সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা- ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইমো-ভাইবার-মেসেঞ্জার থেকে
বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিনোদননির্ভর ওটিটি (ওভার দ্য টপ স্ট্রিমিং) প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, জি-ফাইভ, আইফ্লিক্স, হইচই ইত্যাদির মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণ ও খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি। এরইমধ্যে বিটিআরসি এই বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রথম বৈঠক গত বুধবার (৩ মার্চ) অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ভাইবার, মেসেঞ্জার, ইমো, উইচ্যাট, লাইনের মতো যোগাযোগনির্ভর ওটিটি সার্ভিস এ দেশে বিপুল জনপ্রিয়। দেশ থেকে ব্যবসা (বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে) করে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে তারা। দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকা, কোনও ধরনের যোগাযোগ পয়েন্ট না থাকায় সরকার তার রাজস্ব (ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ) হারাচ্ছে বলে অভিমত দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে বিটিআরসি আদালতে যে প্রতিবেদন জমা দেয় তাতে বলা হয়, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, হইচই, বঙ্গ’র মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে দেশে কোনও রাজস্ব আদায় হয় না। কোনও ধরনের রেগুলেশন না থাকায় সেটি আদায় হচ্ছে না। একই কথা প্রযোজ্য যোগাযোগ নির্ভর ওটিটি অ্যাপসের বেলায়ও। নিয়ন্ত্রক সংখ্যা বিটিআরসি সব ধরনের ওটিটি অ্যাপস থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করছে।
বিটিআরসির গঠন করা ওটিটি গাইডলাইনের খসড়া তৈরি সংক্রান্ত কমিটির প্রথম বৈঠকে কমিটি কিভাবে কাজ করবে, কোন দেশে কীভাবে হয়, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, প্রয়োজনে সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে—সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির চেয়ারম্যান লিগ্যাল ও লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন জানান, আমরা কয়েকটা দেশের ওটিটি গাইডলাইন পর্যালোচনা করে দেখবো তাদের প্র্যাকটিসটা কী। আমরা কয়েকটা গাইডলাইন পর্যালোচনা করে বেস্ট প্র্যাক্টিসটাই করবো। এজন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলতে হবে কীনা সেসবও কমিটি আলোচনা করে ঠিক করবে। তিনি জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই তারা কাজ করেছন।
জানা গেছে, দেশে বিপুল জনপ্রিয় বিদেশি ওটিটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স, হইচই, অ্যামাজন প্রাইম জি-ফাইভ ইত্যাদি। আর দেশিগুলোর মধ্যে আছে বঙ্গ, বিঞ্জে, বাংলাফ্লেক্স, বায়োস্কোপ, সিনেম্যাটিক ইত্যাদি। দেশিগুলোতে কী ধরনের কনটেন্ট আছে তা সহজে নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি করা এবং সেসব থেকে রাজস্ব আয়ের পথ সুগম হলেও যোগাযোগনির্ভর অ্যাপে তা মোটেও সহজ নয়। ভাইবার, মেসেঞ্জার, ইমো, উইচ্যাট, লাইনের মতো যোগাযোগনির্ভর ওটিটি সার্ভিস এ দেশ থেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ আয় করলেও সরকারের প্রাপ্তি শূন্য। বিটিআরসি গঠিত কমিটি এইসব বিষয়ে দেখভাল, খসড়া নীতিমালা তৈরি ইত্যাদি কাজ করবে বলে জানা গেছে।
বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যোগাযোগ নির্ভর অ্যাপগুলোর এ দেশে কোনও রেগুলেশন না থাকলেও তাদের নিজ দেশে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নিয়ে পয়েন্ট আছে। সেসব পয়েন্ট থেকে সংশ্লিষ্ট ওটিটি অপারেটররা জানতে পারে কোন দেশ থেকে তার কত আয় হচ্ছে। ফলে তারা চাইলে তাদের কাছ থেকে সরকার তার অংশটুকু (ট্যাক্স, ভ্যাট ইত্যাদি) আদায়ের উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। তারা যদি এখন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে তাহলে আয়ের ভাগ কেন দিতে যাবে—প্রশ্ন করেন তিনি।
জানা যায়, দেশের আইপি-টিএসপি অপারেটরগুলো পরিচালিত দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য একটি গাইডলাইন করছে। দেশীয় ওটিটির ট্যারিফ অনুমোদনের জন্য বর্তমানে সেটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে রয়েছে। সেই গাইডলাইনের ‘জেনারেল প্রভিশন’ অংশের ৭ দশমিক ৫ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে- বিটিআরসি একই পরিপ্রেক্ষিতে (দেশি ওটিটি সেবার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন) বিদেশি ওটিটি পরিষেবার জন্য নির্দেশনা বা নির্দেশিকা জারি করবে।