লালমাটিয়া মহিলা কলেজ – অনিয়মের বরপুত্র অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম

Picsart_22-06-27_13-18-20-633-scaled.jpg

লালমাটিয়া মহিলা কলেজ – অনিয়মের বরপুত্র অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম

অপরাধ প্রতিবেদকঃ অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। প্রেষণ আর লিয়েন মিলিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। যা সরকারি চাকুরি বিধান পরিপন্থী। সম্প্রতি কলেজটি জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার পরিবেশ তৈরি করে নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি।

অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম এখন কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন নেন আড়াই লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে কলেজ ফান্ডের অর্থ ইচ্ছামতো ব্যয় করা, নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা না বাড়ানো ও তাদের হয়রানির অভিযোগ করেছে। শুরুতে প্রেষণে এসে তিনি সরকারি বেতন গ্রহণের পাশাপাশি কলেজ থেকেও বেতন-ভাতা নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষের বাসা ব্যবহার করলেও সরকারিভাবে দেয়া বাসা ভাড়ার টাকা তিনি ফেরত দেননি। শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য গঠিত কল্যাণ ফান্ডে নিজে এক টাকা জমা না দিলেও নিজের চিকিৎসার জন্য নিয়েছেন চার লাখ টাকা। এসব অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। তদন্তও হয়েছে।

তবে এ পর্যন্ত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন অভিযোগের তথ্য প্রমাণের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম অবশ্য সরাসরি কোনো জবাব দেননি। শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে একটি বেসরকারি কলেজে পদায়ন নীতি বহির্ভূত। কিন্তু অধ্যক্ষ রফিকুল এই কলেজে দায়িত্ব পালন করছেন টানা ১০ বছর ধরে। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজ প্রশাসনে এখন স্থবিরতা বিরাজ করছে। ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষক কর্মচারীদের মাঝে।

নথিপত্রে দেখা যায়, গত ১০ বছরে ড. রফিকুল ইসলামকে প্রেষণ ও লিয়েনে লালমাটিয়া কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়নের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৩টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ২০১২ সালের ৯ই জুলাই প্রথম প্রজ্ঞাপনে আর্থিক সুবিধা প্রদানের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘তিনি নিজ বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন-ভাতা গ্রহণ করবেন।

প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিনা ভাড়ায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তিনি বাড়িভাড়া সুবিধা পাবেন না।’ এরমধ্যে ২০১২ সালের ৯ই জুলাই থেকে ২০১৬ সালে ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রেষণ, ২০১৬ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৯শে অক্টোবর পর্যন্ত লিয়েন, ২০২০ সালের ২০শে অক্টোবর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুনরায় প্রেষণ প্রদান করা হয়। বিএসআর পার্ট-১-এর ৩৪ বিধি অনুযায়ী ‘নিজ সার্ভিসের বাইরে ৫ বছরের অধিক কাল থাকলে তিনি সরকারি চাকুরে হিসেবে গণ্য হবেন না। এই চাকরির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার সম্পর্ক ছিন্ন হবে।’ লিয়েন বিধিমালা ২০২১-এর বিধি ১১-এর (ক) অনুযায়ী, ‘একাধারে অথবা বিচ্ছিন্নভাবে সর্বোচ্চ ৫ বছর লিয়েন সংরক্ষণ করা যাবে।’ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক হিসেবে ড. রফিকুল ইসলামের মূল কর্মস্থল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। নথিতে দেখা গেছে প্রেষণে আসার পর তিনি মাসিক ৭৬ হাজার ৬৮৪ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে বেতন নেন। পাশাপাশি কলেজ থেকেও মাসিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা তোলেন।

