কক্সবাজারের পেকুয়ায় ত্রাণ কেলেঙ্কারি : সব অভিযোগ ইউএনওকে ঘিরেই
জেলা প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের পেকুয়ায় ত্রাণের ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় তদন্ত করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি।
গত ৪ মে দিনভর সব ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব, পিআইও ও উপজেলার কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য নিয়েছেন কমিটি।
রোববার দ্বিতীয় পর্যায়ে অধিকতর শুনানির জন্য পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে তলব করা হয়। এর মধ্যে বহিষ্কৃৃত চেয়ারম্যান বাদে বাকি ছয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউএনও সাঈকা শাহাদাতের কর্মকা- তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে।
একই অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবও। জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। কাজ শেষ হওয়ার আগে কিছু বলতে পারছি না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করি। এ ঘটনায় ইউএনওর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এমনটি মনে হওয়ায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটি বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া আর কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।
সূত্র জানায়, কমিটি বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর বক্তব্যও নিয়েছেন। তারাও বিভিন্ন সময় আলোচিত ইউএনওকে ঘুষ দেয়ার মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ দিয়েছেন লিখিতভাবে।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব যৌথভাবে ‘দুর্নীতিবাজ’ ইউএনওর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের আবেদন জানান। তদন্তকারীদের কাছে সাক্ষ্য দেয়া বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ করে বুঝা যায় তদন্ত কমিটির কাছে যত অভিযোগের তীর ইউএনওকে ঘিরেই। সাক্ষ্য দেয়া বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা ত্রাণের চাল আত্মসাতের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়েছেন এবং ইউএনও সম্পর্কে ধারণা চেয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের একজন সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহাব উদ্দিন ফরাজির ছেলে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান ফরাজি। তিনি সম্প্রতি তার ফেসবুক ওয়ালে তার বৈধ বালি মহালের অভিযান চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে তার কাছ থেকে ইউএনও ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত টিমের কাছে সাক্ষ্য দেয়ার পর তিনি বলেন, আমি ঘটনার বিস্তারিত তাদের জানিয়েছি। অভিযোগকারী আরেকজন পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি কপিল উদ্দিন বাহাদুর।
পেকুয়া উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি যৌথ অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বর্তমান ইউএনওর স্বেচ্ছাচারী মনোভাব এবং তার নানা কর্মকা-ের কারণে আমাদের অসন্তুষ্টি থেকেই আমরা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই এ অভিযোগটি করেছি।
যৌথ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন, পেকুয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ, মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম, রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূর, বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মওলানা বদিউল আলম জিহাদী। এদিকে উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘তদন্ত কমিটি আমাদের কাছে আলোচিত ১৫ মে. টন চালের বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা এ বিষয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে আমাদের বক্তব্য প্রদান করি।’
আলোচিত টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল আলিম। ১৫ মে. টন চাল আত্মসাতের বিষয়ে যার সাথে কক্সবাজার-১ আসনের এমপির জাফর আলমের একটি কথোপোকথন ফাঁস হয়ে বেশ আলোচিত হন তিনি। ফাঁস হওয়া কথোপকথনে আলিম জানান, তিনি নিজেই চেয়ারম্যানের নির্দেশে ইউএনওর কাছে আড়াই টন চাল পৌঁছে দেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি তাকে বিশেষভাবে জেরা করেন বলে জানা গেছে।
সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে গতকাল মোবাইলে জানতে চাইলে পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা শাহাদাত জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করে থাকলে সেটি তাদের ব্যক্তিগত মতামত। কিন্তু এ ধরনের কোনো কাজ আমি করিনি।’ আপনার কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকে তাহলে আপনাকে কেন ডাকা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে কাউকে ডাকতে পারেন। এ তদন্তাধীন বিষয়ে আমি এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’
ঘটনাটি অধিকতর তদন্তের জন্য গত ৭ মে একটি পত্রের মাধ্যমে পেকুয়ার ইউএনওসহ ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে তলব করা হয়। তলব করা অন্যরা হলেন, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কামাল পাশা, সাবেক পিআইও সৌভ্রাত দাশ, বর্তমান পিআইও আমিনুল ইসলাম, বহিষ্কৃত টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম, টইটং ইউপি সচিব আবদুল আলিম, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কার্যসহকারী শামিম ও উপজেলা ভূমি অফিসের পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো: রাজিব।