উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বিরুদ্ধে ক্ষেপেছেন জনপ্রতিনিধিরা
বিশেষ প্রতিবেদকঃ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) উপজেলা পর্যায়ে শাসকের ভূমিকা পালন করছেন। তাদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব জনপ্রতিনিধিদের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।
শনিবার ( ২ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ইউএনওদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে এ ধরনের অভিযোগ করে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন।
‘সাংবিধানিক নির্দেশনা ও আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনিক একাংশ নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ কর্তৃত্বহীন, তৃণমূলে জবাবদিহি ও শাসন বিঘ্নিত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন এবং আইন সম্পাদক রীনা পারভীনসহ বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা।
জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের আলাদা করে সামন্তবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছেন। কর্মকর্তাদের আইন পরিপন্থী আচরণ ও কাজের কারণে মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা চলছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার। এতে বলা হয়, আইনে উপজেলাকে প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যার প্রশাসনিক কাঠামো নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ। উপজেলা পরিষদ আইনের তৃতীয় তফসিলে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উপজেলাধীন ১৭টি বিভাগকে উপজেলা পরিষদের কাছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের কার্যাবলীসহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আইনকে বিবেচনায় না নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর বিভিন্ন সময়ে পরিপত্র জারি করছে। যার মাধ্যমে উপজেলার সব বিভাগের কার্যাবলী নিষ্পত্তির জন্য গঠিত প্রায় শতভাগ কমিটিতে ইউএনওকে সভাপতি করা হয়েছে। এই ১৭টি বিভাগের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাও ইউএনও। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়া সব কাজ কমিটিপ্রধানের ক্ষমতাবলে ইউএনও নিয়ন্ত্রণ করছেন বলেও লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে কাজ সম্পাদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একাধিকবার পরিপত্র ও আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু উপজেলা পর্যায় এই নির্দেশনা বা আদেশের কোনো প্রতিপালন হয় না। এতে আরও বলা হয়, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলেও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা (ইউএনও) সবকিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণকে পাশ কাটিয়ে জনপ্রতিনিধিবিহীন জনপ্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সংবিধান, আইন ও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এগুলোর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে বিপদে পড়েন। যে কোনো ইস্যু সৃষ্টি করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নির্বাহী তদন্তের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। এভাবে পরিকল্পিত ছকে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা নষ্ট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের।
লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এরপর উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবকে লিখিতভাবে এসব বিষয় জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু সেই লিখিত আবেদনের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ১৫ জন সচিবের কাছে গত ২০ সেপ্টেম্বর নোটিশ ডিমান্ডিং জাস্টিস পাঠানো হয়েছে। এরও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সবকিছুতে তাচ্ছিল্য দেখাচ্ছেন।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবিও জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে- হস্তান্তরিত ১৭টি বিভাগের কার্যক্রম উপজেলা পরিষদের কর্তৃত্বে পরিচালিত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রগুলো অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। নির্বাচিত পরিষদের কার্যক্রম বাস্তবায়নে ১৭টি বিভাগের জন্য ভাইস চেয়ারম্যানদের সভাপতিত্বে ১৭টি কমিটি বিদ্যমান রয়েছে, সেগুলো কার্যকর করতে হবে। উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে ১৭টি বিভাগের কার্যাবলী সম্পাদন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।