জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদকঃ জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। এর মধ্যে বেশি শোনা গেলো—তারা জেলার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্মান করেন না। এমপিদের সঙ্গে সমন্বয়ও করেন না। এ ছাড়া প্রবাসীরা তাদের কাছ থেকে সময়মতো সেবা পান না। মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধেও ডিসিরা আন্তরিক নন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২-এ এমন অভিযোগ তোলেন কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত জেলা প্রশাসকরা হচ্ছেন বাংলাদেশের জেলার প্রধান প্রশাসনিক ও ভূমি রাজস্ব কর্মকর্তা। তারা একাধারে জেলা প্রশাসক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা কালেক্টর ও ডেপুটি কমিশনার। একইসঙ্গে জেলার আইনশৃঙ্খলা, ভূমি প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় এবং সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তারা। অভিযোগ উঠেছে এতসব সম্পৃক্ততা রাখতে গিয়ে অনেক কাজ সময়মতো করেন না তারা। অনেক সময় কাজ এড়িয়েও যান।
কয়েকজন সংসদ সদস্যের অভিযোগ— রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বা প্রটোকলের বিচারে একজন সংসদ সদস্য জেলা প্রশাসকেরও ওপরে। তবে ডিসিরা কাজ করার ক্ষেত্রে এমপিদের পরামর্শ খুব একটা নেন না। এমনকি ডিসিদের পিয়নরাও তাদের দাম দেন না বলে অভিযোগ এমপিদের।
২০ জানুয়ারি ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশের প্রায় এক কোটিরও বেশি প্রবাসী। তারা সঠিক সময়ে পাসপোর্ট পান না, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হয় না, সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায়, সময়মতো ম্যারিজ সার্টিফিকেট, বার্থ সাটিফিকেট পান না। বিদেশ থেকে মরদেহ আনতেও দরকারি তথ্যসেবা পান না। এ ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট বা এনআইডি দেয় না। এগুলো সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠায় এই মন্ত্রণালয়। সেগুলো পেতে দেরি হয়ে যায়। জেলা প্রশাসকরা এসব ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আমরা ডিসিদের বলেছি এ দেশের বড় সম্পদ হচ্ছে মানুষ। এ মানুষগুলোর কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন যে কাজ নিজেরাই করতে পারে, অনেক সময় সে কাজগুলো তারা ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। দায়িত্ব এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে তারা সজাগ হবেন।’
এ প্রসঙ্গে বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জন জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘দায়িত্বের প্রতি আমরা সচেতন ও আন্তরিক। একজন ডিসি জেলায় প্রায় ২৬৫ ধরনের কাজ করেন। এরপরও এত অভিযোগ! এ নিয়ে মন্তব্য করবো না।’
একজন জেলা প্রশাসক জেলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধি। তিনি সরাসরি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগকারী ক্ষমতাপ্রাপ্ত জেলার একমাত্র কর্মকর্তা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে কাজ করেন ডিসি। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডার— বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের সদস্য। জেলার প্রধান প্রটোকল অফিসারও তিনি।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডার হতে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সরকারের উপসচিবদের মধ্য থেকেই জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স, ১৯৮৬ অনুসারে উপসচিবের পদমর্যাদার ক্রম ২৫ হলেও জেলা প্রশাসকের ক্রম ২৪।
ডিউটিস অব চার্টার অনুযায়ী জেলা প্রশাসক জেলার বিভিন্ন দফতর সম্পর্কিত ১২০টি কমিটির সভাপতি।
জেলায় অবস্থিত প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অফিস জেলা প্রশাসনের অংশ এবং জেলা প্রশাসকের সাধারণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।
জেলা পর্যায়ের এনজিও বিষয়ক সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের কাজও করেন তারা।
আইনশৃঙ্খলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, বিনোদন, শিক্ষা, বিজ্ঞান, কর্মসংস্থান, নারী ও শিশু, ধর্ম, পাঠাগার, দুর্যোগ ও ত্রাণ, কৃষি, প্রাণী, সার ও বীজ এসবের তত্ত্বাবধানও তাদের আওতায় পড়ে।
এ ছাড়া ডিসিদের আরেকটি কাজ হলো ১৫ দিন পর পর পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন সরকারের কাছে পাঠানো।