বাংলার বংশীবাদক – কথাতেই যার জাদুময় সুর (প্রথম পার্ট) শাহানা সিরাজী

Picsart_22-10-22_22-25-04-935.jpg

বাংলার বংশীবাদক – কথাতেই যার জাদুময় সুর (প্রথম পার্ট) শাহানা সিরাজী

ছোট্ট বন্ধুরা কেমন আছো? তোমাদের জন্য একটা দারুণ গল্প নিয়ে এসেছি। সবাই খুব মনোযোগ দিযে শোনো। গল্প শেষে তোমাদের জন্য কুইজ থাকবে। যে কুইজে জিতবে সেই আমার বন্ধু হয়ে যাবে। চলো তাহলে শুরু করি-
শৈশবে হতেই মানুষের প্রতি ছিলো ভালোবাসা আমাদের দেশে ছিলো এক বংশীবাদক। যিনি কথা বললেই বাঁশির সুর হয়ে যেতো। যে সুর শুনে এ দেশের হাজার হাজার মানুষ তাঁর পেছনে এসে দাঁড়াতো। তোমরা কি জানো তোমাদের মতো তাঁরও শৈশব ছিলো? তিনিও খেলতেন, পড়তেন, ঘুমাতেন। ঠিক তোমাদের মতোন। কিন্তু তিনি আরো একটা কাজ বেশি করতেন। জানো সেটা কি?

ওহহো! আমি বলছি শোন- তিনি দরিদ্রদের সাহায্য করতেন। যারা খেতে পেতো না, যাদের পোশাক ছিলো না তাদেরকে তিনি নিজের জামা ও খাবার দিয়ে দিতেন। একবার কি হয়েছে জানো? তাঁর বাবা তাঁর জন্য খুবই সুন্দর একটি শীতের জামা কিনে আনলেন। তিনি জামা পেয়ে মহাখুশি ! ঠিক আমাদের ইনারার মতো। দাদুর উপহার পেয়ে যেমন সে খুশিতে বাকুম বাকুম করছিলো ঠিক তেমনই বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বেরিয়ে গিয়েছেন। ফেরার পথে দেখলেন তাঁরই মতোন ছোট এক শিশু শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁপছো কেন? তোমার শীতের জামা কোথায়? ছেলেটি বললো, আমরা গরীব। আমাদের জামা কেনার টাকা নেই। জামা কোথায় পাবো। কাগজ কুড়িয়ে এনেছি। আগুন জ¦ালাবো তারপর আগুন পোহাবো।

সেই বংশীবাদক কী করলেন জানো?

নিজের নতুন জামা দরিদ্র শিশুটিকে দিয়ে দিলেন। বাড়িতে ফিরলেন খালি গায়ে। বাবা জানতে চাইলেন, গরম গেঞ্জিটি কোথায় ? তিনি বললেন, আমার আরো জামা আছে, ওটা দরিদ্র শিশুটিকে দিয়ে এসেছি। বাবা কিছুই বললেন না। মনে মনে ভাবলেন, তাঁর এই পুত্রটি বড় হয়ে দুনিয়ার সেরা কেউ হবে। বাবা হাসতে হাসতে বের হয়ে হয়ে গেলেন। তোমরা কি জানো কে এই বংশীবাদক?

তিনি হলেন আমাদের দেশের রূপকার, স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছেলেবেলায় তাঁকে খোকা বলে ডাকা হতো।
আর একবার কী হলো জানো? চাদর গায়ে দিয়ে বের হলেন ফিরে এলেন খালি গায়ে। বাবা আবারো জানতে চাইলেন, চাদর কোথায়? তিনি আবারও বললেন, ওই যে বুড়িমা, শীতে ঠকঠক করে কাঁপছিলো। তার কেউই নেই। কে তাঁকে চাদর কিনে দেবে? তাই আমি আমার চাদর দিয়ে এলাম। বললেন, জানেন বাবা, বুড়িমা চাদর পেয়ে আমাকে অনেক দোয়া করলেন। কতো কথা আল্লাহও কাছে বললেন! বাবা বললেন, তুমি ভালো কাজ করেছো। বিপদে মানুষের পাশে এ ভাবেই দাঁড়াতে হবে। আমি আবার তোমাকে চাদর কিনে দেবো।

আর একবার চারদিকে খুবই অভাব। মানুষজন না খেতে পেয়ে মরার দশা। আমাদের খোকা ঘরে অনুসন্ধান করে জানতে পারলেন গোলায় অনেক ধান আছে। তিনি পিতামাতার অনুপস্থিতিতে গোলার সব ধান চাল অভাবি মানুষদের ডেকে দিয়ে দিলেন। খবর পেয়ে বাবা মা ছুটে এলেন বটে তাঁকে একটি কথাও বলেননি। বাবা লুৎফর রহমান শুধু ভাবলেন আমার এই ছেলে মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারে না।

