সাবেক দুদক পরিচালক বাছিরের ৮০ লাখ টাকা জরিমানা স্থগিত
আদালত প্রতিবেদকঃ বাছিরের ৮০ লাখ টাকা জরিমানা স্থগিত। পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার মামলায় আট বছরের কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার ৮০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছেন আদালত।
আজ বুধবার বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এছাড়া বিচারিক আদালতের যাবতীয় নথি তলব করেছেন আদালত।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
একই মামলায় তিন বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত মিজানুর রহমানও তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আগেই। ৬ এপ্রিল হাইকোর্ট তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মিজানুরকে। পরে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের তৎকালীন পরিচালক এনামুল বাছির।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন মিজানুর। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন তিনি। মিজানুর রহমান এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে দাবি করেন তিনি।
ওই প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে।
অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকে এ মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় আর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলায় রায় দেন। রায়ে এনামুল বাছিরকে আট বছর ও মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানুরকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে।
তবে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উভয়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় এ ধারায় কাউকেই সাজা দেওয়া হয়নি।
পরে ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন। অপরদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।