শাহ আলম ও এসকে সুর সহ ৮ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

PicsArt_04-02-10.50.07.jpg

শাহ আলম ও এসকে সুর সহ ৮ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

অপরাধ প্রতিবেদকঃ দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ জালিয়াত পিকে হালদারকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটে সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সহ আটজনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।

বৃহস্পতিবার পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখায় দেওয়া চিঠিতে তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

যে আটজনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে, তারা হলেন- শাহ আলম এবং তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগম, এসকে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) এভিপি আল মামুন, পিপলস লিজিংয়ের ম্যানেজার (ট্রেজারি) অভীক সিনহা ও ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা অতসী মৃধা।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রয়েছেন এস কে সুর চৌধুরী।

পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। তাকে এই অনিয়মে সহায়তা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।

এছাড়া এই লোপাটের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ আরও অনেকেই নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। জালিয়াতির ঘটনাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকে জানলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেননি। সংশ্লিষ্টদের এমন নীরবতার কারণেই পিকে হালদার বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের আদালতে দেওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উঠে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাশেদুল হক। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনে।

জবানবন্দিতে রাশেদুল বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য অবসরে যাওয়া ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীকে ‘ম্যানেজ’ করে পিকে হালদার অর্থ লোপাট করেছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিআইএফএম’র (ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড মার্কেটস) বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হতো। এই টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্যাশ হিসাবে উত্তোলন করে ‘বিবিধ’ খরচ দেখানো হতো। যাতে ঘুষের টাকার কোনো প্রমাণ না থাকে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক ও রেজা গ্রুপের চেয়ারম্যান শহিদ রেজা পিকে হালদারের প্রধান সুবিধাভোগী র্ছিলেন বলেও জবানবন্দিতে তথ্য উঠে এসেছে। পিকে হালদার ও রেজা লোপাট করা অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিতেন।

জবানবন্দিতে রাশেদুল হক আরও বলেন, দুর্নীতির কাজে পিকে হারদারকে সহযোগিতা করতেন একটি গ্রুপের বেশ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন বলে জানা যায়। পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আর্র্থিক খাতে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।

এদিকে বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শাহ আলমের অনিয়ম দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শাহ আলম এতদিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকালে তার সে দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শাহ আলমকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top