মানব পাচারে বিএমইটি সিন্ডিকেট জালিয়াতি; তদন্তে উঠে এসেছে রাঘববোয়ালদের নাম
অপরাধ প্রতিবেদকঃ বৈদেশিক কর্মসংস্থানে অনিয়ম ঠেকানোর দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোই (বিএমইটি) ঠকাচ্ছে বিদেশগামী কর্মীদের। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট জালিয়াতি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের ভুয়া বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতি ছাড়াই, অর্থাৎ চাকরি না দিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালরা ভুয়া স্মার্ট কার্ডে কর্মীদের বিদেশ পাঠিয়েছে। বিএমইটির ৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ছয় রিক্রুটিং এজেন্সি জালিয়াতিতে জড়িত বলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে তদন্ত হয়েছে সীমিত পরিসরে- আমিরাতে লোক পাঠানো মাত্র আটটি এজেন্সির বিরুদ্ধে। অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও স্মার্ট কার্ডে একই ধরনের জালিয়াতি ঘটেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ২৮ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলেও এখনও ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। তবে ইতালি সফরে থাকা প্রবাসীকল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন গণমাধ্যমে বলেছেন, কমিটি প্রতিবেদন সংশোধন করে মাসখানেক আগে ফের জমা দিয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে। কেউ ছাড় পাবে না।
ভুয়া স্মার্ট কার্ডে আরব আমিরাত গিয়ে কর্মীরা বিপদে পড়ছেন। সেখানে বৈধতা ও চাকরি কোনোটাই পাননি। হাজারো বাংলাদেশি কর্মী লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমিরাত গিয়ে চাকরি না পেয়ে পার্কে ও সড়কে রাত কাটাচ্ছেন- এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তদন্তে জানা গেল, সরকারি কর্মকর্তারাই কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। শুধু রিক্রুটিং এজেন্সি নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে নেওয়া স্মার্ট কার্ড বিক্রি করা হয়েছে আদম ব্যাপারী, এমনকি দালালের কাছেও। এজন্য কর্মীপ্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি সিন্ডিকেটে জড়িত বিএমইটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট সাইদুল ইসলাম। তিনি ২০১৯ সালে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন ডাটাবেজের তথ্য মুছে ফেলার অপরাধে।
বাকিরা হলেন- জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা ইমারত হোসেন মোল্লা, বহির্গমন শাখার প্রধান সহকারী শামীমা ফেরদৌসী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক শেলীনা আক্তার, লিটন কান্তি চৌধুরী, উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক (যুগ্ম সচিব) হাসান মাহমুদ ও পরিচালক (উপসচিব) মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। প্রতিবেদনে নাম এসেছে বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলমেরও। ২৫ পৃষ্ঠার সারাংশসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি ৫০৭ পৃষ্ঠার।
আটটি এজেন্সির নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে স্মার্ট কার্ড ইস্যুর জালিয়াতির তদন্তে ছয়টির বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এগুলো হলো- মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-২৮৬), হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (লাইসেন্স নম্বর-৪৫২), ডালাস ওভারসিজ (লাইসেন্স নম্বর-৫৩২), আল মোবাররক ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-৫৪২), এম আক্তার অ্যান্ড সন্স (লাইসেন্স নম্বর-১২৮৪) এবং আল ফাত্তাহ ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-১৫০১)।
বাংলাদেশি কর্মীদের চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। কর্মী যে দেশে যাবেন, সে দেশের নিয়োগকারী চাহিদাপত্র দেয় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি বা সংশ্নিষ্ট দেশের এজেন্সিকে। চাকরি আছে কিনা, কর্মী বেতন পাবেন কিনা, তা যাচাই করে চাহিদাপত্র সত্যায়িত করে বাংলাদেশি দূতাবাস। চাহিদাপত্র দেশে আসার পর নিয়োগ অনুমতি দেয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। আঙুলের ছাপ ও বিভিন্ন ফি নিয়ে নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে কর্মীকে স্মার্ট কার্ড দেয় বিএমএইটি। এতে তাঁর সব বায়োমেট্রিক তথ্য থাকে। বিমানবন্দরে এ কার্ড দেখিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়। মন্ত্রণালয় যতজন কর্মীর নিয়োগের অনুমতি দেয়, এর বেশি সংখ্যক কর্মীকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, আরব আমিরাতে ২ হাজার ৯৬০ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে ৬ হাজার ৯৩৮টি স্মার্ট কার্ড দিয়েছে বিএমইটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে ন্যক্কারজনক ও অকল্পনীয় জাল-জালিয়াতি করে। অভিযোগ আছে, প্রতিটি ভুয়া কার্ডের জন্য ২ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে অভিযুক্তরা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য নিয়োগ অনুমতির ক্ষেত্রে আরও কত স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে এর হিসাব নেই। তবে সংখ্যাটি অনেক বড়। ২০২১ সালে ২৯ হাজার ২০২ জন এবং ২০২২ সালে আগস্ট পর্যন্ত ৭০ হাজার ২০৩ বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে গেছেন। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও অবৈধভাবে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে কিনা, তার তদন্ত হয়নি।
