বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহবান জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
বিশেষ প্রতিবেদকঃ ‘এসো বই পড়ি, পুরস্কার জিতি’ শ্লোগানে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ।
আজ বিকালে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আলোক উজ্জ্বল উপস্থিতিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি ছিলেন। আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন,
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। সেইসাথে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করে যাচ্ছেন তা জানতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের সামনে মিথ্যায় ভরা তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। ইতিহাস নিজের গতিতে চলে। নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জেনে কারা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক ছিল, কারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, এসব বিষয় জেনে তারা তাদের বিচার বুদ্ধি দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে।
ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে, তাঁর ত্যাগের কথা জানতে হবে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য ভালবাসার কথা জানতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলেছেন। যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আজ তারা এখানে উপস্থিত। তোমাদেরকে জানতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে কোন পর্যায় থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, আমাদেরকে স্বাধীনতার জন্য হাজার বছর ধরে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমানের ক্ষত নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে একজন বঙ্গবন্ধুর জন্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের ক্ষত থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিদাতা, ত্রাণকর্তা। তিনি আমাদেরকে স্বল্প সময়ে একটি পতাকা, একটি দেশ, একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ, আত্মমর্যাদাশীল জাতির জন্য লড়াই করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ আমরা দারিদ্র জয়ের দ্বার প্রান্তে। আজ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, এসডিজি অর্জন এমন কোন সামাজিক দিক নেই যেখানে আমরা আলোচিত হচ্ছি না। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ বঙ্গবন্ধু দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন।
আইজিপি বলেন, আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে যত বেশী চর্চা করবে আমাদের পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম তত বেশী সুদৃঢ় হবে। আর যত বেশী পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম সুদৃঢ় হবে দেশ তত এগিয়ে যাবে।
আইজিপি বলেন, পরিবর্তনের জন্য বেশী মানুষের প্রয়োজন হয় না। যে দশ হাজার শিক্ষার্থী কুইজে অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্য থেকে দশ জন বের হয়ে আসলেই দেশ বদলাতে পারবে।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতি গঠনের জন্য মানুষকে তৈরি করেছেন, ধাপে ধাপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সন্তানদের গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার এ প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখন পড়ার অভ্যাস কমে গেছে। পড়তে হবে প্রশান্তির জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য পড়তে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ আজ মর্যাদার আসনে রয়েছে। জনগণের সম্মানের জায়গাটা তারা অর্জন করতে পেরেছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর বই পড়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরীক্ষার্থী হওয়ার জন্য পড়া নয়, পড়া হোক শিক্ষার্থী হওয়ার জন্য।
বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১০০ তে ১০০ নম্বার পেয়েছে ৪৩৯ জন। এ ৪৩৯ জনকেই পুরস্কৃত করা হয়েছে। তন্মধ্যে লটারির মাধ্যমে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১০ জন এবং একাদশ থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ে ১০ জন নির্বাচিত করা হয়।
পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শেখ মোঃ তাসনিম ফাহিম রহমান এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোসাম্মৎ তানিয়া খাতুন বক্তব্য রাখেন।
পরে প্রধান অতিথি ও অতিথিরা বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।