আয়ের ১০ শতাংশ ছাত্রবৃত্তি তহবিলে, ৫ শতাংশ গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীর অর্ধেক হবে সান্ধ্য কোর্সে
শিক্ষা প্রতিবেদকঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিয়মিত শিক্ষার্থীর অর্ধেক হবে সান্ধ্য কোর্সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে নীতিমালা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নানা আলোচনা-সমালোচনা, রাষ্ট্রপতির তাগিদের পর এ নীতিমালা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
গত মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে এ নীতিমালা অনুমোদিত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, বিভাগগুলো নিয়মিত শিক্ষার্থীর অর্ধেক শিক্ষার্থী ভর্তি করাবে প্রফেশনাল কোর্সে, অর্থের হিসাব থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে, বেঁধে দেওয়া হয় বিভাগওয়ারী কোর্সের সংখ্যাও। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে সমালোচিত হয় সান্ধ্যকোর্স।
নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবহেলা, অর্থের অনিয়ম, ফি বেশি নেওয়া, নিয়মিত শিক্ষার্থীর চাইতে সান্ধ্যকোর্সে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি, সান্ধ্যকোর্সের প্রতি শিক্ষকদের ঝোঁক, নীতিমালা না থাকা ইত্যাদি কারণে সমালোচিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকোর্স। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্যকোর্স নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষকদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে ঐ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে (শিক্ষা) আহ্বায়ক করে সান্ধ্যকোর্স নীতিমালা প্রণয়ন করতে কমিটি গঠন করে দেন।
দীর্ঘ দুই বছর পর চলতি বছরের মার্চ মাসে অনুমোদন পায় সান্ধ্যকোর্সের নীতিমালা। নীতিমালায় সান্ধ্যকোর্স শব্দটি পরিবর্তন করে প্রফেশনাল বা এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স কোর্স নামে অবিহিত করা হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে বিভাগগুলো চাইলেও একটি বিভাগ একটির বেশি কোর্স পরিচালনা করতে পারবে না। এক বছরে সর্বোচ্চ দুই সেশনে ভর্তি করা যাবে। কোর্সে চাকরিজীবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কোর্সের শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়মিত শিক্ষার্থীর অর্ধেক হতে হবে এবং ন্যূনতম ৪০ জন না হলে কোর্স চালু করতে পারবে না। প্রফেশনাল কোর্সের শিক্ষার্থীদের ভিন্ন কালারের আইডি কার্ড প্রদান করবে বিশ্ববিদ্যালয়।
আর্থিক হিসাব থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে
এদিকে কোর্স পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ভর্তির হিসাব থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট ব্যাংকে। সেখান থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, সংশ্লিষ্ট ডিন বা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের অফিস ৫ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ছাত্রবৃত্তি তহবিল ১০ শতাংশ, গবেষণার জন্য ৫ শতাংশ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের উন্নয়নের জন্য ৫ শতাংশ ও প্রোগ্রাম পরিচালনা বাবদ ৪৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে।
বছর শেষে কোর্সের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাব নিয়ে অডিট করতে হবে। তা না হলে পরবর্তী কোর্সের অনুমোদন পাবে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ। চলমান কোর্সের অনুমোদন নতুন করে নেওয়ার জন্য পূর্বের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
রিসোর্স পারসন হিসেবে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষক রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের রিসোর্স পারসন ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সান্ধ্যকোর্স বিধিমালা প্রণয়ন কমিটি আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সান্ধ্যকোর্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলে আসছে। মাননীয় চ্যান্সেলরও এ বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শ, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাজ ও জাতির চাহিদা বিবেচনা এ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।