জিয়া বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক নবধারা প্রবর্তন করেন – শওকত মাহমুদ

জিয়া বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক নবধারা প্রবর্তন করেনঃ শওকত মাহমুদ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ সন্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক নবধারা প্রবর্তন করেন। যা দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এনে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, জিয়াই স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত, নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা ও মানুষের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি শুরু করলে জিয়া দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধে পরাজিত হলে নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও সেদিন দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। স্ত্রী- সন্তানদের জীবন বিপন্ন হতে পারে জানা সত্ত্বেও জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করার জন্য নিজ নামে জেড ফোর্স গঠন করেন।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বিরত্বপুর্ণ অবদান রাখেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হলে লাল সবুজের পতাকায় শোভিত স্বাধীন দেশে তিনি পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৭৩ সালের শেষের দিকে তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতাত্তোর সরকার জিয়াউর রহমানকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সংঘটিত ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ক্যু ও পাল্টা ক্যুর মাধ্যমে দেশ যখন চরম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকটে নিপতিত তখন জিয়াউর রহমান আবার দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব ও সংহতির মধ্যদিয়ে তিনি গৃহবন্দীত্ব রথকে মুক্ত হয়ে জনগনের আশা আকাংখার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পাদপিঠে আসীন করে।

জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ২৩ জুন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনিই দেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ,ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন,মাওলানা দেলোয়ার হোসেন,অধ্যক্ষ আবদূর রহমান,অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শওকত মাহমুদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী তৎকালীন সরকার সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল তথা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে। মাত্র ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রিকার প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে। বাকশাল প্রবর্তনে রুষ্ঠ সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনে ব্যাকুল ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। জিয়াউর রহমান জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রথা বাতিল করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। গণমাধ্যমের উপর থেকে সকল কালাকানুন প্রত্যাহার করে মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম চালু করেন।

একটি রাজনৈতিক সরকার যেখানে সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করেছিল তখন জাতির প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে আসা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী সৈনিক স্বাধীনতার অন্যতম মূলস্তম্ভ বহুদলীয় গণতন্ত্র জাতিকে উপহার দিয়ে মুক্ত গনতান্ত্রিক চর্চার পথকে সূগম করেছিলেন। এখানেই জিয়াউর রহমানের সাথে অন্যদের পার্থক্য। তিনি বলেন,জিয়া সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন এবং তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ১৯ দফা কর্মসূচি অনুযায়ী বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক নবধারা প্রবর্তন করেন।

শওকত মাহমুদ বলেন,আজ গণতন্ত্র নেই। দেশভর্তি দুর্নীতি ও সন্ত্রাস। দেশে পরিবর্তন আনতে হলে আগে আপানারদেরকে একেকজন জিয়ার আর্দশের মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। তবেই মুক্তি আসবে।

অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রমিক।তিনি ভালো মানুষের সন্ধানে দেশের আনাচে কানাচে চষে বেড়িয়েছিলেন। সবচেয়ে ভালো এবং সৎ লোকদের দিয়ে তিনি কেবিনেট গঠন করেছিলেন। তার মন্ত্রীসভা ছিল সবচেয়ে ভালো, দক্ষ এবং সৎ মন্ত্রীসভা।

দেশের সমৃদ্ধির জন্য জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে শিক্ষকদের এ নেতা বলেন, ধীরে ধীরে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেন। কৃষির উন্নয়নের জন্য তিনি খালকাটা কর্মসূচি শুরু করেন। যার মাধ্যমে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মুক্ত করে কৃষি বিপ্লব ঘটান। এভাবে শ্রমবাজার, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটান তিনি। দেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিপ্লব জিয়ার হাত ধরেই। শুধু তাই নয় পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ তার হাতেই সূচনা। কারণ সেসময় বাংলাদেশ ছিল উত্তেজিত। দেশের মানুষ জিয়াউর রহমানের জন্য ছিল ব্যাকুলপ্রাণ।

জনাব ভূঁইয়া বলেন, মূলত জিয়াউর রহমানের শয়নে, স্বপনে এবং জাগরণে দেশ ছাড়া আর কোনো ভাবনা ছিল না। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ সৎ শাসনক। তাঁর শত্রুরাও জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আনতে পারেন নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top