প্রতিদিন ঢাকা শহরকে ভালোবাসি – মেয়র আতিকুল ইসলাম
নগর প্রতিবেদকঃ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম সুষ্ঠু পয়োব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নগরবাসীকেও ভাবার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ভবন ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকরী সেপটিক ট্যাংক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এটি সবাইকে করতে হবে। বাসা-বাড়ির পানি কোথায় যাবে, কিভাবে আধুনিক উপায়ে নিষ্কাশন হবে, সে বিষয়ে প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে তিনি জনগণকে নকশা তৈরি করার আনুরোধ জানান। মেয়র বলেন, এই শহরকে এভাবে রাখা যাবে না। একটি সুন্দর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পয়োনিষ্কাশন উৎস থেকে ব্যবস্থাপনা করা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। আজ রবিবার গুলশানস্থ একটি হোটেলে বেলা এগারটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ‘ভালবাসা একদিন, শহরকে ভালবাসুন প্রতিদিন’ প্রতিপাদ্যে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এ কথা বলেন।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজার সঞ্চালনায় কর্মশালায় ওয়াসা, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অদিদপ্তর, আর্কিটেক্ট, প্রকৌশলী, পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ ও অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সোসাইটির প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, বুয়েট, এমআইএসটি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, এই যে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছে, এর ফলে আমাদের অনেক জ্ঞান-অভিজ্ঞতা বিনিময় হলো। তিনি আরো বলেন, সিটি মেয়র হিসেবে আমি চাই নগরবাসীর জন্য, সুন্দর নগরীর জন্য, খালে স্বচ্ছ প্রবাহমান পানি থাকুক। সেখানে মাছের চাষ দেখতে চাই। ময়লা-আবর্জনামুক্ত খাল দেখতে চাই। খাল দিয়ে নদীর সাথে নৌকা চলাচলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাই।
মেয়র বলেন, এগুলো আগে সম্ভব ছিল। কিন্তু আমরা এই সম্ভবগুলোকে অসম্ভব করে তুলেছি। বিভিন্ন জায়গায় অনেকে পাইপ দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে। সেগুলো তুলে নিয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন বেইলি ব্রিজ তৈরি করার আহবান জানান মেয়র, যাতে ব্রিজের নিচ দিয়ে যাতে নৌকা চলতে পারে। মেয়র বলেন, চারটি নদীর সাথে আমরা সংযোগ স্থাপন করতে চাই। এই হচ্ছে আমাদের স্বপ্ন। হাতিরঝিল থেকে কালাচাঁদপুর, বনানী কবরস্থান, কড়াইল বস্তি যাওয়া যাবে। এজন্য কয়েকটি ব্রিজ উঁচু করতে হবে। এজন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি, যা স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু যে নৌকা দিয়ে সবাই যাবে, সেই পানি যদি দুর্গন্ধ হয়, মশা থাকে, তাহলে সেটি সম্ভব নয়, কেউ যাবে না সেখানে। তাই দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা জরুরি। আতিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর এখানে এসেছে। আমাদের স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
মেয়র আরো বলেন, হাতিরঝিল, বারিধারা, গুলশান, বনানী, উত্তরা লেকে মাছ ছাড়লে মাছগুলো সাথে সাথে মরে যায়, কারণ পানি দূষিত; পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি আছে। তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের কাছে খালের মত লেকগুলোও সিটি কর্পোরেশনের অধীনে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন। মেয়র বলেন, এসকল লেকের পানি আমরা স্বচ্ছ করতে পারব। মাছের চাষ হবে এখানে। এটি সম্ভব। এছাড়া বিনোদনের জন্য ওয়াটার পার্কও এখানে করা যায়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে পানির অবস্থা দেখে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হয়।
মেয়র বলেন আমার স্বপ্ন – খালের পাশ দিয়ে মানুষ হেঁটে বেড়াবে এটি আমি চাই। সাইকেলের লেন হবে, গাছ লাগানো হবে। খালের পানি কিভাবে দুর্গন্ধমুক্ত করতে পারি এটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভালবাসা দিবস একদিন, কিন্তু আসুন প্রতিদিন ঢাকা শহরকে ভালোবাসি – আতিকুল ইসলাম নগরবাসীর কাছে এই আহবান জানান।
কর্মশালার প্রধান অতিথি মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ করতে হলে সারা দেশের মানুষের কথা ভাবতে হবে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে কাজ করছি। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা এবং ডিস্পোজাল দুটো নিয়েই কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, খালগুলো সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছি, সেগুলো বেশ ভালো চলছে। ৩৯টি খালকে সবাই মিলে উদ্ধার করে উন্নয়ন করতে পারলে তাহলে এগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হবে।
কর্মশালায় বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া ডিএনসিসির পক্ষে প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, এমআইএসটি এর পক্ষে কর্নেল এ এন এম ফয়েজুর রহমান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, স্থপতি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, জাহাঙ্গীর নগরের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, ড. আদিলুর রহমান, ডিএনসিসির কর্মকর্তা, ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।