এলজিইডি’র জাবেদ করিমের বিপুল সম্পদের উৎস কোথায়! অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন
অপরাধ প্রতিবেদকঃ (৫ আগস্ট ২০২৪) ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সরকারি চাকরি টাকা কামানোর যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে অনুসন্ধান ও তদন্তে জানা যাচ্ছে বিভিন্ন দপ্তরের রাঘববোয়ালদের সম্পর্কে, যারা অবাধে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে। এমন একজন জাবেদ করিম।
বর্তমানে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট) পদে রয়েছেন।
সারা দেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণ করা সড়ক সেতুর চিত্র হচ্ছে, অনেক জায়গায় সেতু আছে তো রাস্তা নেই, আবার রাস্তা থাকলেও ব্যবহারের উপযোগী নয়।
সড়ক সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কিছু হোক আর না হোক, জাবেদ করিমের ভাগ্যে টাকার মেশিন ঘুরছে শত কিলোমিটার গতিতে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নেওয়া জাবেদ করিম এখন নিজেকে বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দিচ্ছেন।
জাবেদ করিমের সম্পদের হিসাবের বিবরণ দিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা মো. আরমান হোসেন।
সেই অভিযোগ থেকে তার সম্পদের পাহাড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় আগারগাঁওয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে যান জাবেদ করিম। তার টাকা তৈরির মেশিনে জ্বালানি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. জাহিদ হোসেন চৌধুরী। জাহিদের সঙ্গে ভাগ-বাটোয়ারা করে সম্পদের পাহাড় গড়েন জাবেদ।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি এলজিইডির সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকাকালে জাহিদের সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক এবং জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নে ছিল তাদের বিশাল বাণিজ্য।
অভিযোগ রয়েছে, পদভেদে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকার বেশি নিতেন জাবেদ-জাহিদ মিলে।
আরমান হোসেনের অভিযোগ ছাড়াও এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকেও জাবেদ করিমের অবৈধ সম্পদের কিছুটা আভাস পাওয়া গেছে। এলজিইডির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাবেদ করিম কাউকেই পাত্তা দিতেন না। বদলি কিংবা প্রকল্পের পরিচালক হতে হলে টাকা দিতে হতো। সেই টাকার ভাগ যেত মন্ত্রীর এপিএস জাহিদের কাছেও।
জাবেদ করিমের কোথায় কী সম্পদঃ
এলজিইডির মুন্সীগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে প্রতিটি কাজের জন্য তিনি ২ শতাংশ করে ঘুষ নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন সেখানে শতকোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। সেই সময় তার ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৯ টাকার অডিট আপত্তি রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় তিনি টাকা নয়ছয় করতেন।
এরপর বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পের (এমডিএসপি) পরিচালক থাকাকালে প্রায় শতকোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর গুলশান ১-এর ১৩০ নম্বর সড়কের ১১/বি-এর আশক্স আমারি ওয়ে ডেভেলপার্স এলটিডির পাশে ৩০ কাঠা জমির ওপর বিশাল গ্যারেজ রয়েছে জাবেদ করিমের। গ্যারেজটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। এ ছাড়া উত্তরা, বনানী, মিরপুরে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি ও ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। বনানীর ২৫/এ সড়কের ৫৫ নম্বর বাড়িটি তার। এই বাড়ি নির্মাণে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রগতি সরণির শহিদ আব্দুল আজিজ রোডের ৩০ কাঠার ৪৮নং প্লটটিও তার। প্লটটি তিনি কিনেছেন প্রায় শতকোটি টাকা দিয়ে। সেখানে পেইন টেকিং অটোমোবাইলস নামে গ্যারেজ ভাড়া দিয়েছেন।
পূর্বাচলের ৩ নম্বর সড়কের ৬৫ নম্বর প্লটটি ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন। গাজীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন ৮ নম্বর রোডের ৭৫ নম্বর বাড়িটিও তার। এই বাড়িটি তিনি ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কিনেছেন।
উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িতে ৩২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া আফতাবনগরের ২ নম্বর সড়কের ৯৮ নম্বর প্লটটিও স্ত্রীর নামে কিনেছেন ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে। বসুন্ধরা আবাসিকের ডি ব্লকে ৭ নম্বর সড়কের ৬৯ নম্বর প্লটটি ৪০ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। সেখানে ৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ৯ নম্বর রাস্তার ৩৬ নম্বর বাড়িটি ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন।
কেরানীগঞ্জের ৬ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে ৩৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে ব্যয় করেছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ই ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লট ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকায় কিনেছেন। ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ৪ নম্বর সড়কের ৮৫ নম্বর প্লটটি স্ত্রীর নামে কিনেছেন ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায়।
এসব সম্পদের ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে জাবেদ করিমের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মূল্যবান বক্তব্য জানা সম্ভব হয় নি। এমনকি তার অফিসেও যোগাযোগ করে তার বক্তব্য জানা যায় নি।
আরও সংবাদ পড়ুন।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সেখ মোহাম্মদ মহসিন এর অনিয়ম-দুর্নীতি
আরও সংবাদ পড়ুন।
এলজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পিআরএল) মজিবুর রহমান সিকদারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আরও সংবাদ পড়ুন।
আয়বহির্ভূত সম্পদ – সড়ক ও জনপথের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন কারাগারে
আরও সংবাদ পড়ুন।
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিজি আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রী’র বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আরও সংবাদ পড়ুন।
পিরোজপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাত্তার হাওলাদারের অনিয়ম ও দূর্নীতি
আরও সংবাদ পড়ুন।
পিরোজপুরে মঠবাড়িয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে – দুদকে অভিযান
আরও সংবাদ পড়ুন।
এতটাকা কোথায় পেল প্রকৌশলী নজরুল? জড়িত ভোলা ও বরিশালের ঠিকাদারা
আরও সংবাদ পড়ুন।
এলজিইডি ঢাকা-এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্নসাতের অভিযোগে – দুদকের অভিযান
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
এলজিইডি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অর্থ উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ – দুদকের অভিযান
আরও সংবাদ পড়ুন।
পনের বছরের জঞ্জাল একদিনে পরিষ্কার হবে না – স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা
আরও সংবাদ পড়ুন।
চট্টগ্রামে বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরী – স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা