আবারও ভয় দেখাচ্ছে করোনা; সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার
বিশেষ রিপোর্টঃ আবারও ভয় দেখাচ্ছে করোনা, বাড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এরই মধ্যে ১৮ দফা জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা পালনে কঠোর হচ্ছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪২ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৯৩৭ জনে। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৪৫ জন। এ নিয়ে ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ হাজার ৯৯৪ জনে।
এদিকে করোনার ছোবল থেকে জনগণকে রক্ষা করতে সচেতনতার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানোর চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া রাত ১০টার পর অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া ঠেকাতে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। সরকারি অফিসে থাকবে না ৫০ ভাগের বেশি জনবল, এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে শিগগিরই।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। এটা যদি রোধ করতে না পারি তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকবে। মাঠ পর্যায়েও আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করব। অপ্রয়োজনে কেউ যাতে রাত ১০টার পর বাইরে না যায়, সেটি আমরা নিশ্চিত করবো। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন কাজ করবে।
সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার পর আবারও মাঠে নামছে পুলিশ। করোনার সংক্রমণরোধে পরিকল্পনায় বসেছে বাহিনীটি। রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে সরকারের দেওয়া নির্দেশনাগুলো জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্টদের মেনে চলতে কর্ম-পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পুলিশ। এজন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করবে বাহিনীটি।
এছাড়া বাস, ট্রেন ও লঞ্চগুলো ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে কি না তাও নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে পুলিশ। সরকারের নতুন নির্দেশনা বলবৎ থাকা অবস্থায় দেশের কোনো জায়গায় যেন সভা-সমাবেশ না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
১৮ দফা নির্দেশনার অংশ হিসেবে দেশের বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) ভোরে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্দেশনাটি কার্যকর হবে।
বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস বিভাগের সদস্য চৌধুরী এম জিয়াউল কবির স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশে আসা ও বাংলাদেশ ত্যাগ করা প্রত্যেক যাত্রীকে বাধ্যতা মূলকভাবে করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে (যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা দিতে হবে)। এছাড়া যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে যারা আসবে তাদের জন্য ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা বেবিচক নির্ধারিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার অথবা নির্ধারিত হোটেলে থাকবেন। অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরও ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, বিমানবন্দর ও ফ্লাইটে সব যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া যেসব বিমানের প্রতি সারিতে সিট তিনটি করে, সেই ফ্লাইটের মাঝের সিটের যাত্রীকে মাস্কের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ফেসশিল্ড পরতে হবে।
বুধবার থেকে অফিসে অর্ধেক জনবলের বেশি নয়
আবারও ৫০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অফিস চালানোর যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা কার্যকর হচ্ছে বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গতবার প্রথমে ২৫ ভাগ করলেও পরে ৫০ ভাগ করা হয়েছিল। এবারও ৫০ ভাগ জনবল অফিস, কলকারখানা, সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় উপস্থিত থাকবে। বাকি জনবল বাসা থেকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অফিসে সংযুক্ত থাকবে।
গর্ভবতী, অসুস্থ ও যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের বাড়িতে অবস্থান করে কাজ যুক্ত থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। জুমের মাধ্যমে বা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে তারা যুক্ত থাকবেন বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ সিট ফাঁকাও বুধবার থেকে
গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ সিট ফাঁকার সিদ্ধান্তও কার্যকর হচ্ছে বুধবার থেকে। মঙ্গলবার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিজ বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেওয়ার সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা জানান।
করোনা সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য নিয়মাবলী মেনে চলার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহের জন্য বুধবার (৩১ মার্চ) থেকেই এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
অন্যদিকে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মন্ত্রী মহোদয় দিয়েছেন। একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। সে আলোকে আগামীকাল (বুধবার) থেকে তা কার্যকর করা হবে। নির্দেশনা কার্যকরের লক্ষ্যে বিআরটিএ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১ এপ্রিল থেকে ট্রেনে ফাঁকা থাকবে অর্ধেক আসন
করোনা সংক্রমণরোধে ১ এপ্রিল থেকে সব ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন পুরোপুরি কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি দুটি আসনের একটি ফাঁকা রাখা হবে। রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের সব রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৯ মার্চ) রাত থেকেই সব রেলস্টেশনে এই নির্দেশনা কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।