দৌলতখানে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম
বিধবা সেজেঁ গৃহবধূ পেলেন ঘর, মৃত স্বামী করলেন বিক্রি
উপজেলা প্রতিনিধিঃ মুজিবর্ষে একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ এ নির্দেশনা অনুযায়ী ভোলার দৌলতখানে প্রথম পর্যায়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন ৪২টি পরিবারে মাঝে দুই শতক খাস-জমিসহ সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়।
এতে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে স্বচ্ছল ব্যক্তির নামে ঘর বরাদ্ধ ও ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও এ উপজেলায় সাদিয়া আফরোজ লিমা নামে এক গৃহবধূ তার জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মুজিববর্ষে’র প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাওয়ার অভিযোগ আছে।
পরবর্তীতে ওই গৃহবধূর স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা মুজিবর্ষের ঘরটি পারভীন নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেন। এমন কি সহকারি শিক্ষা অফিসারে’র বাবার নামেও এ উপজেলায় ঘর বরাদ্ধ আছে।’
দুই শতক সরকারি খাস-জমি’র উপর নির্মিত সেমিপাকা প্রথম পর্যায়ের প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ১লাখ ৭১হাজার টাকা।
দু্ই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরের সঙ্গে একটি রান্না ঘর, একটি সংযুক্ত টয়লেট ও ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রাখা হয়েছে। গত (২৩ জানুয়ারী) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গনভবন থেকে দেশের ৬৪ জেলার ৪৮২টি উপজেলার সাথে সংযুক্ত হয়ে ৬৯হাজার ৯শত ৪জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারে মাঝে প্রথম পর্যায়ে এ ঘর গুলো হস্তান্তর করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দৌলতখান উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৪২টি হস্তান্তর করা হয়। তবে এ উপজেলায় ৪২টি ঘরের মধ্যে একটি ঘর কাগজে কলমে হস্তান্তর দেখানো হলেও ঘরটি ৬ মাস ধরে এখনও নির্মাণ অসম্পূর্ণ আছে।’
দৌলতখান উপজেলার চরপাতা হাই স্কুল সংলগ্ন পেধা বাড়ির দরজায় ১০টি গৃহনির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নাজমা বেগম নামে এক গৃহহীন নারীর নামে মুজিবর্ষের প্রথম পর্যায়ের একটি ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়। তবে ঘরটি কাগজে কলমে হস্তান্তর দেখানো হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
হস্তান্তরের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ঘরটি অনিয়মের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িঁয়ে আছে। ঘরের চালে টিন না থাকায় বৃষ্টিতে ঘরটির নিমার্ণে ব্যবহৃত নির্মাণ উপকরণ গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়ার কথা থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভূমির মালিকরা ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরাই পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এসব ঘর।’
ঘর নিমার্ণের কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিল উত্তোলন করেছেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার হোসেন। এ ছাড়াও তার গাড়ি ‘চালক’ ও গৃহপরিচারিকা নামেও দুটি ঘর বরাদ্ধ রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা ভূমি অফিসের নাজিরের দুজন গৃহপরিচারিকার নামেও দুটি ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তবে আরও নামে বেনামে ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।’
এ ছাড়াও সুবিধাভোগীরা জানান, এসব ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী। যার ফলে কিছু কিছু ঘরে ইতোমধ্যেই জানালা কপাট ছুটে পড়ছে, টয়লেটগুলে হয়ে পড়ছে ব্যবাহরে অনুপোযুগী , এমনকি টয়লেটের প্যান বসানো হয়েছে পূর্ব পশ্চিম দিকে যার ফলে ব্যবহার করতে পরাছেন না তারা। অনেকের দাবি ঘরগুলো নির্মাণের সময় তাদের নিজেদের অর্থের মাধ্যেম হাজার হাজার টাকার বালি ক্রয় করে ভিটা বরাট করেছেন।
ইটবালি পরিবহনের খরচও নিজেরা বহন করেছেন বলে জানান অনেকে। এছাড়াও প্রকৃত সুবিধাভোগীরা ঘর না পেয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা ঘর পাওয়ায় এসব ঘরে বসবাস করছেন না অনেকেই। ঘর নির্মাণের জন্য দুশতক সরকারি খাস-জমি বরাদ্ধ দেয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ঘরই নির্মাণ করা হয়েছে নিজস্ব ক্রয়কৃত জমিতে।
এ ব্যাপরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আনসার আলী জানান, ‘ঘর নির্মাণের ব্যাপারে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার কাজ হচ্ছে ডিজাইন অনুযায়ী শ্রমিকদেরকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া। এসব ঘরের বরাদ্ধেরও কোন কাগজপত্র আমার কাছে নেই। সাবেক ইউএনও কাওসার হোসেন স্যার কাজগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।’
এ বিষয় জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক -ই-লাহী চৌধুরী জানান, ‘ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’