প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি, বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

PicsArt_07-22-08.57.22.jpg

প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি, বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধান প্রতিবেদকঃ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজকে মোট ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি ও সমন্বয়হীতার কারণে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া উপকূলে, চরাঞ্চলে বাঁধ দেয়ার ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী চিন্তার প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) একনেক সভায় এসব মত ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।

একনেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (খুউক) বাস্তবায়নাধীন ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়েছে। ৭ বছরে পেরিয়ে গেলেও এর কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আজকে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হলো। বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর বিরক্তির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘খুলনা শিপইয়ার্ডের ভেতরে রাস্তাঘাট অনেক সরু ও ভাঙাচোরা। এগুলোকে প্রশস্ত করা ও সুন্দর করার জন্য প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটার গতি অত্যন্ত মন্থর। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রকল্প কাজে দেরির একটি চমৎকার উদাহরণ এই প্রকল্পটি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এগুলো কেন হচ্ছে? বলা হয়েছিল যে, ওখানে সমন্বয়ের ব্যাপার ছিল। সড়ক নির্মাণে সমন্বয়ের দরকার ছিল সড়ক ও জনপদের সঙ্গে, সেটা করতে পারেনি। এছাড়া এটা নির্মাণের যে দায়িত্ব ছিল খুলনার অন্যান্য কর্তৃপক্ষের, তাদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তারা এত বড় কাজ করতে পারে কি-না, বা তাদের সক্ষমতা আছে কি-না, অভিজ্ঞতা আছে কি-না। এই সবমিলিয়ে আজকে তো একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত এটার সময় দুই বছর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।’

আজকে ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ (জেড-১০৬১) (ভূমি অধিগ্রহণ) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটিরও দেরি ও সমন্বয়হীনতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ/সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘লাঙ্গলবন্দ থেকে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পেও সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটা একটা সহজ ব্যাপার ছিল, সড়কটাকে বড় করা। কারণ হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা স্নানে আসেন। তারা যাতে আরামে চলাফেরা করতে পারেন। স্নানের সময় নদীতে নামে হাজার হাজার লোক, সেজন্য ঘাট তৈরি করে দেয়া। বড় সিঁড়ির ঘাট। এই ছোট ছোট কাজ করতে গিয়ে কোনো কোনো লোকে বা সংস্থা এটা করবো, ওইটা করবো, বাংলো বানাবো, হোটেল বানাবো – এসব। এটা করে গোটা প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ে গেছে, দেরিতে পড়ে গেছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, যার কাজ তাকে করতে হবে, এই কাজ যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্যের মধ্যে যদি থাকেন, এখানে ঘাট বানিয়ে দেন, সড়ক প্রশস্ত করে দেন। কিছু একটা করে দেন, যেটা খুব জরুরি। নারী-পুরুষ অনেকেই যায়। সুতরাং এখানে শৌচাগার খুবই দরকার। আর চা, কফির দোকান, হোটেল এগুলো ব্যবসায়ীরাই করবে নিজেদের প্রয়োজনে। আমরা শুধু উন্নয়নটা করে দিই। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এইসব জটিলতা যেন না হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজটা করার কথা, শেষ করে দেবে। আর অন্যান্য যেসব আইডিয়া এসেছে, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এগুলো দূরে সরিয়ে রাখেন, মূল কাজটা করেন।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য– দেরি হচ্ছে, অহেতুক দেরি হচ্ছে। সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করেছেন তিনি। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, একটা কাজ যখন শুরু করি, তখন অন্যান্য আইডিয়া চলে আসে, এটা করেন ওটা করেন। এতে প্রকল্পের ক্ষতি হয়। এই প্রবণতাকে আটকাতে হবে। আমাদের প্রতি নির্দেশনা আছে, আমরা যারা সরকারের কাজ করি, বিশেষ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আমরা দেখবো আরও বেশি করে। আইএমইডি (পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) দেখবে এটা, মাঠে গিয়ে দেখে আসবে।’

বাঁধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন চর নিয়ে কথা বলছিলাম, বাঁধের বিষয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, সাবধান। এই চরের মধ্যে উপকূলে আপনারা যে বাঁধ দেন, ক্রস ডেম যে সংযোগ করেন, এটার কিন্তু ভয়ানক প্রভাব আছে। আপনি হয়তো হাতিয়া দ্বীপ বাঁচালেন, ওইদিকে পানি বেড়ে গিয়ে ভোলাকে ভাঙবে। সুতরাং এ নিয়ে সুদূর প্রসারী স্টাডি করা প্রয়োজন আমাদের। এগুলো স্টাডি করে আমাদেরকে সাবধানে হাত দিতে হবে। শি ইজ ভেরি রাইট হেয়ার (এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ঠিক আছেন), আমার মনে হয়। প্রকৃতির সঙ্গে খেলা করার আগে আমাদেরকে খুব সাবধানে খেলতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top