তিনি আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘আমার ছেলেকে এমন কিছু বানিও যাতে সে মানুষের সেবা করতে পারে।’ পিতার দোয়া বৃথা যায়নি। যতোদিন জীবন ছিলো ততোদিনই মানুষের সেবা করেছেন।

বর্ষার দিনে আমরা সবাই ছাতা নিয়ে স্কুলে যাই, তাই না? আমাদের খোকাও ছাতা নিয়ে স্কুলে যেতেন। প্রায়ই ছাতা ছাড়া ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতেন। তাঁর ছাতা সেসব বন্ধুকে দিয়ে আসতেন যাদের ছাতা ছিলো না। একবার ভেবে দেখো তো বাইরে খুব বৃষ্টি। স্কুল ছুঠি হয়েছে। তোমার ছাতা আছে কিন্তু তোমার বন্ধু সুজনের ছাতা নেই। তুমি তাকে তোমার ছাতা দিয়ে দেবে? ভেবে বলো। মনে হচ্ছে দিতে না। কারণ তাহলে তোমাকে ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতে হবে, তাই না?
কিন্তু আমাদের বংশীবাদক অনায়াসে তাঁর নিজের ছাতা অন্য বন্ধুকে দিয়ে নিজে ভিজে ভিজে আসতেন।

ছোট্ট বংশীবাদকের মনে মানুষের জন্য ছিলো অনেক ভালোবাসা, দয়া, মায়া। তিনি নিজের খাবার অন্যকে দিয়ে দিতেন। আমাদেরও উচিত তাঁর মতো করে মানুষকে ভালোবাসা।

আচ্ছা তোমরা জানো কবে কোথায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন? কে তাঁর মহানুভব বাবা কে সেই দয়াময়ী মা? তোথায় তাঁর জন্মস্থান?

তিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেছেন। তোমরা জানো ১৭মার্চ জাতীয় শিশুদিবস। এদিন তোমরা র্যালিতে যাও, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করো। মনে আছে তোমাদের? আমরা সবাই বিশাল কেক কেটে আমাদের এই খোকার জন্মদিন এবং জাতীয় শিশুদিবস পালন করি।

তাঁর জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মায়ের নাম মোসাম্মাৎ সায়েরা খাতুন। তাঁদের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাবা-মা ডাকতেন খোকা নামে। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গি-পাড়ায় ।

সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থানী মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন।
চৌদ্দ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার একটি চোখ কলকাতায় অপারেশন করা হয় এবং চক্ষুরোগের কারণে তার লেখাপড়ার সাময়িক বিরতি ঘটে।

আমাদের বংশীবাদক স্কুলে যখন ভর্তি হলেন তখন তিনি সব বন্ধুদের সাথে মিলে মিশে থাকতেন, এক সাথে সবার সাথে খেলতেন। তোমরা জানো তাঁর পছন্দের খেলা কী ছিলো? তাঁর পছন্দের খেলা ছিলো ফুটবল। এখন তোমাদের স্কুলেও কিন্তু ফুটবল খেলা হয়। তোমাদের এই ফুটবল খেলার নাম হচ্ছে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেসা ফুটবল টুর্নামেন্ট। প্রতিযোগিতা করে তোমরা খেলায় অংশ নাও। সবাই খেলবে, বুঝলে? খেলাধুলা আমাদের খোকা পছন্দ করতেন তোমদেরকেও অবশ্যই তাঁর মতোই খেলাধুলায় পারদর্শি হতে হবে।

এবার অন্যরকম গল্প বলবো। তোমরা মন দিয়ে শোনো –

শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ

বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি তাঁর বাবা শেখ লুত্ফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের তত্ত্বাবধানে। তাঁর ভাষায়, ‘আব্বার কাছ থেকেই আমি লেখাপড়া করি। আব্বার কাছেই আমি ঘুমাতাম। তাঁর গলা ধরে রাতে না ঘুমালে আমার ঘুম আসত না।’ শৈশবে আদরের খোকার জন্য বাবা তাঁর বাড়িতে রেখেছিলেন তিনজন শিক্ষক। ইসলাম ধর্ম শিক্ষার জন্য একজন মৌলভি সাহেব পড়াতেন আমপারা, দ্বিতীয়জন সাধারণ শিক্ষার পÐিত সাখাওয়াত উল্লাহ পাটোয়ারী পড়াতেন বাংলা বর্ণমালা ও নামতা, তৃতীয়জন কাজী আবদুল হামিদ পড়াতেন কবিতা ও গল্প। সবার মতো তাঁরও প্রথম শিক্ষক তাঁর বাবা এবং মা। পরে অন্য শিক্ষকের কাছে পড়েছেন।

