ভোলা জেলায় ধুকছে ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো; জনগণের দূর্ভোগ চরমে

PicsArt_06-29-11.37.10-scaled.jpg

ভোলা জেলায় ধুকছে ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো; জনগণের দূর্ভোগ চরমে

সাগর চৌধুরীঃ জনবল সল্পতা ও দক্ষ জনবলের অভাবে ভোলা জেলায় সরকারের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে গতিশীল করা যাচ্ছে না।

দ্বীপ জেলা ভোলার চারপাশে নদী বেষ্টিত হওয়ার কারণে এবং ভূতাত্ত্বিক কারণে একদিকে মানুষের বসত বাড়ি সহ ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে নদীর গর্ভে অন্য দিকে পলি জমে নতুন নতুন চর জাগছে। যা একদিকে নতুন আশার সঞ্চয় হচ্ছে কিন্তু অন্য দিকে ভূমি সেবা পেতে নাজেহাল হচ্ছে এই জেলার সাধারণ মানুষ।

ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরকারী নথিভুক্ত ৭২ টি চর ছাড়াও প্রায় ১০০ উপরে নতুন চর জেগেছে। তবে নতুন চর ছাড়াও অন্য জেলাগুলোর চেয়ে এখানে ক্রমবর্ধমান ভূমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা দিন দিন বেড়েই চলছে।

চলতি বছরের করোনা কালিন সময় ছাড়াও বিগত বছরগুলোর দিকে তাকালেই সহজেই তা অনুমান করা যায়। ফলে এখানকার সাধারন মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলছে।

একদিকে নদীর ভাঙ্গনে ঘড়বাড়ি – ফসলি জমি হারিয়ে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ অপর দিকে নতুন চর ও খাসজমি ভূমি দস্যু ও ভূমি খেকোদের দখলে থাকার কারণে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এখানকার ভূমি ব্যবস্থপনার ক্ষেত্রে সঠিক লোকবল বা দক্ষ জনবল না থাকার কারণে ভূমিহীন ও অসহায় মানুষের নিরব কান্না কেউ দেখে না। নদীর তীরবর্তী জেলে পরিবার গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় একখন্ড জমির অভাবে তারা কোথায় বসবাস করছে!
তাছাড়া খেটে খাওয়া মানুষের থাকার একটুকরো জমির জন্য সরকারি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুড়ছে ভূমিহীন মানুষ।

দ্বারে দ্বারে ঘোরা এই মানুষগুলো তাহলে কোথায় সেবা পাবে? ডিসি অফিসে? ইউনো অফিসে? নাকি এসিল্যন্ড অফিসে!

সরকারের ভূমি রাজস্ব আদায় করা সহ ভূমি ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার ভূমিকা অপরিসীম। সরকারের ভূমি রাজস্ব আদায়, সরকারী ভূমি রক্ষা, ভূমিদস্যু ও ভূমিখেকোদের হাত থেকে সরকারের ভূমি রক্ষ করা সহ সরকারী মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বা তহশিলদারের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু রাজস্ব আদায় থেকে শুরু করে সরকারের সম্পত্তি ভূমিখেকো ও ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বা সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা জীবন পন দায়িত্ব পালন করেন।

লোকবল কম কিন্তু রাজস্ব আদায়ে শত ভাগ নিশ্চিত কিভাবে করলেন? এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে এক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বলেন, কি বলব স্যার। আমাদের সিনিয়র স্যারদের নির্দেশ পালন করতে রাতদিন কাজ করতে হয়েছে। একজন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার একাধিক ইউনিয়ন ভূমি আফিসের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এমনকি তিন চার ইউনিয়নের ভূমি অফিসের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এতে করে আমরা শারিরীক ও মানুষিক চাপে পড়ে বাধ্য হচ্ছি কাজ করতে। লোকবল না থাকলে তো বাধ্য হয়েই কাজ করতে হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে আমরা প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানাতে চাই। মাঠ পর্যায়ে আমরা ভিষণ কষ্টে আছি। একাধিক অফিসের দায়িত্বভার নিয়ে আমরা ক্লান্ত। আমাদের অফিসার নিয়োগ দেওয়া হোক। তাহলে সরকারের রাজস্ব আদায় সহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে ভালো হবে। তিন জনের কাজ কখনোই একজনকে দিয়ে হয় না।

ভোলা জেলায় কতগুলো ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ- সহকারী কর্মকর্তা
পদ আছে? এমন প্রশ্নে ভোলা জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, মোঃ রায়হানুল ইসলাম বলেন, ভোলা জেলায় ভূমি সহকারী কর্মকর্তার পদ আছে ৪৭ টি তার মধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ১৬ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩১জন। অপরদিকে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার মোট পদ ৪৭ টি পুরো জেলায় কর্মরত আছে মাত্র ২৪ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ২৩ জন।

এত কম জনবল নিয়ে কিভাবে সরকারের রাজস্ব আদায় করছেন? প্রশ্নের উত্তরে ভোলা জেলার এডিসি রেভিনিউ মামুন আল ফারুক বলেন, ভোলা জেলায় ভূমিকর শতভাগ আদায় হয়েছে। আমরা কম লোকবল নিয়েও কাজ করছি। সরকারের রাজস্ব আদায়ে কোন ত্রুটি যেন না হয় সেদিকে সঠিক নজর রাখছি।

ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক -ই-এলাহী চৌধুরী

ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ- সহকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে ভোলা জেলার জেলা প্রশাসক তৌফিক -ই-এলাহী চৌধুরী’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোলা জেলায় ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ- সহকারী কর্মকর্তা পদের বিপরীতে লোকবল কম আছে জেনেছি। তারপরও রাজস্ব শতভাগ আদায় হয়েছে। এখানে লোকবলের চাহিদার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভেবেই আমরা দপ্তরে জানাব। প্রশ্ন করার জন্য সাগর চৌধুরী আপনাকে ধন্যবাদ। এছাড়াও আজ একটু ব্যস্থ আছি। আমাদের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল স্যার করোনা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ডেকেছেন সেখানে যোগদিব। ধন্যবাদ।

ভোলা জেলার প্রতিটি উপজেলার জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করে প্রতিটি ইউনিয়নে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ- সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে জনগনের দৌড় গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিবে এমনটাই আশা করছে স্থানীয় সেবাপ্রার্থীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top