দেশে ইতিহাসে দণ্ডপ্রাপ্তের সাজা স্থগিত বিধানের প্রয়োগ এটাই প্রথম
রাজনৈতিক প্রতিবেদকঃ নির্বাহী ক্ষমতাবলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করেছে সরকার।
দেশ স্বাধীনের পর বিচারাধীন মামলায় আসামিদের প্যারোলে মুক্তির অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামির দণ্ড স্থগিতের কোনও নজির ছিল না।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের ঘটনাকে বাংলাদেশে প্রথম নজির বলে মনে করছেন প্রবীণ আইনজ্ঞরা।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখা হবে।
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) দুপুরে মন্ত্রীর গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
নির্বাহী বিভাগ অর্থাৎ সরকার কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় বলা আছে— কোনও ব্যক্তি কোনও অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনও সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয়, সেই শর্তে তার দণ্ড কার্যকরকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবে।
তবে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার ব্যবহার আগে কখনও প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এর আগে এই ধারায় সাজা স্থগিত করার কোনও নজির ছিল না। তবে এটাই প্রথম।’
এর আগে অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী বা সাধারণ আসামি প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন। মূলত সাজা হওয়ার পরেই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার বিধান প্রযোজ্য হয়। আর প্যারোলের বিধান সাজা হওয়ার আগেই প্রযোজ্য হয়। সেসব বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মাধ্যমে ৪০১(১) ধারার ব্যবহার দেশে প্রথম বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারেননি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে বলতে পারছি না, আমার খেয়াল নেই।’
এদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘আমি এর আগে এ ধারার প্রয়োগ কখনও হতে দেখিনি। প্যারোলে মুক্তির অনেক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ৪০১(১) ধারার প্রয়োগ এটাই প্রথম।’
ওই ধারায় বয়স ও অসুস্থতার দিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মাধ্যমে সরকার তাদের উদারতা দেখিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ১ উপধারায় আসামিদের দণ্ড স্থগিতের বিষয়ে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হলেও পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো একই ধারার ২, ৩, ৪, ৪ (ক), ৫, ৫ (ক) এবং ৬ উপধারায় বর্ণিত হয়েছে। এসব উপধারায় দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা, আবেদনটির পরবর্তী কার্যকারিতা, শর্তসাপেক্ষ মুক্তি নিয়ে শর্তভঙ্গের ফলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারসহ আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।