কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মের ন্যূনতম উপস্থিতি বরদাশত করব না – প্রধান বিচারপতির হুঁশিয়ারি

Picsart_22-04-14_13-26-34-235.jpg

কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মের ন্যূনতম উপস্থিতি বরদাশত করব না – প্রধান বিচারপতির হুঁশিয়ারি

আদালত প্রতিবেদকঃ কোনো কোনো অসাধু কর্মকর্তা, বেঞ্চ অফিসার, সেকশন অফিসার, সুপারিনটেনডেন্ট বা সহকারী বেঞ্চ অফিসারের কারণে বেঞ্চের (আদালত) পর্যন্ত বদনাম হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, ‘এটি কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না।’

সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আজ বুধবার বিকেলে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার ও সেকশন সুপারদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে সমাগত বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমার–আপনার বেতনের সংস্থান হচ্ছে। অসহায় বিচারপ্রার্থীর কোনো বিষয় আপনার সামনে এলে ধরে নেবেন, আপনাদের বেতন তাঁদের ট্যাক্সের পয়সায় জোগান হচ্ছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করব, অন্যরা যা–ই করুক, আপনারা অন্তত তাঁদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করেন। ভালো কাজটা কি আপনাকে দিয়েই শুরু করা যায় না?’

প্রধান বিচারপতি বলেন, যিনি যে কাজের জন্য উপযুক্ত, তাঁকে সেই পদে পদায়ন করা হবে। অদক্ষ ও চাটুকারদের মাধ্যমে সুদক্ষ প্রশাসন পরিচালনা কিংবা যথাযথ মানে সেবাদান নিশ্চিত করা একদমই সম্ভব নয়।
‘সুপ্রিম কোর্টে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার ও সেকশন সুপারদের নিয়ে সচেতনতামূলক’ এ কর্মশালার আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, এখানকার কতিপয় বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার, সেকশন সুপারসহ বেঞ্চ ও সেকশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার জন্য তাঁদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তাঁদেরকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছি, যদি আমার নোটিশে আসে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন—এগুলো কোনোভাবেই বরদাশত করব না।’

সুপ্রিম কোর্টের সব কর্মকর্তা–কর্মচারীর উদ্দেশে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিতে চাই, এই পবিত্র আদালত দেশের মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। এখানে কোনো প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়মের ন্যূনতম উপস্থিতি আমরা বরদাশত করব না। সুপ্রিম কোর্টের সব শাখার অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, অলসতা ও অযোগ্যতা নির্মূল করতে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে আমি কোনো কুণ্ঠাবোধ করব না।

কোনো প্রকার দুর্নীতি, অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখায় মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদায়ন করা হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, যিনি যে কাজের জন্য উপযুক্ত, তাঁকে সেই পদে পদায়ন করা হবে। অদক্ষ ও চাটুকারদের মাধ্যমে সুদক্ষ প্রশাসন পরিচালনা কিংবা যথাযথ মানের সেবাদান নিশ্চিত করা একদমই সম্ভব নয়। উল্টো এঁরা নানা চোরাপথে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা বিনষ্ট করেন।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসার ফারাহ মামুন।

বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার, সেকশন সুপার ও সহকারী বেঞ্চ অফিসারদের সত্যাশ্রয় ও শুদ্ধাচার, সবার প্রতি সম–আচরণ, সবাইকে আপন করে নিয়ে টিম হিসেবে কাজ করা, ইতিবাচক ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার না করা, সময়মতো অফিসে আসা, অধীন কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করা এবং অন্যদের কাজ শেখানোর মানসিকতা লালনের ওপর গুরুত্ব দেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, ‘তাহলে শুধু আমি না, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারপতি তাঁদের পেছনে থাকবেন। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যে একজন বেঞ্চ অফিসার বা বেঞ্চ রিডারের দুর্নীতির কারণে জুডিশিয়ারির বদনাম হয়ে যায়। এই বদনাম কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top