নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই: ইসি সচিব মো. আলমগীর

PicsArt_07-07-03.05.17.jpg

নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই: ইসি সচিব মো. আলমগীর

বিশেষ প্রতিবেদকঃ আসন্ন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের উপ-নির্বাচন পেছানোর বিএনপির দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার দুপুরে নিজ দফতরে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, বিএনপি তার আবেদনে নির্বাচন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু তারা একথা খুব ভালো করেই জানেন, যে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এখন নির্বাচন পেছালে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে বিএনপির নির্বাচন পেছানোর দাবিটি ইসি সচিবের তুলে ধরেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, করোনার এই সময়ে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই কমিশনের কাছে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। কমিশন যদি নির্বাচন না পেছায় তবে আমরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসির সচিব বলেন, কোনো আসন শূন্য হলে তার পরবর্তীতে নব্বই দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন করতে হয়। দৈবদুর্বিপাকের কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আরো নব্বই দিন সময় নিতে পারে। সেই সময়ও পার হয়ে গেলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ব্যাখ্যা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

আসন দু’টিতে যথাক্রমে মেয়াদ শেষ হবে ১৫ জুলাই ও ১৮ জুলাই। কোনো পক্ষ যাতে আঙ্গুল তুলতে না পারে, সেজন্য কমিশন সুপ্রিম কোর্টের কাছে যেতে চেয়েছিল। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও নেওয়া হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। আর সুপ্রিম কোর্টে গেলে শুনানি হবে, এছাড়াও অন্যান্য প্রক্রিয়ার জন্য সে সময়ের প্রয়োজন সেটাও হাতে নেই। তাই আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী কমিশন ১৪ জুলাই ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে ভোট না করলে রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করতে পারে। আর সংবিধান লঙ্ঘনের শাস্তি খুব মারাত্মক। মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। কাজেই এ দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ও নেবে না, কমিশনও নেবে, কেউ নেবে না।

সিইসিকে বিএনপি মহাসচিবের চিঠি

ইসি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতে সিইসি বরাবর লেখা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক চিঠিও হস্তান্তর করেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ওই চিঠিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আগামী ১৪ জুলাই জাতীয় সংসদের বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু আপনি অবহিত আছেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া দেশের উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের দু’টি আসনে আগামী ১৪ জুলাই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি গভীর ভাবে ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত। আমরা নির্বাচন কমিশনের উল্লিখিত উপ-নির্বাচনের ভোট-গ্রহণের এ সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও চরম হুমকি স্বরূপ। সে কারণে জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা এ দুটি উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই জনস্বার্থ বিবেচনায় কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নির্বাচন না পেছালে ব্যালট পেপারের আমাদের প্রার্থীর প্রতীক না রাখারও জন্যও ইসি সচিবকে বলেছি। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কি-না জানিনা।

ব্যালট পেপারে বিএনপির প্রার্থীর প্রতীক না রাখার দাবির প্রসঙ্গে মো. আলমগীর বলেন, আইন অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। এই সময়ের পর আইনগতভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বৈধ প্রার্থী যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে নির্বাচন বর্জন করেন, তবুও তার নামে প্রতীক ব্যালট পেপারে ছাপা হবে।

বগুড়া-১ আসন:

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর আসনটির উপ-নির্বাচনের বৈধ ছয় প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের সহধর্মিণী সাহাদারা মান্নান (নৌকা), বিএনপির একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মো. রনি (বাঘ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নজরুল ইসলাম (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (ট্রাক)। এ নির্বাচনে মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন

গত ১৮ জানুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এরপর শূন্য আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

যশোর-৬ আসন:

এ আসনে বৈধ তিন প্রার্থী প্রতীক পেয়েছিলেন। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদারকে (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (লাঙ্গল)। এ আসনে ২ লাখ ৩ হাজার ১৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইসমাত আরা সাদেক জয়ী হন। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি তিনি মারা যান। এর শূন্য আসবে নির্বাচনের তফসিল দেয় ইসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top