ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রওশনুল হক তুষারের ক্ষমতার উৎস কোথায়?

PicsArt_09-09-09.16.01.jpg

ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রওশনুল হক তুষারের এই ক্ষমতার উৎস কোথায়?

স্টাফ রিপোর্টঃ ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কূচক্রি মহল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী কুমারপুর গ্রামে বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তাকে একঘরে করে জমি দখলের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানায়, ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাসির উদ্দীন ১৯৭০ সালে সদর উপজেলার কুমারপুর গ্রামে ৩২ শতক জমি ক্রয় করেন।

জমি ক্রয়ের পর থেকে তিনি তা ভোগ দখল করে আসছেন। ক্রয়কৃত জমিতে স্থাপনা তৈরীর জন্য ইট, বালিও ফেলেছেন। অপর দিকে ২০১৫ সালে জমির সীমান্ত ঘেষে এলাকাবাসী একটি মসজিদ নির্মান করেন। মসজিদের নামকরণ করা হয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুল হক খোকার নামে আজিজ নগর জামে মসজিদ।

ওই জমির ওপর মসজিদ কমিটি অজুখানা নির্মান করে এবং মসজিদের ছাদের কিছু অংশ পড়ে যায় ওই জমিতে।

এ নিয়ে তিনি আপত্তি তুললে গত ৩ সেপ্টেম্বর মসজিদ কমিটি মুসল্লিদের সহযোগিতায় তা ভেঙ্গে ফেলে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় স্বার্থনেশ্বী মহল ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয়দের ক্ষেপিয়ে তুলছে এবং মসজিদ কমিটি তার জমির প্রবেশ মুখে দেয়াল নির্মান করে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এই ঘটনার পিছনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রওশনুল হক তুষারের হাত আছে। তার কলকাঠিতেই এ সকল ঘটনা ঘটছে।

বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাসির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মসজিদ কমিটি আমার জমির উপর অজুখানা নির্মান করে এবং মসজিদের ছাদের কিছুটা অংশ আমার জমির উপর পড়ে, যা নিয়ে আমি আপত্তি তুলি। এর সমাধান চেয়ে মসজিদ কমিটির নিকট আবেদনও করি। কিন্তু তারা সমাধানের চিন্তা না করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মুসুল্লিদের ক্ষেপিয়ে তুলে।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিষু মোহাম্মদ বলেন, ভাই আমি আলু বেচি খাই।মসজিদ কমিটির সভাপতি হতে চাইনি জোর করে বানাইছে। রাস্তা বন্ধ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ভূল বোঝাবুঝি হইছে। আমরা রাস্তা বন্ধ করব না। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসে দেখে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

তবে ইতিপূর্বে, নামমাত্র মূল্যে ৩২ শতক জমি বিক্রয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু জমির মালিক জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় মদদপুষ্ট স্থানীয় হারুনকে দিয়ে দখলের জন্য প্রথমেই জমিতে ঘড় তোলে। যদিও স্থানীয় গন্যমান্যব্যাক্তিরা মাধ্যস্থতায় পরে ঘড় সরিয়ে দেয়।

সেই ঘটনায় উত্তেজিত মনোভাব নিয়ে তাসির উদ্দিনের জমির সামনে সীমানা প্রাচীর নির্মান করে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। কোনভাবেই সেই জমিতে প্রবেশ করতে পারছে না। তাসির উদ্দিন তার নিজের ঘড় তৈরীর নির্মান সমগ্রী নিয়ে জমিতে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। পরে নির্মান সামগ্রী রড, সিমেন্ট রাস্তায় ফেলে আসতে বাধ্য হন। এছাড়াও স্থানীয় জমি সংলগ্ন জয়নাল আবেদীন স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে সহায়তা করছে বলেও জানায় স্থানীয়রা।

মসজিদ কমিটির সভাপতি বলেন, আমি এসবের বাহিরে

ভূমি নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, কোন মানুষের জমির প্রবেশ পথে দেয়াল নির্মান করা বে-আইনি। এটা অমানবিক এবং মানবাধিকার লঙ্খন। যা আইনিভাবে অবৈধ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার(ভূমি) বর্নি শিখা আশা এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রবেশ পথে দেয়াল নির্মান বিষয়টি বে-আইনি। কোন মানুষের প্রবেশ মুখে দেয়াল নির্মান করতে পারে না। জমির মালিক চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রওশনুল হক তুষারের সম্পর্কে স্থানীয়রা বলেন, আওয়ামী লীগ এর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি লোকজনের সাথে দূর্ব্যবহার করেন এবং অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তিনি “পিয়াস তিমু ফিলিং স্টেশন” সহ নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যায়ের খোঁজ খবর করলে সরকারের কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগটি বেড়িয়ে আসবে।

রওশনুল হক তুষার নিজে এবং তার লোকজন এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরীর জন্য এলাকায় গেলে গণমাধ্যম কর্মিদের নানা রকম হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার অন্যায় কাজের সংবাদ প্রকাশ হলে সেসব সংবাদের সেচ্ছায় প্রতিবাদ দেওয়ার জন্য নানা ভাবে হায়রানি করছেন, এমন অভিযোগ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মিদের।

তার নানা রকম অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দূর্নীতির সচিত্র প্রতিবেদন করলে, ২০১৭ সালে সমকাল পত্রিকার ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি’কে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। সেই প্রতিনিধির মাথায় আঘাতের সংবাদ প্রকাশ হয় ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালের দৈনিক সমকাল পত্রিকায়।

রওশনুল হক তুষারের কাছে এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনে কত বড় সাংবাদিক হইছেন? আপনি জানেন আমি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের সদস্য। আমার ভগ্নীপতি ও বড় সাংবাদিক।

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সাদেক কুরাইশী শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এ সময় তিনি বলেন, কারো চলাচলের রাস্তায় বন্ধ করা যায় না। এটা বে-আইনি। চলাচলের জন্য রাস্তা দেওয়া উচিৎ।

স্থানীয় লোকজন এমন দম্ভ ও ক্ষমতার বিষয়ে বলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যায় ও দূর্নীতি বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী এবং সংস্যদদের ক্ষমা করেন না, সেখানে ঠাকুরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য রওশনুল হক তুষারের এই ক্ষমতার উৎস কোথায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top