মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে – শ ম রেজাউল করিম
সাগর চৌধুরীঃ জলবায়ু সহনশীল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদনে সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
রবিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কেআইবি কনভেনশন হলে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত ‘বৈরী আবহাওয়ায় কৃষিজ উৎপাদন: অস্থিতিশীল বৈশ্বিক কৃষি পণ্যের বাণিজ্য’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশ আমরা মোকাবিলা করছি। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতায় হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের প্রজাতি উদ্ভাবন করে তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে দেশে ৬৪টি প্রজাতির দেশীয় মাছ হারিয়ে গিয়েছিল। গবেষণার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৪টি বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল ও চাষ পদ্ধতি আমাদের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে। অতি সম্প্রতি মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ৬ বছর গবেষণার মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির শোল মাছের প্রজনন কৌশল আবিষ্কার করেছে। ময়মনসিংহে মাছের লাইভ জিন ব্যাংক করে সেখানে ১০২ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। কোন অঞ্চলে কোন বিশেষ মাছ হারিয়ে গেলে জিন ব্যাংক থেকে মাছের পোনা সে অঞ্চলের নদী-নালা, হাওর-বাওড়ে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।
শ ম রেজাউল করিম আরো বলেন, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তা ও খামারিদের সরকারের উদ্যোগে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা রাষ্ট্র করে দিয়েছে। করোনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে উৎপাদক, সরবরাহকারী, বিপণনকারী ও ভোক্তারা লাভবান হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় বিক্রি হয়েছে।
মন্ত্রী আরো যোগ করেন, বৈরী পরিস্থিতিতে প্রাণী চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সরকারের উদ্যোগে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। অসুস্থ প্রাণী হাসপাতালে নয় বরং হাসপাতাল প্রাণির কাছে যাবে। এভাবে আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে বৈরী আবহাওয়া ও প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো যোগ করেন, করোনার বৈরী পরিস্থিতিতে মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের উপকরণ আমদানিতে সরকার কর রেয়াত দিয়েছে। পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরির শিল্প স্থাপনে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কর ছাড় দেয়ার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিকী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল, সে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। একসময় বাংলাদেশ খাদ্যের জন্য পরনির্ভরশীল ছিল, সেই বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একসময় ভারত-মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু না আসলে কোরবানি না হওয়ার শঙ্কা ছিল। এখন কোরবানির হাটে আমাদের উৎপাদিত প্রাণী এক দশমাংশ উদ্বৃত্ত থাকে। এতে মানুষের পুষ্টি আমিষের চাহিদা মিটছে, উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, বেকারত্ব দূর হচ্ছে, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম এ সাত্তার মন্ডল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, এসিআই এগ্রিবিজনেসেস এর প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন, গ্রীন ডেল্টা ইস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমেদ।