ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫৩ এমপির চিঠি
বিশেষ প্রতিবেদকঃ দেশে ই-সিগারেট আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত সুপারিশ জানিয়েছেন ১৫৩ জন সংসদ সদস্য। এসময় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিষয়টিও আলোকপাত করেন সংসদ সদস্যরা।
আজ সোমবার (৮ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের নিকট সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষরিত এ বিষয়ক চিঠি হস্তান্তর করেন ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং’ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার, শবনম জাহান, অপরাজিতা হক ও শিউলী আজাদ।
সংসদ সদস্যরা মুখ্য সচিবের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও তামাকজাত পণ্যের উপর যুগোপযোগী কর আরোপ করাও জরুরি। তবে সেই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ই-সিগারেট। ই-সিগারেট ব্যবহারে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৭১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ই-জুসে থাকা ক্ষতিকর ফ্লেভারিং এজেন্টের কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ই-সিগারেটের নিকোটিন শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভয়ানক বিপদজনক। উচ্চমাত্রার এই নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের স্টেম সেলকে ধ্বংস করে অকাল বার্ধক্যসহ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের কারণ হয়।
এতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে ৪২টি দেশে ই-সিগারেট বা ভেপিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার একাধিকবার দাবি উঠেছে।
বাংলাদেশের ই-সিগারেটের মূল ক্রেতা কিশোর ও তরুণ। বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাছাড়া এই পণ্য আমদানির বিষয়ে কোনও নিয়মনীতি না থাকায় পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। এমতাবস্থায় ক্ষতিকর এই পণ্য ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ার আগেই তা নিষিদ্ধ করা জরুরি। একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হতে পারে নজিরবিহীন পদক্ষেপ।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যের এই উদ্যোগের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, এমপি বলেন, ‘ই-সিগারেট সহ প্রত্যেকটি তামাকজাত পণ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে ই-সিগারেটসহ তামাক ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং কর বৃদ্ধি করা জরুরি।’
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকসহ উপস্থিত সকল সংসদ সদস্যরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং কর বৃদ্ধির ব্যাপারে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে ই-সিগারেট অতি দ্রুত নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
আনুষ্ঠানিকভাবে এই চিঠি হস্তান্তর বিষয়ক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ক্ষতিকর তামাকের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যদের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আমরা এ ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। এসময় তিনি আইনগতভাবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।