দুই প্রতিষ্ঠান থেকে এভাবে বেতন নেয়া তার প্রেষণ শর্তের বিরোধী। শিক্ষা ক্যাডারের এই শিক্ষকের প্রেষণ নিয়োগপত্রের ৩নং শর্তে বলা হয়েছে, কলেজ বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে তিনি বাসায় বসবাস করবেন, বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন না। তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষের জন্য নির্ধারিত ডুপ্লেক্স বাড়িতে বসবাস করেন। অথচ রফিকুল ইসলাম মাসিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়িভাড়াসহ আবাসিক সুবিধা ভাতা গ্রহণ করছেন। একই কলেজ থেকে টাকা নেয়ার জন্য তিনি একাধিক হিসাবও খুলেছেন। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত লিয়েনকালীন আড়াই লাখ টাকা বেতন-ভাতা তুলছেন। এ ছাড়া তিনি অভ্যন্তরীণ ফি বণ্টন নাম দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছেন। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন দুই জায়গা থেকে বেতন নেয়ার তথ্য পাওয়ার পর তার সরকারি বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কলেজের বাসায় থেকে বাড়িভাড়া নেয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি ওই বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। নথিপত্রে দেখা যায়, গত বছরের ৩রা আগস্ট চেক নং সিএএল ১৯৩৬৮৮০-এর অনুকূলে আইএফআইসি ব্যাংকের হিসাবে (১০২৫৬৪০৮৬২৮১১) রফিকুল ইসলাম ওই বছরের জুলাই মাসের বেতন-ভাতা বাবদ আড়াই লাখ টাকা নেন। আবার একই বছরের ২৩শে আগস্ট অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফি বণ্টনের নামে নিয়েছেন ১৭ লাখ ৯ হাজার ৩৩ টাকা ৫৫ পয়সা।

কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় আদায়কৃত ফি থেকেই বণ্টনের নামে গত ৯ বছরে তিনি তুলে নিয়েছেন পৌনে ৩ কোটি টাকা। এই টাকার আয়করও পরিশোধ করা হয়েছে কলেজ ফান্ড থেকে। যার পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০০৭ সালের একটি পরিপত্র সংশোধনের মাধ্যমে জারি করা হয়। ২০১৪ সালের ৬ই জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব (অডিট ও আইন অধিশাখা) রঞ্জিত কুমার সেন স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রের শেষ অংশে বলা হয়, ‘পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ প্রতি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানীতে তিনি কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট। রাজধানীর অদূরে সাভারে রয়েছে নিজের, স্ত্রী-কন্যার নামে একাধিক সম্পত্তি। ব্যাংকে কোটি টাকার এফডিআর। করেছেন কোটি কোটি টাকার শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য। তার স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বাদ যাচ্ছেন না পিয়ন চাপরাশিও। অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপকসহ একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে জোরপূর্বক অঙ্গীকারনামা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের দামি গাড়ি নিয়ে চলাচলের সুবিধার্থে কলেজ সংলগ্ন মাঠকে সংকুচিত করে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছেন প্রাইভেট রাস্তা। তার একনায়কতন্ত্র নির্যাতনে তটস্থ কলেজের দায়িত্বরত সিনিয়র শিক্ষক থেকে শুরু করে পিয়ন-ঝাড়ুদার সকলেই। কথার অবাধ্য হওয়ায় একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর গলা চেপে ধরা, শিক্ষকদের গালিগালাজ, চাকরিচ্যুত করার হুমকির অভিযোগ রয়েছে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

তিনি ২০২১-২২ করবর্ষে সর্বমোট বার্ষিক বেতন বাবদ ৪২ লাখ ৯ হাজার ৭৬৯ টাকা ও ব্যক্তিগত আয়কর পরিশোধ করতে কলেজ ফান্ড থেকে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ২৮১ টাকা নিয়েছেন। গত বছরের ৩০শে জুন পৃথক তিনটি বিলের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা বণ্টন বাবদ নিয়েছেন ৯ লাখ ১৮ হাজার ৯৫.৭৮ টাকা। বহিঃপরীক্ষার বণ্টন বাবদ ৩০টি পরীক্ষায় নিয়েছেন ৯ লাখ টাকা।

