রাজধানীতে প্রবাসীর কেনা ফ্ল্যাট দখল করার অভিযোগ কৃষিবিদ দম্পতির বিরুদ্ধে

রাজধানীতে প্রবাসীর কেনা ফ্ল্যাট দখল করার অভিযোগ কৃষিবিদ দম্পতির বিরুদ্ধে

অপরাধ প্ররতিবেদকঃ জোরপূর্বক এক প্রবাসীর কেনা ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ উঠেছে কৃষিবিদ স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে।

রাজধানীর তেজগাঁও মণিপুরিপাড়ায় সি/৭, বাড়ি নং- ২০/এ/বি, ফ্ল্যাটটি দখলে রেখেছেন কৃষিবিদ হোসনে আরা (রীনা) এবং তার স্বামী কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হোসনে আরা (রীনা) ঢাকায় খামারবাড়িতে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন তিনি জোরপূর্বক প্রবাসীর ফ্ল্যাটটি ভোগ-দখল করে আসছেন। এ বিষয়ে ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী প্রবাসীর পক্ষে আবু সায়েদ সিদ্দিকী। ১৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় জোরপূর্বক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।

ভুক্তভোগী ওয়েস্টার্ন ভিউ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামছুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, কৃষিবিদ হোসনে আরা (রীনা) দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ফ্ল্যাটটি দখলে রেখেছেন। তাকে অসংখ্যবার ফ্ল্যাট খালি করার জন্য অনুরোধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হলে তিনি ফ্ল্যাটটি নিজের দাবি করেন। বিভিন্ন রকম কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর হুমকি দেন। তিনি মূলত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিত্বের নাম ভাঙিয়ে তার খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিসে এবং ওই মাতৃছায়া নামক হোল্ডিংয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।

ভুক্তভোগী সামছুজ্জামান চৌধুরী আরও জানান, হোসনে আরা রিনা প্রতিমাসে ভাড়া দেবেন বলে ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাসা ভাড়া কিংবা সার্ভিস চার্জ দিতেও রাজি নন তিনি। তার কাছে এগুলোর জন্য বিভিন্ন সময় যাওয়া হলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা করতেন। অন্যের ক্রয়কৃত ফ্ল্যাট জোর করে দখলে রেখেছেন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে হোসনে আরা রিনা বলেন, আমার কাছে ফ্ল্যাট ক্রয়ের সব কাগজপত্র ও তথ্যপ্রমাণ আছে।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী জানান, হোসনে আরা যা বলছে, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বাস্তবিক অর্থে তার কাছে লিগ্যাল কোনো ডকুমেন্ট নেই। আমি সাফ-কবলা দলিল দেখতে চেয়েছি, সেটাও হোসনে আরা আমাকে দেখাতে পারেননি।

হোসনে আরা উলটো আমাকে বলে, আপনাকে কেন দেখাব? আপনি কে? ফ্ল্যাটের মূল মালিক লোকমান হোসেন এবং আমমোক্তারমূলে মালিক ওয়েস্টার্ন ভিউ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামছুজ্জামান চৌধুরী। ভুক্তভোগী লোকমান হোসেন ফ্ল্যাটটি ওয়েস্টার্ন ভিউ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামছুজ্জামান চৌধুরীর মাধ্যমে জনৈক ক্রেতার কাছে যাবতীয় হক-হুকুমসহ সাফ-কবলা দলিলমূলে হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অসংখ্যবার অনুরোধ করা হলেও হোসনে আরা (রিনা) ফ্ল্যাটটির দখল বুঝিয়ে দিচ্ছে না। তাই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ইনটেলিজেন্স সংস্থা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ বিষয়ে লোকমান হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বাসা ভাড়ার নামে ফ্ল্যাটে উঠে এভাবে দখলের এমন অযৌক্তিক ঘটনা এর আগে কখনো দেখিনি। একজন সাধারণ সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে এমন হীন কাজ করেন। তিনি কীসের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট দখল করে রেখেছেন, তা তদন্তকারী সংস্থাকে খতিয়ে দেখে হোসনে আরার (রিনা) বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।


হোসনে আরা (রিনা) তার পরিবার-পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবসহ এলাকার মানুষকে ওই মাতৃছায়া অ্যাপার্টমেন্টের মালিক পরিচয় দেন। যার জন্য তিনি কৌশলে পুরো ছাদ একা দখল করেন এবং ছাদে তার স্বামী কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমানের নামে জোর করে একটি ছাদ বাগান করেন।

বাগানের নামকরণ করেন, ‘ছাদ কৃষি, কিচেন কম্পোস্ট ও ড্রিপ ইরিগেশন প্রদর্শনী’। যাতে বাগান মালিক হিসাবে ওবায়দুর রহমানের নাম ব্যবহার করে। যেন মানুষ বুঝতে পারে, পুরো অ্যাপার্টমেন্টটি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

এছাড়াও মাতৃছায়া অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ দেখিয়ে কৃষি ব্যাংক থেকে হোসনে আরা (রিনা) এবং তার স্বামী কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান ঋণ নেন। ওই অ্যাপার্টমেন্টের অন্য ফ্ল্যাট মালিকদের ছাদে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। তার অবৈধ ক্ষমতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে অন্যান্য ফ্ল্যাট মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। থানা কিংবা পুলিশি মামলা করতে চাইলে বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে হুমকি দেন। তাই ফ্ল্যাট মালিকরা নিরুপায় হয়ে চুপ আছেন।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি ওই মাতৃছায়া হোল্ডিং এবং জমির মালিক গোলাম মোস্তফার সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে হোসনে আরা রিনার যাবতীয় অপকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top