জরুরি প্রাণী চিকিৎসা সেবায় চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ প্রাণী চিকিৎসা ক্লিনিক -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
বিশেষ প্রতিবেদকঃ দ্রুততম সময়ে খামারিদের দোরগোড়ায় জরুরি প্রাণী চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে ভ্রাম্যমাণ প্রাণী চিকিৎসা ক্লিনিক চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৯৯ উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ প্রাণী চিকিৎসা ক্লিনিক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণীর পাশেই ডাক্তার এ প্রতিপাদ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আধুনিকতাকে সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রাণীদের প্রতি মমত্বের জায়গা দায়িত্বের অধীনে নিয়ে আসার জন্য মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মানুষ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স তাকে দ্রুততার সাথে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু বড় আকারের গবাদিপশুকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে তাকে যথাযথভাবে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ এতদিন ছিল না। সে জন্য সরকার পরিকল্পনা নেয় হাসপাতালে প্রাণী নয়, প্রাণীর কাছে চলে যাবে হাসপাতাল। এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। দেশে এখন পর্যন্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য মোবাইল ক্লিনিক হয়নি। কিন্তু পশুপাখি ও প্রাণীর জন্য ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশের উন্নয়নের সব জায়গায় শেখ হাসিনার পরশ পাওয়া যাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, এ দেশ ছিল তলাবিহীন ঝুড়ির তকমাযুক্ত দেশ। এ দেশকে বলা হত প্রাকৃতিক দুর্যোগের রাষ্ট্র। আজ সে দেশ বিশ্বের কাছে বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। এ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলা হয় দুর্গতদের কণ্ঠস্বর। তাকে বলা হয় মানবতার জননী, উন্নয়নের জাদুকর। তাকে বলা হয় ক্রাউন জুয়েল। তিনি অনেক দূরদৃষ্টি দিয়ে বাংলাদেশকে আজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও যোগ করেন, এ পরিবর্তনের কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। আমরা সবাই মিলে তার নির্দেশনায় কাজ করেছি বিধায় এখানে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। মাছ, মাংস ও ডিমে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। অদূর ভবিষ্যতে দুধেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসবে। মৎস্য ও প্রাণিজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারেও আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।
তিনি আরও বলেন, খাবারের একটা বড় যোগান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত থেকে আসে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের বেকারত্ব দূর হচ্ছে। এ খাত এগিয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা, জিডিপির অর্জন, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করা, বেকারত্ব দূর করাসহ নানা ক্ষেত্রে এ খাতের ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে এ খাতে সরকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ অন্যান্য খাতে যে উন্নয়ন হবে সেটি হবে বিশ্বের বিস্ময়।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, গতানুগতিকতায় নয় বরং প্রাণীদের মায়া-মমতা দিয়ে চিকিৎসা করুন, সহায়তা করুন। প্রাণীর চিকিৎসা করা আপনার দায়িত্ব। রাষ্ট্র আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার আপনাদের ভালো অবস্থানে রেখেছে। বিনিময়ে আপনাদের সেবা দিতে হবে। জরুরী প্রয়োজনে নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে নিজের মেধা খাটিয়ে কাজ করতে হবে। ভেটেরিনারি সার্জনরা ভ্যাকসিন প্রদান, কৃত্রিম প্রজনন ও প্রাণীর চিকিৎসা প্রদানের জন্য অন্যায়ভাবে কারও কাছে অর্থ আদায় করতে পারবেন না।
ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ক্লিনিকে ব্যবহৃত গাড়ির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের এ সময় নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। ভ্রাম্যমাণ প্রাণী চিকিৎসা ক্লিনিকের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রধান কারিগরী সমন্বয়ক ড. মো. গোলাম রব্বানী। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬১ টি উপজেলায় ৬১টি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বিতরণ করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে আজ আরও ২৯৯ টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে একটি করে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক প্রদান করা হয়েছে।