জালিয়াতি করে বীরাঙ্গনা হওয়ার আবেদন – আওয়ামী লীগ নেত্রী বহিষ্কার
অপরাধ প্রতিবেদকঃ জয়পুরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসমা বিবি। বয়স, জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জালিয়াতি করে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আবেদন করায় জয়পুরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসমা বিবিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রেবেকা সুলতানা ও সাধারন সম্পাদিকা মাহফুজা মন্ডল রিনার ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত বহিষ্কার সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের হাতে আসে।
বহিষ্কার পত্রে দেখা যায়, বয়স, জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দেওয়া সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন করেন আসমা বিবি। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা প্রকৃত বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করার ঘৃন্য অপচেষ্টা সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসমা বিবির বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির নির্দেশনায় সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদিকা পদ সহ সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে আসমা কে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয় মর্মে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আসমা বিবি বর্তমানে জয়পুরহাট জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর গ্রামের মৃত ইসমাইল ফকিরের কন্যা আছমা বিবির (৫৮) জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর নং ৫৫৩৬৪২১২৯৯ তে জন্ম তারিখ রয়েছে ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল ৮ বছর ৩ মাস ৬ দিন। কিন্তু ভূয়া জন্ম সনদ তৈরি করে ১২ বছর বয়স বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধনে জন্ম তারিখ করে নিয়েছেন ১৯৫০ সালের ২০ ডিসেম্বর। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময় ২০ বছরের যুবতী থাকায় তিনি পাক সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন বলে দাবি করেন। এদিকে জাতীয় পরিচয় পত্রে থাকা প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর সংশোধন করে ভূয়া জন্ম সনদে দেখানো জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের ২০ ডিসেম্বর করার জন্য তিনবার আবেদন করলেও নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করেছে। তা সত্বেও নিজেকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভুক্ত করার জন্য আছমা বিবি ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের(জামুকা) মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে জামুকা’র সহকারী পরিচালক আব্দুল খালেক চলতি বছরের ২ জানুয়ারী বিশেষ কমিটি কর্তৃক যাচাই বাছাইয়ের জন্য জয়পুরহাট সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠির প্রেক্ষিতে সদর উপজেলায় কর্মরত ৫ সদস্যের সরকারি নারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহনাজ সিগমা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে গত ২৪ জুন প্রতিবেদন জমা দেন।
যেখানে তিনি আছমা বিবিকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার আবেদন করেছেন আছমা বিবি; এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ সহ অংগ সংগঠনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর ৩ মাস। জাতীয় পরিচয় পত্রেও সে অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেকে ২০ বছরের যুবতী দাবি করে বিরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার আবেদন করেছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন সহ বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আজম আলী। তিনি বলেন আছমার নামে এই বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি আসলে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি থাকবে না।
সরকারি ভাবে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই না করেই বীরাঙ্গনা হিসেবে গেজেটভূক্ত করার জন্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ ওঠে।
জমা দেওয়া কাগজপত্র বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আছমা বিবি স্থানীয় দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ হতে পিতার পরিবর্তে স্বামীর নাম দিয়ে ১৯৫০ সালের ২০ ডিসেম্বর উল্লেখ করে জন্ম নিবন্ধন করে নিয়েছেন। জন্ম নিবন্ধন কখনই স্বামীর নামে হয় না। ১৯৬৩ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছেন মর্মে স্থানীয় উত্তরজয়পুর দাখিল মাদ্রাসা হতে প্রত্যয়ন পত্রও জমা দিলেও ওই মাদ্রাসায় গিয়ে কোন রেকর্ড পত্র পাওয়া যায়নি। ভূয়া জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়স সংশোধনের আবেদন করলেও তথ্যে গরমিল থাকায় নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করে ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্ম তারিখই বহাল রাখে।
অভিযোগের কারনে বিষয়টি বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আটকে রয়েছে। সংগঠন থেকে বহিস্কারের বিষয়ে আসমা বিবি বলেন, আমি এখন কোন চিঠি পাইনি।