মনে রাখবেন, জনগণের টাকায় সংসার চলে – ডিসিদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
প্রধান প্রতিবেদকঃ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, জনগণের করের টাকায় আমলাদের বেতন হয়। জনগণের টাকাতেই সংসার চলে। আমলাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সেবা পাওয়া জনগণের অধিকার, এটা কোনও দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজ আমি রাষ্ট্রপতি, আপনারা সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক হয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন তো দেশ স্বাধীন না হলে আমরা কে কী হতে পারতাম?’ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকার ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা, আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন। মনে রাখতে হবে, জনগণের টাকাতেই আমাদের সংসার চলে। তাই জনগণকে সেবাদান কোনও দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়। সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার।’
নিজের বক্তব্যে আমলাদের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, ‘আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন।’
ভূমি ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা খুব বেশি ও সরাসরি। গ্রামীণ বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমার বেশিরভাগই জমিজমা সংক্রান্ত। তাই দক্ষ, আধুনিক, জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনগণকে আরও দক্ষতার সঙ্গে ভূমি বিষয়ক সেবা প্রদানে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
মো. আবদুল হামিদ যোগ করেন, ‘ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। কিন্তু ভূমি রেকর্ডের সময় একশ্রেণির অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল চক্রের সহযোগিতায় অনেক অনিয়ম করছে এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে জনভোগান্তি বেড়েছে। তাই এসব ব্যাপারে আপনাদের কঠোর হতে হবে এবং যেকোনও অনিয়ম বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি, ‘জেলা ও উপজেলা সদরে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এসব দেখার কেউ নেই। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষায় কঠোর হতে হবে। এটা করতে পারলেই উন্নয়ন সুষম ও জনমুখী হবে।’
প্রশাসনের সব স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, ‘দুর্নীতি উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বিরতির পর এবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই আয়োজন উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়াও বক্তৃতা রেখেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান। সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।
২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা মিলনায়নে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন হতো। এরপর তাদের অধিবেশন হয়েছে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে। জেলা প্রশাসকরা প্রতিবার বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসমাগম কমাতে এবার ভার্চুয়াল আয়োজন করা হয়েছে।