জনপ্রশাসনে পদোন্নতির তোড়জোড়; ডজন খানেক সচিব
অবসরে যাচ্ছেন এবছরে
বিশেষ প্রতিবেদকঃ প্রশাসনে তিন পদে নতুন করে আবারও পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদ খালি না থাকায় সুপারনিউমারারি ভিত্তিতে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। গত সোমবার সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভায় অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়ে আলোচনা হয়।
বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদের বিপরীতে আছেন ৪২১ জন, যুগ্ম সচিবের ৪১১ পদের বিপরীতে ৭৬৩ জন এবং উপসচিবের এক হাজার ৩২৪টি পদের বিপরীতে এক হাজার ৭৩৫ জন কর্মরত রয়েছেন। পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি থাকায় জুনিয়রদের চেয়ারে বসেই কাজ করছেন সিনিয়ররা।
এদিকে চলতি বছরেই সচিব ও সিনিয়র সচিব পদের ১২ কর্মকর্তার অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা। তাদের কেউ কেউ পিআরএল বাতিল করে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ পেতে এখন থেকেই তৎপরতা শুরু করেছেন। তাদের দু-একজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েও যেতে পারেন বলে আভাস মিলেছে।
কর্মকর্তারা জানান, এসএসবির বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের চাকরিজীবনের নথিপত্রগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করছেন এসএসবির সদস্যরা। যাদের চাকরিজীবনের রেকর্ড ভালো নয়, তারা পদোন্নতি পাবেন না। পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের কর্মকর্তাসহ অন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হবে। এ ছাড়া পদোন্নতিবঞ্চিত থাকা (লেফট আউট) আগের অন্যান্য ব্যাচের যুগ্ম সচিবদেরও অতিরিক্ত সচিব পদে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২৯৫ জন যুগ্ম সচিবের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা আছে। তবে কতজনকে পদোন্নতি দেওয়া হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না দায়িত্বশীলরা। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫তম ব্যাচের (বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার) ৯৮ জন। লেফট আউট ১৪৭ এবং অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। গত বছরের ২৯ অক্টোবর নিয়মিত ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের আংশিক পদোন্নতি দেওয়া হয়। তখন যারা পদোন্নতি পাননি তাদের তথ্য চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ, সিআর, শৃঙ্খলা এবং পিএসিসি শাখায় চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি)। ২০তম ব্যাচ ও লেফট আউটসহ ১৮৬ এবং অন্যান্য ক্যাডারের ১৭৯ জনকে পদোন্নতির বিবেচনায় নিচ্ছে এসএসবি। গত অক্টোবরে যুগ্ম সচিব পদে ২১৩ জন পদোন্নতি পান। পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিবদের নতুন করে বিভিন্ন দপ্তরে পদায়ন করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৭৬৩ জন যুগ্ম সচিব রয়েছেন। কিন্তু নিয়মিত পদের সংখ্যা চারশ’র কিছু বেশি।
সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য আগ্রহী বা যোগ্য বিভিন্ন ক্যাডারের ২৮তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার পর্যন্ত যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা পাঠাতে পারেনি। কবে পাঠাবে তা-ও জানা যায়নি। ফলে ২৮ ব্যাচের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এখনো শুরু করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, উপসচিব পদে ৩৬৩ জন পদোন্নতির বিবেচনায় থাকছেন। তাদের মধ্যে নিয়মিত ২৮তম ব্যাচের ১৬৪ জন, ইকোনমিক ক্যাডারের ৪৫ ও লেফট আউটের ১৫৪ জন।
চলতি বছরে অবসরে ১২ সচিব :
চলতি বছর ১২ সচিবের অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের কেউ কেউ চুক্তিতে চাকরি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে প্রশাসনের পিরামিড কাঠামো নষ্ট হচ্ছে বলে সবসময়ই অভিযোগ করে আসছেন নিচের দিকের কর্মকর্তারা।
তাদের দাবি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে সচিব পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের যারা পদোন্নতি পান না, তারা হতাশ হয়ে পড়েন। তাদের কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। কিন্তু যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের মেধাকে কাজে লাগানোর কথা বলে সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ জায়েজ করে থাকে।
জানা গেছে, ৯ এপ্রিল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজ, ২২ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ১৪ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, ২৬ জুলাই আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ৫ আগস্ট জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা, ২৯ সেপ্টেম্বর ইরাকের রাষ্ট্রদূত (সচিব) ফজলুল বারী, ৩০ সেপ্টেম্বর পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী, ৩০ অক্টোবর জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আখতার হোসেন, ২ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম, ৩১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশিদ ও রামেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ৩১ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন পিআরএলে যাচ্ছেন।