ডিসি সুলতানার বিরুদ্ধে সাংবাদিক আরিফের করা মামলার তদন্তে পিবিআই

Picsart_22-05-16_10-15-38-769.jpg

ডিসি সুলতানার বিরুদ্ধে সাংবাদিক আরিফের করা মামলার তদন্তে পিবিআই

অপরাধ প্রতিবেদকঃ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে মোবাইল কোর্টের নামে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন ও জেলা প্রশাসনের সাবেক তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দফতর এই নির্দেশ দেয়। পিবিআই রংপুরের পরিদর্শক ও মামলার নবনিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাংবাদিক আরিফ বলেন, ‘ঘটনার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট মামলায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে মামলার তদন্ত কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করেছে বলে মনে হয়েছে। এ জন্য মামলার সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর আবেদন করেছিলাম। পুলিশ সদরদফতর আমার আবেদন মঞ্জুর করেছে। আশা করছি, পিবিআই সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত থেকে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করবে এবং দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দেবে।’

‘সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ এবং নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের সঙ্গে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়াও জরুরি। কারণ নির্যাতনের শিকার প্রথম সাংবাদিক আমি নই, আবার শেষও নই। সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন চিরতরে বন্ধ হওয়ার স্বার্থে এই মামলার বিচার সম্পন্ন করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’ যোগ করেন আরিফ।

বাদীর আইনজীবী সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে পিবিআই অধিকতর স্বচ্ছ ও সক্ষমতা সম্পন্ন। ইতিমধ্যে সাংবাদিক আরিফের ওপর নির্যাতনের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট (এমসি) জমা পড়েছে। প্রত্যাশা করি, আইনের শাসনের স্বার্থে পিবিআই সব ধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবে।’

মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৭ এপ্রিল কুড়িগ্রাম সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে পিবিআই মামলার ফাইল গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে আমরা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি।’

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্য রাতে সাংবাদিক আরিফকে মোবাইল কোর্টের নামে নিজ বাড়ি থেকে ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে জেলা শহরের ধরলা ব্রিজের পূর্ব পাড়ে নেওয়া হয়। পরে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ওই সময়ের আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম ও মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাসহ জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা। আরিফের বাড়িতে কোনও তল্লাশি না চালালেও তার কাছ থেকে আধা বোতল মদ ও ১৫০ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে মোবাইল কোর্টে সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মধ্য রাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমে এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় পরদিন ঘটনাস্থলে যান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

১৫ মার্চ পরিবারের আবেদন ছাড়াই আরিফের জামিনের ব্যবস্থা করে জেলা প্রশাসন। কারামুক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন ভুক্তভোগী। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সে বছর ৩১ মার্চ মামলা রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আরিফকে দেওয়া সাজা স্থগিত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top