১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সময়ে বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা জি টি স্কুলে পড়েছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও প্রাইমারি স্কুলের সেই শিক্ষক বেজেন্দ্রনাথ সূত্রধর ও সহপাঠী সৈয়দ নুরুল হক মানিককে ঢাকা আসার জন্য খবর পাঠান। তাঁরা এসেছেন শুনলে বঙ্গবন্ধু নিজেই ছুটে আসেন সব প্রোটোকল ভেঙে এবং স্যারের পায়ে ধরে সালামের পর বুকে জড়িয়ে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু সে শিক্ষককে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী তথা তাঁর অফিসকক্ষে। তিনি শিক্ষককে নিয়ে নিজের চেয়ারে বসিয়ে উপস্থিত মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গর্ব ভরে বলেন, ‘আমার শিক্ষক’।

ভেবে দেখেছো তিনি কী ভাবে তাঁর শিক্ষক এবং বন্ধুকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন? মনে রাখবে শিক্ষক হলো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। শিক্ষকের সাথে কখনোই অসুন্দর আচরণ করবে না। বন্ধুত্ব হলো একটি বন্ধন। এ বন্ধনকে সম্মান করলে আজীবন যে কোন সুখে দুঃখে তোমার বন্ধুকে তোমার পাশে পাবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের আদর্শ। আমরাও তাঁর মতো গুরুজনকে শ্রদ্ধা করবো। বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখবো।

বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমিক স্কুল ও বেরিবেরি রোগ

গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরে মাদারীপুর ইসলামিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছোট সময়ে তিনি দুষ্টুমিতে মেতে থাকতেন, খেলাধুলা করতেন, গান গাইতেন, তবে হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে হার্ট দুর্বল হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ১৯৩৬ সালে আবার চক্ষু খারাপ হয়ে পড়ে। গøুকোমা ধরা পড়ে। চোখের চিকিৎসার কারণে পড়ালেখা থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। চোখের সমস্যায় ১৯৩৬ সাল থেকে চশমাও পরতে হতো। এ সময়টায় পড়ালেখা-স্কুল না থাকায় বিকাল হলে সভায় যেতেন। তখন ছিল স্বদেশী আন্দোলনের যুগ।

ভেবে দেখোতো একজন পরোপকারি মানুষ গøুকোমায় আক্রান্ত হয়ে চোখের অপারেশ করাতে হলো। চোখ অপারেশন করলে চোখে চাপ পড়ে এ রকম কোন বাঁধা ধরা কাজ করা অনেকদিন ধরে নিষেধ থাকে। এ সময় চোখে চাপ পড়ে এমন কাজ করলে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হয়। তাঁর বাবা মাও তাঁকে স্কুলে যেতে বারণ করে দিলেন। আগে চোখ সুস্থ হবে পরে পড়া শোনা করা যাবে। পরিমিত খাওয়া ঘুম বিশ্রাম ব্যায়াম খুব প্রয়োজন ছিলো তখন।

তোমাদেরকেও মনে রাখতে হবে যখন তোমরা কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়বে তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলতে হবে। নিয়মিত সুষম খাবার খেতে হবে। খাবারের ছয়টি উপাদান মানুষের দেহে প্রতিনিয়তই দরকার। তোমাদের বিজ্ঞান বইতে তোমরা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়েছো। সে ভাবেই খেতে হবে,পড়তে হবে, বিশ্রাম করতে হবে। আমাদের বংশীবাদক যেভাবে নিয়ম মেনে চলেছেন আমাদেরকেও তেমনি চলতে হবে।

আবার পড়াশোনা শুরু ও ‘মুসলিম সেবা সমিতি’

বাংলার বংশীবাদক থেমে যাননি। বেরিবেরি রোগ তেকে মুক্ত হলেন, চোখও ভালো হলো। ১৯৩৭ সালে আবার তিনি লেখাপড়া শুরু করেন, তবে এবার আর পুরনো গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুলে নয়; যেহেতু তাঁর সহপাঠিরা তাঁকে পেছনে ফেলে গেছেন সেহেতু তিনি সে স্কুলে আর পড়বেন না ঠিক করলেন। তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হন।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবনে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আদর্শের সঙ্গে সমন্বিত করে এগিয়ে গেছেন রাজনীতির পরিমন্ডলে। তাঁর জীবন, কর্ম, চিন্তাচেতনা, দর্শন ও মানস গঠনে বিভিন্ন শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেও বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় শিক্ষকদের কাছে টেনেছেন ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতায়, কুশলাদিও জেনেছেন।