২০২১-২২ করবর্ষে সর্বমোট ৬৯ লাখ ১৪ হাজার ১৪৫ টাকা নিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারি আদেশ ও বিধি অমান্য করে দুই দপ্তর থেকে বেতন ও ভাতা এবং ব্যক্তিগত আয়করের অর্থ গ্রহণ সরাসরি দুর্নীতি বলে কলেজ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কলেজ ফান্ড থেকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা চিকিৎসা খরচ হিসেবে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজে অস্বাভাবিক বেতন-ভাতা গ্রহণ ও কলেজের তহবিল লুটপাট করলেও কলেজের সকল শিক্ষকদের বেতনের ইনক্রিমেন্ট গত ১০ বছর ধরে বন্ধ রেখেছেন। অভিযুক্ত রফিকুলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ বন্ধ রাখতে শিক্ষকদের বিভিন্ন সময় হুমকি প্রদানের মাধ্যমে ৬০টি মুচলেকা নিয়েছেন।

সরকারি কর্মকর্তা হলেও সাভারের বরদেশীতে নিজ নামে ৭ শতাংশ ও মেয়ের নামে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকারও বেশি। এছাড়া উদায়চল বহুমুখী সমবায় সমিতিতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার প্লট, আকাঙ্ক্ষা ডেভেলপার্স লিমিটেডে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫৩ টাকার ফ্ল্যাট, জাতীয় গৃহায়ণ কর্র্তৃপক্ষের প্রকল্পে ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ৬শ’ টাকার ফ্ল্যাট, সাফা গ্রীণ সিটিতে ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার প্লট, জি.পি.এফ এ ৬৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৬ টাকার প্লট ক্রয় করেন তিনি।

২৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয়, মেয়ের নামে ৩২ লাখ টাকার এফডিআর, পেনশন সেভিং স্কিমে ১০ লাখ টাকা, স্ত্রীকে ধার হিসেবে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, মাছের খামারে ১১ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে তার। জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন ১৫ লাখ টাকা, ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ২ হাজার স্কয়ার ফিটের আড়াই কোটি টাকায় ফ্ল্যাট ক্রয়ের বিষয়টি গোপন রেখে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া আয়কর রিটার্নে তিনি নগদ প্রায় ৯ লাখ টাকাসহ মোট সম্পদ দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৯০ লাখ ৫ হাজার ১৯১ টাকা।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১২৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। ২০১৭ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ বন্ধ ও স্থগিত থাকার পরেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এই সময়ে ৫৫ জন শিক্ষককে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষকেরই শিক্ষক নিবন্ধন নেই। বর্তমানে সরকারি করণের প্রক্রিয়ায় থাকা কলেজটির এমপিওভুক্ত শিক্ষক ১৮ জন ছাড়া বাকি ননএমপিও ৬০ জন শিক্ষক এবং ৫৫ জন এডহক ও খণ্ডকালীন শিক্ষক যাদের অনেকের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নিয়োগ নিষেধাজ্ঞার পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ই জুন গণিত, ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং আইনসহ মোট ৭টি বিষয়ে ৭ জন করে ৪৯ জন প্রভাষক, অস্থায়ী শিক্ষক ও খণ্ডকালীন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি একটি দৈনিক পত্রিকায় জারি করেন। এক্ষেত্রে শিক্ষক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও অজ্ঞাত কারণে তা চাওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া ৫৫ জন শিক্ষকের অধিকাংশেরই নিবন্ধন নেই। এছাড়া ২০১৯ সালের ৫ই মার্চ প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের জন্য নিয়োগ, পদোন্নতি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ পরিদর্শন প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অনুরোধ করা হয়। তখন থেকেই শুরু হয় তার দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম। দেয়া হয় পুরনো তারিখে স্বাক্ষর দিয়ে এডহক নিয়োগপত্র। পারিবারিকভাবে সখ্যতা থাকায় এমপিওভুক্ত কলেজে প্রথম নিয়োগের বা এন্টি পোস্ট প্রভাষক হলেও মো. এনায়েত উল্ল্যাকে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক পদে সরকারের বিধি-বিধান উপেক্ষা করে নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়া বিবিএ প্রফেশনালের আরেক শিক্ষিকাকে কোনো শিক্ষক নিবন্ধন সনদ এবং পরীক্ষা ছাড়াই মার্কেটিং বিভাগে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকেও অনিয়ম করে নিয়োগ দেয়া হয়। এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে এখন তিনি বিভাগীয় প্রধান হয়েছেন।

