ঘটনার মতো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অপরাধ এর আগেও ঘটানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top