প্রতারক ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী জালটাকা; অবৈধ অস্ত্র ও বিদেশি মদ সহ আটক

প্রতারক ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী জালটাকা; অবৈধ অস্ত্র ও বিদেশি মদ সহ আটক

অপরাধ প্রতিবেদকঃ র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ রকিবুল হাসান এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জমান, পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে রাজধানীর রুপনগর আবাসিক এলাকা নাসিমের বাসায় ও চিড়িয়াখানা রোডস্থ নাসিম রিয়েল এস্টেট এর অফিসে অভিযান পরিচালনা করে একটি ৭.৬৫ মি.মি. বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ জাল ১,৩৫,০০০/- টাকা, ১৪০০ পিস ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশী মদ, ৪ টি ওয়াকিটকি সেট, ০৬ টি পাসপোর্ট, ৩৭ টি ব্যাংক চেক বহি এবং ৩২ টি মোবাইল সিমসহ ৫৫ টি গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত আসামী

১। মোঃ ইমাম হোসেন নাসিম (৬০) জেলা-ঢাকা এবং তার সহযোগী
২। হালিমা আক্তার সালমা (৩২) জেলা-ঢাকাদ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়।

ইমাম হোসেন নাসিমের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান থানাধীন মেদুয়া গ্রামে। তার বাবা ১৯৫০ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসে। সে ১৯৬০ সালে ঢাকার বাড্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। সে আজিমপুরস্থ একটি স্কুল হতে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। অতঃপর মিরপুরের একটি হাই স্কুল হতে এসএসসি, ঢাকার ০২ টি কলেজ হতে এইচএসসি ও গ্র্যাজুয়েশন সম্পর্ন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে ৩ টি বিয়ে করেন এবং চার সন্তানের জনক। ১৯৯৬ সালে প্রথম বিয়ে, পুনরায় ২০০৪ সালে দ্বিতীয় বিয়ে অতঃপর ২০১৩ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন।

আসামী নাসিম ১৯৭৮ সাল হতে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঠিকাদারির কাজ করে আসলেও মূলত ২০০২ সাল হতে অভিনবভাবে প্রতারণামূলক কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে কথিত নাসিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক পরিচয় প্রদান করে সাইনবোর্ড টানিয়ে ও ক্ষেত্রবিশেষে অস্ত্র প্রদর্শন পূর্বক ভয় ভীতি দেখিয়ে সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় অন্যের জমি, খাস জমি দখল করে আবাসিক শহর গড়ে দেয়ার নামে প্রায় ৫ হাজার সাধারণ জনগণের সাথে বায়না করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা এবং ২৫০ জনকে ভুয়া চুক্তিপত্র করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২.৫০ লক্ষ-২০.০০ লক্ষ টাকা আদায় করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এটির পাশাপাশি সে ২০০৫ হতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ভিন্ন ভিন্নভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করে। শাহ আলী থানাধীন ২৫/২৯, চিড়িয়াখানা রোডস্থ নাসিম গ্রুপ এর অফিসে অভিযান পরিচালনার সময় তার মালিকানাধীন নিম্নের ১৬ টি তথাকথিত প্রতারনামুলক প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছেঃ

১। নাসিম রিয়েল এস্টেট লিঃ।
২। নাসিম ডেভলপার লিঃ।
৩। নাসিম এগ্রো ফুড লিঃ।
৪। নাসিম বাজার।
৫। এস বি ফাউন্ডেশন।
৬। ডা. বেলায়েত হোসেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
৭। নাসিম পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিস।
৮। সাপ্তাহিক ইমারত অর্থ।
৯। নাসিম শিপ বিল্ডার্স।
১০। নাসিম ইঞ্জিনিয়ারিং ও কন্সাল্টেন্সি।
১১। নাসিম ট্রেডিং লিঃ।
১২। সাহানা আই হাসপাতাল।
১৩। বাংলা নিউজ ১৬।
১৪। নাসিম ড্রিংকিং ওয়াটার।
১৫। নাসিম রিফাইন্ড সুগার ।
১৬। নাসিম বেভারেজ।

আত্বগোপনেরকৌশলঃ

বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে সে সেসব প্রতারণার শিকার মানুষদের ধরা-ছোয়ার বাইরে চলে যেত এবং সময়ে সময়ে অস্ত্র প্রদর্শন ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতো। গ্রেফতার এড়াতে আন্ডারগ্রাইন্ডে তার গোপন সুরঙ্গে অবস্থিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্বলিত দরজাযুক্ত গোপন অফিসে আত্বগোপন করত। নাসিমের অনুপস্থিতিতে তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার প্রতারণার ব্যবসা দেখাশোনা করত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফাতারকৃত আসামীদ্বয় নিম্নোক্ত অভিনব প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করে সাধারণ জনগণকে প্রতারিত করে আসছিলোঃ 

(ক) অস্ত্রধারী ভূমিদস্যু হিসেবে প্রতারণাঃ আসামী অভিনব পন্থা অবলম্বন করে দীর্ঘদিন যাবত সাধারণ জনগণের নিকট প্রতারণামূলক কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে বিভিন্ন সময় রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক পরিচয় দিয়ে আবার ক্ষেত্রবিশেষে অস্ত্র প্রদর্শন পূর্বক জমি দখল করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে আসছিলো।

(খ) ৩২ টি সীমকার্ড ও ০৪ টি ওয়াকিটকি সেট দিয়ে প্রতারণাঃ আসামী নাসিম নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে সকলের ধরা-ছোয়ার বাহিরে থেকে প্রতারণার কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতো এবং এ ওয়াকিটকি সেটগুলো দ্বারা নিজের নিরাপত্তা ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক হিসেবে তার পরিচয় নিশ্চিত করতো।

(গ) ৫৫ টি গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামীঃ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে  প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা, মাদক ও জালটাকা মামলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে।

(ঘ) শীর্ষস্থানীয় মাদক ও জালটাকার ব্যবসায়ীঃ আসামীদ্বয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহ হতে স্ত্রীর সহযোগীতায় মাদক দ্রব্য ইয়াবা ও বিদেশী মদ সংগ্রহ করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারীদের নিকট বিক্রয় করে আসছিলো। এছাড়াও উক্ত আসামীদ্বয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করতো।

ভুক্তভোগী মানুষেরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শতাধিক মামলা করে যার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা মামলার ৫৫টি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রতারণা সংক্রান্ত অসংখ্য জিডি ও অভিযোগ রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, প্রতারণার মোট ০৪ টি মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রতারিত অসংখ্য ভুক্তভোগী আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে, তাদের মধ্যে ১০/১২ জন প্রতারক নাসিমের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। যারা মামলা করতে ইচ্ছুক, র‌্যাব-৪ তাদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top