আমিরাত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার। ২০১৫ সালের পর টানা পাঁচ বছর দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ ছিল বাংলাদেশিদের জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দফা সফরে গিয়ে কর্মী নিতে অনুরোধ করেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশিদের নিয়োগ শুরু করে আমিরাত। তবে এখনও চাকরির ভিসা দিচ্ছে না। দেশটিতে ভিজিট ভিসায় গিয়ে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন বাংলাদেশিরা। এ কারণেই চাকরি ভিসা না থাকলেও আমিরাতগামী কর্মীদের স্মার্ট কার্ড দেয় সরকার। কাজের ভিসা দেওয়া অন্যান্য দেশের নিয়ম অনুসরণ করা হয় আমিরাতের ক্ষেত্রে।
তবে এর আগে নিশ্চিত করা হয়, কর্মী কোন প্রতিষ্ঠানে কত বেতনে চাকরি পাবেন। কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন। সেই অনুযায়ী চাহিদাপত্র সত্যায়িত করে দূতাবাস। যেমন, গত ১১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় গাড়িচালকের কাজে ৩০০ কর্মীর নিয়োগ অনুমতি দেয় তানজিনিত ওভারসিজ নামে রিক্রুটিং এজেন্সিকে।
এতে স্পষ্ট করা লেখা রয়েছে, দুবাইয়ের কার ট্যাক্সি সার্ভিস কোম্পানি এলএলসিতে কর্মীরা মাসিক ১ হাজার দিরহাম বেতন ও কমিশন পাবেন। দৈনিক আট ঘণ্টা ও মাসে ২৬ দিন কাজ করবেন। আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট ফ্রি। কর্মীর সব কাগজপত্র নিশ্চিত হয়ে স্মার্ট কার্ড দেবে বিএমইটি।
কিন্তু ভিজিট ভিসার সুযোগ নিয়ে আরব আমিরাতে চাকরি নিশ্চিত না করে ভুয়া স্মার্ট কার্ডে কর্মী পাঠাচ্ছে দালাল চক্র। এই জালিয়াতির তদন্তে বিএমইটি মহাপরিচালকসহ ২১ জনের জবানবন্দি নিয়েছে কমিটি।
সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতির পর রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী বাছাই করে। স্মার্ট কার্ডের জন্য কর্মীর ভিসাসহ বিএমইটির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করে। যাচাই করে পরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক বা মহাপরিচালক অনুমতি দেন। নিয়োগ অনুমতির কপি সিস্টেম অ্যানালিস্টকে দেওয়া হয়। তা তিনি সার্ভারে এন্ট্রি করেন। ভুল সংশোধন বা এডিটের ক্ষমতা একমাত্র সিস্টেম অ্যানালিস্টের।
বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (কর্মসংস্থান) মীর খায়রুল আলম জবানবন্দিতে বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সিস্টেমে ইনপুট দিতে নথি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সিস্টেমে এন্ট্রি করা হয়। সেই অনুযায়ী রিক্রুটিং এজেন্সির আবেদনে বহির্গমন ছাড়পত্রের কার্ড প্রিন্ট হয়। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতির বাইরে বহির্গমন কার্ড দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে কে, কীভাবে দিয়েছে জানা নেই।
কিভাবে জালিয়াতি হলো
কীভাবে জালিয়াতি হয়েছে তা এসেছে কম্পিউটার অপারেটর গোলাম মো. মোসলেহ উদ্দিনের জবানবন্দিতে। তিনি বলেছেন, নথিতে কর্মকর্তারা অনুমোদন দেন। নথি ও ডাটাশিট দেখে কর্মীর নাম ও পাসপোর্ট নম্বর মিলিয়ে ডাটা এন্ট্রি করেন কম্পিউটার অপারেটররা। এর আগে কল্যাণ ফি বহির্গমন শাখায় জমা দিয়ে নম্বর নিতে হয়। অবৈধভাবে স্মার্ট কার্ড ইস্যুতে টাকা জমা নেওয়া শাখা, ডাটা এন্ট্রি শাখা, সিস্টেম অ্যানালিস্ট মিলে কাজ করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও অনুমোদন নিতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কিছুই হয় না।
ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জাকির হোসেন জবানবন্দিতে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই টাকা জমা নেওয়ার নম্বর দিয়ে স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট দেওয়া সম্ভব। কিন্তু অপারেটরের পাসওয়ার্ডের বিপরীতে তা জমা হয়। ফলে ধরা পড়তেই হবে।
তদন্তে ধরা পড়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের বিপরীতে স্মার্ট কার্ড ইস্যু হলেও তা তাদের দেওয়া হয়নি। দি ট্রেড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনালের (লাইসেন্স নম্বর-৪৩১) ম্যানেজার মিজানুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, আবুধাবির আল সারাহ কোম্পানিতে ৪০০ জন এবং এডিএএ এমপ্লয়মেন্ট এলএলসিতে ৩৫ কর্মী নিয়োগে ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল ও ২৯ মার্চ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পান। তবে এডিএএতে প্রতিষ্ঠানটি ৩২ জন কর্মী পাঠিয়েছে। করোনার কারণে বিমান যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় আর কর্মী পাঠাতে পারেননি। বিলম্বের কারণে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি কর্মী নেয়নি। কিন্তু সার্ভারে দেখা যাচ্ছে, ট্রেড ফেয়ারের নামে ১ হাজার ১৪ জনের স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট হয়েছে! এগুলো সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
