ইউএনওর গ্যারেজে পচলো সরকারি ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী
জেলা প্রতিনিধিঃ করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সরকার যখন অসহায় মানুষের পাশে থেকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, সেই সময়েই সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গুদামে পচে নষ্ট হয়ে গেছে জরুরি ত্রাণসামগ্রী।
৩৩৩ নম্বরে কল করেও খাদ্যসহায়তা পাওয়া যায়নি—এমনও অভিযোগ রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে আসায় রাজনৈতিক মহলে চলছে তোলপাড়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে কেন ত্রাণসামগ্রী পচে নষ্ট হলো এবং কত টাকার মাল কেনা হয়েছে।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ মে ১২১ স্মারকমূলে সিংগাইর উপজেলার জন্য দুর্যোগকালীন জরুরি ত্রাণসহায়তা বাবদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। ঐ টাকায় ১০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী কিনে ইউএনওর গ্যারেজ সংলগ্ন একটি কক্ষে গুদামজাত করে রাখা হয়। প্রতি প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, পাঁচ কেজি আলু, দুই কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি লবণ, এক কেজি চিনি ও দুই প্যাকেট সেমাই। এর মধ্যে ঈদের আগে মাত্র ১০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্যাকেটে থাকা আলু পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। চাল, ডালও নষ্ট হওয়ার উপক্রম। গুদামে রাখা ১০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ৯০ প্যাকেটই পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
উপজেলা মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আবু নাসের বলেন, এসব ত্রাণসামগ্রী ইউএনওর বাসার গ্যারেজে ছিল। তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলতে নারাজ। তার দাবি ইউএনও তাকে গ্যারেজের চাবি দেননি। তাই এ ব্যাপারে তার করার কিছুই ছিল না ।
তিনি আরো বলেন, জরুরি এই ত্রাণসামগ্রী সরকারি গুদামে রাখা যায় না ঠিকই। তবে ইউএনও ত্রাণসামগ্রী গুদামে রাখেন বলে কথা তিনি স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে গুদামের কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, ‘আইনে নেই, তা আমিও জানি। যেহেতু ইউএনও রেখেছেন আমার কী করার আছে। ’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, ‘খাদ্য গুদামে ত্রাণসামগ্রী রাখার নিয়ম নেই বলে পিআইওর কথায় তার নাইট গার্ড যেখানে থাকে সেখানেই রেখেছি। মাঝে দুই-এক দিনের ছুটিতে ছিলাম। যার কাছে চাবি ছিল তাকেই দায়িত্ব দেওয়া ছিল। অথচ ত্রাণ কোথায় আছে জানেন না বলে পিআইও বলছেন। তার অনিয়মের ব্যাপারে কঠোর হওয়ায় তিনি আমার ওপর দায় চাপাচ্ছেন। যারা ৩৩৩ নম্বরে কল করবেন তারাই শুধু ত্রাণসামগ্রী পাবেন। কল আসেনি বলে তা দেওয়া হয়নি। অনেক কল আসলেও বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এরা ত্রাণ পাওয়ার উপযুক্ত না। নেতারা কল করিয়েছেন। অতিরিক্ত গরম আর প্লাস্টিকের প্যাকেটে থাকায় কিছু মাল নষ্ট হয়েছে। আমি এসিল্যান্ড, পিআইও ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলেই আলাপ করে ১০০ প্যাকেটের পণ্য কিনেছি। প্রতি প্যাকেটের দাম ১০০০ টাকা। এখন নষ্টটা ফেলে দিয়ে নতুন করে প্যাকেট করা হবে।
থানা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, ইউএনওর গ্যারেজে ত্রাণসামগ্রী নষ্ট হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এমপি অবগত হয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ এটাতো জনগণের সম্পদ। জনগণের আমানত এভাবেই পচে গলে যাবে। ভোগ করতে পারবে না এটাতো হয় না। সরকার দিচ্ছে আর জনগণ পাবে না। ইউএনও সরকারি দায়িত্বে থেকে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এতে দলের এবং সরকারে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।