এছাড়া এই বিভাগের আরও ৫ জন শিক্ষককে অনিয়ম করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের কেউ এডহক, কেউ খণ্ডকালীন ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করা ফারহানা মান্নান রুম্পাকে মার্কেটিং বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঝুমারানী প্রথম হলেও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অজ্ঞাত কারণে ফারহানা মান্নানের মার্কেটিং বিষয়ে কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ রফিকুলের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩শে অক্টোবর আদালতে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষক। মামলা নম্বর ৪৭৭। লালমাটিয়া কলেজের গণিত বিভাগের ভুক্তভোগী প্রভাষক কৌশিক চন্দ্র ঢালী তার এই অভিযোগপত্রের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ২০১৮ সালের ১৩ই অক্টোবর তাকে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের গণিত পদে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগপত্র পাওয়ার পরদিন গণিত বিভাগে পূর্ণকালীন প্রভাষক পদে যোগদান করি। এর এক মাস পর ১৬ই নভেম্বর অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম কলেজের সভাপতির স্বাক্ষরসহ গণিত বিষয়ে মাস্টার্সকোর্স চালুর জন্য আমার বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকারনামা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করে। পরবর্তীতে আমার কাছে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি।

অধ্যক্ষ রফিকুলের দাবিকৃত অর্থ প্রদান না করায় আমার নাম জাতীয়করণের তালিকায় পাঠানো হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বেতন-ভাতা প্রদান করছেন না। ভুক্তভোগী এই শিক্ষক এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, মন্ত্রণালয় এবং সচিবালয়সহ একাধিক স্থানে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে একটি বেসরকারি কলেজে নামমাত্র বেতনে শিক্ষকতা করছি। আমাকে যতই হুমকি প্রদান ও ভয় দেখানো হোক না কেন ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আরও একাধিক শিক্ষক জানান, তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তাদের প্রমোশন থেকে শুরু করে বেতন কমিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ২৬ জন শিক্ষক মিলে চলতি বছরে আদালতে সঠিক বেতন-ভাতার দাবিতে একটি রিটপিটিশন করেন।

তাদের আইনজীবী বাকীর উদ্দিন বলেন, গত মে মাসে ২৬ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে আমরা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছি। শিক্ষকদের বেতন অর্ধেক করে দেয়া এবং সবাইকে একসঙ্গে লেকচারার পদবি করে দেয়া দু’টি বিষয় উল্লেখ করে আমরা আদালতে রিট করেছি। এটি চলমান রয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো নানা ধরনের। কিছু অভিযোগ মন্ত্রণালয় ও হিসাবরক্ষণ দপ্তর তদন্ত করছে। আর আমাদের কাছে যে অভিযোগ এসেছে এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। এর আগেও অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছে। আর্থিক সংক্রান্ত বিষয়টি মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে। তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা মনে করি কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না। অভিযোগের বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, এসব বিষয়ে তিনি কথা বলতে বাধ্য নন।

তবে সচেতন মহল বলেন, দুদক যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম একই অভিযোগে অভিযুক্ত। তাহলে সরকারী অর্থআত্মসাৎ, দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতা নেওয়া, নিয়োগ বানিজ্য সহ সকল অপকর্মের তদন্ত দুদক করতে পারে। কেন করছে না?

আরও সংবাদ পড়ুন।
https://wnews360.com/archives/51216

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top