তদন্তে পাওয়া গেছে, ৫৭৫টি স্মার্ট কার্ড অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মীর নিয়োগ অনুমতি ছিল না। বিএমইটি কর্তৃপক্ষেরও অনুমোদন ছিল না নথিতে। স্মার্ট কার্ডগুলো দি ট্রেড ফেয়ারও পায়নি।
তদন্ত চলাকালে জালিয়াতির প্রমাণ মোছার চেষ্টা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩০ মে ওয়েবসাইটে স্মার্ট কার্ড ও ক্লিয়ারেন্স রিপোর্টের সংখ্যা সমান ছিল। কিন্তু ৬ জুন সংখ্যায় গরমিল দেখা যায়। অপরাধ আড়াল করতে এডিট ও ডিলিট করে স্মার্ট কার্ডের সংখ্যা কমানো হয়। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতির সংখ্যার সঙ্গে মিল রাখতে গিয়ে এ কাজ করা হয়েছে।
রিক্রুটিং এজেন্সির জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তে বলা হয়েছে, তাদের আবেদনের নথিতে অনুচ্ছেদ নম্বর ও পৃষ্ঠা নম্বরে অনেক কাটাকাটি রয়েছে। নথি থেকে অনেক নোটশিট সরানো হয়েছে।
মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের ৯৭১ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে ২ হাজার ১৯৪টি স্মার্ট কার্ড ইস্যু হয়েছে।
অবৈধ নিয়োগ অনুমতিও বানানো হয়েছে স্মার্ট কার্ড দিতে। রিক্রুটিং এজেন্সি হিউম্যান রিসোর্সের আবেদনে ১৫০ জনের অবৈধ নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে ১৬০টি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। এতে পরিচালক (বহির্গমন) মিজানুর রহমান ভূঁইয়াসহ পাঁচজন জড়িত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে মিজানুর গণমাধ্যমে বলেছেন, তদন্তের বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। তিনি কর্মসংস্থান শাখার পরিচালক। বহির্গমনে কর্মকর্তা স্বল্পতা থাকায় সেখানে কিছুদিন কাজ করেছেন।
মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ২৮ মার্চ আল মোবারক রিক্রুটিং এজেন্সিকে ১০০ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতি দেয়। ওই বছরের ১১ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় ১০০ স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়। এর পর ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারের তথ্য এডিট করে ১৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় আরও ৩১০টি স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। দেখা গেছে, এতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে বিএমইটি মহাপরিচালককেও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইডিয়া ইন্টারন্যাশনালের ৩২৫ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ৩১৫ জনকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়। ১০টি অবশিষ্ট থাকলেও পাঁচ দফায় ৪৯৩টি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৬ ফেব্রুয়ারি নোটশিটের ৭৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়, কোনো স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়নি। কিন্তু ৮০ অনুচ্ছেদে সাইদুল ইসলাম মতামত দেন, গত বছরের ৮ ডিসেম্বরের ২৫০ কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে ১৫০টি স্মার্ট কার্ড অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি এই অসত্য মতামত দেওয়ার দু’দিন পর মহাপরিচালক শহীদুল আলম দুবাইগামী ১৫০ কর্মীকে বহির্গমন ছাড়পত্র দিতে অবৈধ অনুমতি দেন। পরের দিন স্মার্ট কার্ডগুলো ইস্যু করা হয়। এ ক্ষেত্রে বহুমুখী জালিয়াতি, অসততা ও অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মহাপরিচালক শহীদুল আলম বিদেশে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানতে পারেনি গণমাধ্যম। তাঁর জবানবন্দির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাপরিচালকের কাছে নথি অনুমোদনের জন্য আসার আগে আরও পাঁচটি টেবিলে যায়। অবৈধভাবে স্মার্ট কার্ড ইস্যুর বিষয়ে তাঁকে কখনও জানানো হয়নি। জানালে ব্যবস্থা নিতেন।
প্রতিটি জালিয়াতির ঘটনায় দায়ী করা হয়েছে বিএমইটিতে প্রেষণে থাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তা সিস্টেম অ্যানালিস্ট সাইদুল ইসলামকে। তাঁর দাবি, তাঁকে চাকরিচ্যুত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। কেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার ভালো কেউ দেখতে পারে না।’ তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া অনিয়মের প্রমাণের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘এগুলো কোনো প্রমাণই না।’
সিআইডি গত মার্চে ভুয়া স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিতে জড়িত পাঁচ দালালকে গ্রেপ্তার করে। তবে এ অপরাধে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান গনমাধ্যমকে বলেছেন, স্মার্ট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ ভয়াবহ। এতে কর্মীরা বিদেশ গিয়ে প্রতারিত হন, সর্বস্বান্ত হন। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।