ইউনিয়ন পরিষদের ভোট চায় সরকার!

PicsArt_06-02-12.23.37.jpg

ইউনিয়ন পরিষদের ভোট চায় সরকার!

নির্বাচন প্রতিবেদকঃ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন চায় সরকার। যার কারণে স্থগিত হওয়া ৩৭১টিসহ দেশের সব নির্বাচনগুলো আয়োজনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

অবশ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কিছু বলেনি। চলমান প্যানডেমিক পিরিয়ডের বিষয়টি বিবেচনা করে কমিশন ও মন্ত্রণালয় বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আর ভোট হলেও প্রচলিত বিধান অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণার সুযোগ থাকবেনা।

নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর গত রবিবার (৩০ মে) দেওয়া এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো জানানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়- ‘মাননীয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্থগিত ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ/ অতিক্রান্ত হবে এমন অবশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নির্বাচন সংক্রান্ত পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সদয় অবগতির জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ চিঠির সূত্র হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে গত ১ এপ্রিল পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত গত ১ এপ্রিল ইসি ইউপি নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। ওইদিনই স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ এর ২৯(৩) অনুযায়ী, নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি আইনের ২৯(৫) ধারা অনুযায়ী, পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও জানানো হয়।

বুধবার (২ জুন) অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আজকের বৈঠকে জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া চারটি সংসদীয় আসন, স্থগিত ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচন এবং দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।

অবশ্য স্থগিত ইউপি নির্বাচন সহ সংসদের শূন্য আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে চলমান লকডাউনের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বার বৈঠকে বসছে ইসি। কমিশন সূত্রে জানা গেছে- করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি ও লকডাউনের কারণে ভোট আয়োজনে অনীহা রয়েছে বেশিরভাগ নির্বাচন কমিশনারদের। এ কারণে আগের দুটি বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। ওই দুটি বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোট অনুষ্ঠানে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এজন্য বৈঠকে তিনি তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি অন্য কমিশনারগণদের কাছে কার্যত পীড়াপীড়ি করেছেন। অন্য কমিশনারগণ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক ও আইনী বাধ্যবাধকতা না হলে ভোট করার পক্ষে নন বলে তাদের অভিমত জানিয়েছেন। যার কারণে ভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিতে পরপর তিনটি বৈঠকে গড়ালো।

এদিকে গত ২৪ মের বৈঠকের পর দুই জুন বৈঠক করে শূন্য আসনের উপনির্বাচনের তফসিল এবং স্থগিত ইউপির নির্বাচনের বিষয় সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে ইসি সচিব জানান। তবে এরই মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় ইয়াস এ দেশের দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলায় উদ্বেগজনক মাত্রায় সংক্রমণ বেড়েছে। এজন্য জেলাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণাও শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভোট সম্ভব কী না সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের অনুষ্ঠানিকতা শুরু হলে প্রচার প্রচারণা শুরু হবে। তৃণমূল পর্যায়ের প্রচার চালানোর ক্ষেত্রে প্রার্থী ও সমর্থকেরা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন কী না- তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২১ সালে নির্বাচন উপযোগি ইউনিয়ন পরিষদের প্রাথমিক একটি তালিকা তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এ তালিকায় নির্বাচন উপযোগি ইউপি রয়েছে ৩ হাজার ৯৯৮টি। এর মধ্যে মার্চ মাসে মেয়াদ শেষ হয়েছে এক হাজার ৩৩০টির, এপ্রিলে ৬১১টির ও মে’তে এক হাজার ৩৬০টি। অর্থাৎ এই তিন মাসেই তিন হাজার ৩০১টি ইউপির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। চলমান জুনে মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬৯২টির ও জুলাইতে শেষ হবে আরও ৫টির। চূড়ান্ত তালিকায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ইউপির এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়র কারণে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও এসব ইউপিতে নির্বাচন আয়োজন করছে না ইসি।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ ও ৩১ মার্চ দুই ধাপে যথাক্রমে ৭৫২টি ও ৬৮৪টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের এপ্রিলে তৃতীয় ধাপে ৬৮৫টি ও মে মাসে ৭৪৩টি ইউপিতে ভোট হয়। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ২৯(৩) ধারা অনুযায়ি পূর্ববর্তী নির্বাচনের তারিখ থেকে আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বিধান রয়েছে। কিন্তু মার্চ মাসে ভোটার তালিকার হালনাগাদ ও সিডি তৈরি এবং এপ্রিলে রোজা শুরু হবে উল্লেখ করে এসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হবে না বলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল ইসি। ওই চিঠিতে স্থানীয় সরকার আইনের ২৯(৫) ধারা প্রয়োগ অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। মার্চ মাসে ১৯টি জেলার ৬৪ উপজেলার ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১১টি পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১ এপ্রিল ওইসব নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা না গেলেও আইনগত কোনও সমস্যা হবে না। তারা মনে করেন ইউনিয়ন পরিষদ আইন এর ১০১ ধারার বিধান বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আবু জাফর রিপন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, স্থগিত ৩৭১টি সহ যেসব ইউপির নির্বাচন বাকি আছে সেটা কমিশনকে সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

চিঠি কী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই উপসচিব বলেন, এটা ঠিক সেভাবে বলা যাবে না। যেহেতু প্যানডেমিক পিরিয়ড চলছে। এখন নির্বাচনের চেয়েও মানুষের জানমাল গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে মাননীয় নির্বাচন কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। তাছাড়া আমাদের সাথে মাননীয় কমিশনের শিগগিরই মিটিং আছে। সেখানে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচন করা যাবে কিনা? করা গেলেও তা কবে করা যাবে? আর করলেও সেটা কিভাবে করা হবে? ভোট হলেও বরাবর নির্বাচনে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা হয় সেভাবে হয়তো হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top