চট্টগ্রামের সাথে আকাশপথে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় বরিশাল
ব্যুরো অফিস বরিশালঃ অগণিত মানুষের দাবি আর কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতির পরও চালু হচ্ছে না বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের বিমান সার্ভিস।
চলতি বছরের মার্চে যশোর-চট্টগ্রাম রুটে বাংলাদেশ বিমানের সার্ভিস চালুর ঘোষণা আসার পর এই অঞ্চলের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যশোর-চট্টগ্রাম রুটের সঙ্গে বরিশালকেও সংযুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্তাব্যক্তিরা। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ তো দূরের কথা, যশোর-চট্টগ্রাম রুটেই বিমানের সার্ভিস চালু করতে পারেননি তারা।
অথচ বিমানের তুলনায় দেড়গুণ বেশি ভাড়ায় একই রুটে এরই মধ্যে সার্ভিস চালু করেছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা। বলাবাহুল্য, এই সার্ভিসেও সংযুক্ত হয়নি বরিশাল। ফলে অধরাই রয়ে গেছে বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম কিংবা যশোরে আকাশপথে যাওয়ার স্বপ্ন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআই পরিচালক নিজামউদ্দিন বলেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে বর্তমানে দৈনিক ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটই চলাচল করছে যাত্রী পরিপূর্ণ অবস্থায়। এক যুগ আগেও যেখানে এই রুটে ছিল যাত্রী সংকট সেখানে এখন ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েও চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। একই পরিস্থিতি চট্টগ্রাম অভিমুখী যাত্রা প্রশ্নেও। সাধারণ মানুষের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথে জাহাজ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। অথচ বিমান সার্ভিস প্রশ্নে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখছি না আমরা।
করোনা মহামারির কারণে মাঝে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের মার্চে পুরোনো দুটির সঙ্গে নতুন দুটি ড্যাস-৮ এয়ারক্র্যাফট নিয়ে ফের দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ বিমান। দেওয়া হয় যশোর-চট্টগ্রাম রুটে বিমানের সার্ভিস চালুর ঘোষণা। ৩১ বছর পর এই রুটে ফের বিমানের সার্ভিস চালুর ঘোষণায় খুশি হন যশোর-খুলনার মানুষ। করোনা মহামারির কারণে বন্ধ থাকার পর নতুন করে ফ্লাইট চালুর প্রাক্কালে ২৬ মার্চ বরিশালে আসেন বিমানের এমডি এবং পরিচালক প্রশাসন। যশোর-চট্টগ্রাম রুটে বিমান সার্ভিস চালুর বিষয়টি বরিশালের একটি হোটেলে স্থানীয় সুশীল সমাজসহ নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠকেও তারা জানান। সে সময় তাদের কাছে ফের দাবি জানানো হয়, এই রুটের সঙ্গে বরিশালকে সংযুক্ত কিংবা বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বিমানের সার্ভিস চালুর। রুটটি চালুর যৌক্তিকতাগুলোও তুলে ধরা হয় তাদের কাছে। সবার বক্তব্য শোনার পর দাবির প্রতি নীতিগত সমর্থন জানান বিমানের এমডি ও পরিচালক। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই রুটে সার্ভিস চালুর প্রতিশ্রুতিও দেন তারা। পরে ২৮ নভেম্বর ঘোষণা হয় যশোর-চট্টগ্রাম রুটে বিমান পরিচালনার শিডিউল। মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার যশোর থেকে চট্টগ্রাম এবং রবি ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দেয়। এই রুটে এক পথে যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করা হয় জনপ্রতি চার হাজার ২০০ টাকা। ঘোষিত এই শিডিউলে বরিশালকে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে জানতে চাইলে সে সময় বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘বরিশাল-চট্টগ্রাম আকাশপথের দূরত্ব নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ করার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।’ পরে অবশ্য করোনার সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়াসহ নানা কারণে যশোর-চট্টগ্রাম রুটে সার্ভিস চালু করতে পারেনি বিমান।
বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে আকাশপথে সৈয়দপুরের দূরত্ব ১৪২ এরোনটিক্যাল মাইল। তাদের ভাড়া যেমন ৩২০০ টাকা থেকে শুরু তেমনি মাত্র ৬৭ এরোনটিক্যাল মাইল দূরত্বের ঢাকা-বরিশাল রুটেও সমান হারে ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করি আমরা। এ নিয়ে কখনোই কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বিমানের সার্ভিস চালু হওয়া বর্তমানে আমাদের জন্য এতটাই জরুরি যে শুরুতে সম্ভাব্য লোকসান এড়াতে কর্তৃপক্ষ যদি ভাড়া একটু বেশি নেয় তাও মেনে নেব আমরা।’
বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, যশোর-বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বিমানের সার্ভিস চালু করার কথা বহু আগে থেকেই বলে আসছি আমরা। এটি চালু হলে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা-কক্সবাজার, সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম-মোংলা-পায়রা এবং স্থলবন্দর ভোমরা ও বেনাপোলের সঙ্গে একটি সহজ যোগাযোগের পথ হবে। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আসার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পসহ ব্যবসা বাণিজ্যেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে। তাছাড়া বরিশাল-চট্টগ্রাম এবং খুলনার মধ্যে সহজে যোগাযোগ করা গেলে এই তিন প্রশাসনিক বিভাগও উন্নয়ন প্রশ্নে অনেকটাই এগিয়ে যাবে।
বিমানের পরিচালক বিক্রয় ও বিপণন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বরিশাল-চট্টগ্রাম রুট কিংবা যশোর-চট্টগ্রাম রুটে বরিশালকে সংযুক্ত করার বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় আছে। ইতোমধ্যে ৭ অক্টোবর থেকে সৈয়দপুর-কক্সবাজার রুটে বিমান চালু করেছি। করোনা মহামারি সহ নানা কারণে ঘোষণা দিয়েও যশোর-চট্টগ্রাম রুটে চালু করা যায়নি বিমান। তবে বর্তমানে যেভাবে কাজ চলছে তাতে শিগগিরই যশোর-চট্টগ্রামের পাশাপাশি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটেও বিমানের সার্ভিস চালু করতে পারব বলে আশা করছি।