শিশুর পরিচয় প্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ; রাজশাহীর এসপির ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট নয় – হাইকোর্ট
আদালত প্রতিবেদকঃ চলতি বছরের ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা বাদি হয়ে পুঠিয়া থানায় আটজনকে আসামি করে এজাহার দেন। ওই এজাহারে বলা হয়, শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। কিন্তু ওই এজাহারটি গ্রহণ করেননি ওসি। পরবর্তীকালে বাদিকে ডেকে নিয়ে জব্দ তালিকা, সুরতহাল প্রতিবেদনসহ কিছু সাদা কাগজের উপর স্বাক্ষর নিয়ে রাখে পুলিশ। পরবর্তীকালে ওই সাদা কাগজে এজাহার টাইপ করে থানায় তা রেকর্ডভুক্ত করা হয়। বাদি কর্তৃক থানায় প্রেরিত এজাহারের বর্ণনার সঙ্গে দায়েরকৃত এজাহারের বর্ণনার মধ্যে অসঙ্গতি বিদ্যমান। সর্বোপরি এজাহারে আটজনকে আসামি করা হলেও পুলিশ কর্তৃক সৃজনকৃত এজাহারে কোন আসামি নাম উল্লেখ ছিলো না। সেখানে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করা ছিল। যা রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে। এজন্য থানার ওসিকে দায়ী করা হয়।
হাইকোর্ট বলে, থানার ওসির মত দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগ গুরুতর ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে গত ১১ জুন নিগার সুলতানা কর্তৃক প্রেরিত মূল এজাহারটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্সকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার মামলাটির তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আদালত প্রত্যাশা করে।
হাইকোর্ট বলেছে, শ্রমিক নেতা নুরুল হত্যা মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় এক শিশু। রাজশাহীর পুলিশ প্রেস-বিজ্ঞাপ্তর মাধ্যমে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। কিন্তু শিশু আইনের ৮১ ধারা অনুযায়ী শিশুর স্বার্থের পরিপন্থী কোন ছবি বা তথ্য গণমাধ্যমে বা ইন্টারনেটে প্রচার করা যাবে না। যা দ্বারা শিশুটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা যায়। এ বিষয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার দেয়া ব্যাখ্যা স্পষ্ট নয় বলে মনে করে হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, এ ঘটনায় একজন শিশুর জবানবন্দি প্রেস-বিজ্ঞপ্তি আকারে গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করে রাজশাহীর পুলিশ প্রশাসন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং আইন ভঙ্গ করেছেন। তাই শিশু আইন সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের সচেতনতামূলক ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে আইজিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ওই হত্যার ঘটনার পর এক শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই শিশুর দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রকাশ করে পুলিশ।
যেখানে বলা হয়, শিশুকে অনৈতিক আচরণে বাধ্য করায় নুরুল ইসলামকে হত্যা করে। যদিও ওই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল তার পরিবার। তারা বলছে, মূল আসামিদের বাঁচাতে ও ঘটনা ভিন্নখাতে নিতেই এই শিশুকে আটক করা হয়েছে।