শৈশবের শিক্ষকদের মধ্য থেকে কাজী আবদুল হামিদ তাঁর জীবনে রেখাপাত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, “১৯৩৭ সালে আবার আমি লেখাপড়া শুরুকরলাম। এবার আর পুরোনো স্কুলে পড়ব না, কারণ আমার সহপাঠীরা আমাকে পিছনে ফেলে গেছে। আমার আব্বা আমাকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আমার আব্বাও আবার গোপালগঞ্জ ফিরে এলেন।

এই সময় আব্বা কাজী আবদুল হামিদ এমএসসি মাস্টার সাহেবকে আমাকে পড়াবার জন্য বাসায় রাখলেন। তাঁর জন্য একটা আলাদা ঘরও করে দিলেন। গোপালগঞ্জের বাড়িটা আমার আব্বাই করেছিলেন। মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করেন। যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন। মুষ্টিভিক্ষার চাল উঠাতেন সকল মুসলমান বাড়ি থেকে। প্রত্যেক রবিবার আমরা বাড়ি বাড়ি থেকে চাল উঠিয়ে আনতাম এবং এই চাল বিক্রি করে তিনি গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার ও অন্যান্য খরচ দিতেন। ঘুরে ঘুরে জায়গিরও ঠিক করে দিতেন। আমাকেই অনেক কাজ করতে হতো তাঁর সঙ্গে। হঠাৎ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তখন আমি এই সেবা সমিতির ভার নেই এবং অনেক দিন পরিচালনা করি। আর একজন মুসলমান মাস্টার সাহেবের কাছে টাকাপয়সা জমা রাখা হতো। তিনি সভাপতি ছিলেন আর আমি ছিলাম সম্পাদক।”

বঙ্গবন্ধু এ সময়টায় ফুটবল, ভলিবল ও হকি খেলতেন। রাজনীতির খেয়াল তত ছিল না। এ সময়ে তাঁর বাবা তাঁর জন্য আনন্দবাজার, বসুমতী, আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত পত্রিকা রাখতেন। ছোটকাল থেকেই তিনি এ পত্রিকাগুলো পড়তেন।

তোমাদের কাছে কেমন লাগছে বলোতো? যিনি এ দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, যিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করেছেন, যিনি না হলে আমাদের দেশ বাংলাদেশ কোন দিন বিশ^মানচিত্রে স্থান পেতো না তিনিই কিনা তোমাদের মতো ছোটবেলাতেই মুসলিম সেবা সমিতি পরিচালনার জন্য বাড়ি বাড়ি মুষ্ঠিভিক্ষার চাল ওঠাতেন! বলতে পারো কার জন্যে এই সেবা সমিতির সম্পাদক হয়েছেন? জনগণের জন্য। দরিদ্র জনগণকে সাহায্য করার জন্য।

ইসলামের নবী নবুয়াত প্রাপ্তির আগে গঠন করেছেন ‘হিলফুল ফুজুল’ সঙ্ঘ। আমাদের বংশীবাদক রাজনীতিতে আসার আগেই গঠন করেছেন ‘মুসলিম সেবা সমিতি’।

পৃথিবীতে যারা অমর তারা ছোটবেলা থেকেই মানুষের ভালোর জন্য, মঙলের জন্য, মানবতার সেবার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তোমরাও চাইলে আমাদের দেশ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারো। যেমন: নিজের এলাকা পরিষ্কার রাখা, সব শিশুকে স্কুলে ভর্তি হতে বলা, রাস্তা-ঘাট, গাছ-পালা যেন কেউ নষ্ট না করে উদ্বুদ্ধ করা। মানুষ যাতে ঝগড়া না করে, খাবারের ব্যাপারে সর্তক করা। অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার না করা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির অপচয় না করা, মিথ্যা কথা নিজেরা না বলা অন্যকেও না বলতে সজাগ করা, মেহমানদারি করা, বড়-ছোট সবার সাথে সদ্ভাব রাখা-এসব তো তোমরা করতেই পারো, তাই না? বঙ্গবন্ধু একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ছিলেন। দেশের মঙল ছাড়া আর কিছু তিনি ভাবতেই পারতেন না। তোমাদেরও উচিত তেমনই দেশপ্রেমিক হওয়া ।

শাহানা সিরাজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top