ভোলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে দুই ছেলেকে লুকিয়ে রেখে অপহরণ মামলা
জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় শিশু ছেলেসহ দুই সন্তানের অপহরণের তিন বছর পর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অপহরণ মামলা সাজান বাদী ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শ্যামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বেপারি।
ভোলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট কোর্টে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতের পর মঙ্গলবার বিচারক ফরিদ আলম শিশু ঈমাম হোসেন ইমন (১০) ও ভাই নিজাম উদ্দিনকে (২৫) সেভ কাস্টুডিতে পাঠান। একই সঙ্গে বাদী রফিকুল ইসলাম বেপারিকে আটক করে তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশকে। অভিযুক্ত আসামিদের মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর শিশু ছেলে ইমন ও ২০১৮ সালের ২৫ মে বড় ছেলে নিজামউদ্দিনকে মারধর করে অপহরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে পৃথক সময়েই দুটি অপহরণ মামলা করেন রফিকুল ইসলাম বেপারি। দুটি মামলায় নিজের তিন ভাইসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। প্রথম মামলার আসামিরা ছিলেন মো. রহিম, মো. সেলিম, মো. আলমগীর, মো. আক্তার ও আলী আকবর। পরের মামলায়ও প্রথম মামলার ৫ জনসহ আসামি করেন মো. ধলু, মো. জামাল ঢালি, মো. সেলিম ঢালি ও মো. হোসেনকে। বেপারির করা মামলায় আসামিরা বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হন। মাসের পর মাস কারাগারে থাকেন তারা। মামলার একপর্যায়ে দুটি অপহরণ ঘটনা সাজানো হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আলম।
তিনি বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদসহ তার মোবাইল ফোন ট্রাকিং করার নির্দেশ দেন তদন্ত কর্মকর্তাকে। আর এতেই বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিন বছর ৩ মাসে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধার করতে পারেনি। পরে গত মাসে বিচারকের নির্দেশে পুলিশ মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে নারায়ণগঞ্জে শিশু ঈমান হোসেন ইমন ও নিজাম উদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়। এরপর এসআই মিজানুর রহমান অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে সোমবার ভোলায় নিয়ে আসেন।
আদালতকে শিশু ইমন জানায়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তার বাবা প্রথমে তার নাম পালটে চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করান। একই ভাবে নাম পরিবর্তন করে ভাই নিজাম চাকরি নেন। পরে তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। নারায়ণগঞ্জেও ইমনকে সিরাজ নামে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। তাদের সঙ্গে তার বাবা মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। একই সঙ্গে কয়েক মাস পর দেখা করতেও যেতেন। আদালত এদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। পরে তাদের নিরাপদ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। রহস্যের জট উন্মোচনের জন্য আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে অভিযুক্ত আসামিদের মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার নির্দেশ দেন।