ওএমএস তালিকায় জালিয়াতি – ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর কাউন্সিলর মাকবুল বরখাস্ত
জেলা প্রতিনিধিঃ এলাকার সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম দুস্থদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য তালিকায় (ওএমএস) রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাকবুল হোসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ মে) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্তের কথা উল্লেখ করা হয়।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, একটি সচ্ছল পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয় স্বজনসহ ১৫ জন ব্যক্তির নাম ওমএমসের ভোক্তা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং আপনার দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২ (১) (খ) ও (ঘ) অনুযায়ী স্বীয় পদ হতে অপসারণের লক্ষে আপনাকে একই আইনের ধারা ৩১ (১) অনুযায়ী সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ওই প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়।
ব্রাহ্মণবড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন কাউন্সিলরকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের ই-মেইলে এসেছে। এটি কাউন্সিলর মাকবুল হোসাইনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
কাউন্সিলর মাকবুলকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুস্থদের জন্য বরাদ্দ ওএমএস এর ১০নং ওয়ার্ডের তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ওএমএস ডিলার মো. শাহ আলমের পরিবার ও বেশ কয়েকজন স্বজনের নাম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তালিকার ১২ নম্বরে মেয়ে তার আফরোজা ও ১৬ নম্বরে রয়েছে স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলমের নাম। এছাড়াও শাহ আলমের তিন ভাই-বোন পরিবহন শ্রমিক নেতা মো. সেলিম, মো. আলমগীর ও শামসুন্নাহারের নাম রয়েছে ৮, ৯ ও ২৭ নম্বর ক্রমিকে। আরেক ভাই খোরশেদ মিয়ার ছেলে নাছিরের নাম রয়েছে সাত নম্বরে। অথচ নাছির দেশেই থাকেন না। তিন নম্বরে রয়েছে শ্যালক তাজুল ইসলাম ও ১৩ নম্বরে শ্যালক শফিকুল ইসলামের নাম। আরেক শ্যালকের স্ত্রী জান্নাতুল ইসলামের নাম রয়েছে ১০ নম্বরে। শাহ আলমের বোনের তিন দেবর মতিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান, লুৎফুর রহমানের নাম রয়েছে ৭২, ৭৩ ও ৭৪ নম্বরে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকবুল হোসেনের নিজের ভাই গোলাম রাব্বানী, মো. হানিফ ও মো. আরিফের নামও রয়েছে তালিকায়। হানিফ ও গোলাম রাব্বানী পেঁয়াজ রসুন ব্যবসায়ী এবং আরেক ভাই আরিফ কাঁচামালের ব্যবসায়ী। এছাড়া ওই ওয়ার্ডের হাসেন আল-মামুন, বশির মিয়া, সেলিনা বেগম, মো. ইকবাল, মিনারা বেগমের নাম উঠেছে তালিকায় যারা স্থানীয়ভাবে সচ্ছ্বল হিসেবে পরিচিত। এ অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই ওয়ার্ডের ২২ জনকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেয় ওএমএস কমিটি। পাশাপাশি তালিকা তৈরিতে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়। বাতিল করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমের ডিলারশিপ।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকবুল হোসাইন রাত আটটার দিকে বলেন, ‘বরখাস্তের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনও কাগজপত্র পাইনি। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করবো।’